লখনউ: বছর দুয়েক হয়ে গিয়েছে । ২০১৯-এর ৯ নভেম্বর । অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট । আর তার পর থেকে রাম জন্মভূমির জমি মহার্ঘ হয়ে উঠেছে । তথ্য-পরিসংখ্যান ইঙ্গিত করছে, কার্যত রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার জায়গা হয়ে উঠেছে অযোধ্যা । ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট গঠিত হয় । এখনও পর্যন্ত যা ৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে । প্রসঙ্গত, রামভক্তিতে ‘মুক্তহস্তে’ দান করেছেন দেশের মানুষ । ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদা জমা পড়েছে রামমন্দির নির্মাণ খাতে । কিন্তু, মন্দির নির্মাণের জন্য দেওয়া জনগণের সেই টাকা ঘুরপথে বিজেপি নেতাদের পকেটে ঢুকছে বলে অভিযোগ উঠছে । শুধু তাই নয়, ওই জমি নাকি সরকারি জমি, যা বিক্রির প্রশ্নই ওঠে না । কিন্তু, মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং গেরুয়া শিবিরের রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে রাম জন্মভূমির জমি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন অযোধ্যার দশরথ গদ্দি মন্দিরের মহন্ত ব্রিজমোহন দাস স্বয়ং । তাঁর কথায়, ‘‘ভগবান রামের মন্দির নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁরা বাবরের চেয়েও অধম ।’’ আর এবার সামনে এল আরও এক কাহিনি ।
সামনে এল, ব্যক্তিগত মালিকানায় জমি কেনার ধুমের কথা । তালিকায় রয়েছেন, বিধায়ক থেকে মেয়র, উপ-জেলাশাসক, পুলিশ কর্তা, সরকারি আধিকারিকরাও রয়েছেন । বিধায়কদের আত্মীয়, আমলা এবং তাঁদের স্বজন, স্থানীয় সরকারি আধিকারিকরাও জমি কিনেছেন অযোধ্যায় । এক বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমের তদন্তে উঠে এসেছে এমনই তথ্য । বিধায়ক, মেয়র, ওবিসি কমিশনের সদস্য নিজেদের নামে জমি কিনে আত্মীয়দের দিয়েছেন । এমন ১৪টি কেস সামনে এসেছে । দেখা গিয়েছে, শীর্ষ আদালতের রায়ের পর আধিকারিকদের পরিবারের সদস্যরা প্রস্তাবিত রাম মন্দির নির্মাণের ৫ কিমির মধ্যে একের পর এক জমি কিনেছেন ।
দেখা গিয়েছে, দলিত গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জমি কিনেছেন ওই সরকারি আধিকারিকরা, তার পর তা আত্মীয়দের দিয়ে দিয়েছেন । তথ্য বলছে,
১. এম পি আগরওয়াল, ডিভিশনাল কমিশনার (অযোধ্যা)- তাঁর শ্বশুর ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর বারহাটা মাঞ্ঝাতে ২,৫৩০ বর্গমিটার জমি কেনেন ৩১ লক্ষ টাকা দিয়েছেন । মহর্ষি ট্রাস্টের কাছ থেকে তিনি জমি কেনেন । কমিশনারের শ্যালক আনন্দ বর্ধন ১,২৬০ বর্গমিটার জমি ১৫.৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে ওই গ্রামেই কেনেন ।
২. পুরুষোত্তম দাশগুপ্ত, মুখ্য রেভেনিউ অফিসার (অযোধ্যা)- এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অযোধ্যায় দায়িত্বে ছিলেন । এখন তিনি গোরক্ষপুরের এডিএম । তাঁর শ্যালকের স্ত্রী তৃপ্তি গুপ্তা অমরজিৎ যাদবের সঙ্গে পার্টনারশিপে মহর্ষি ট্রাস্টের কাছ থেকে ১,১৩০ বর্গ মিটার জমি কেনেন বারহাটা মাঞ্ঝাতে । জমির দাম ২১.৮৮ লক্ষ টাকা ।
৩. ইন্দ্রপ্রতাপ তিওয়ারি, গোসাইগঞ্জের বিধায়ক – বারহাটাতে ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে তিনি ২,৫৯৩ বর্গমিটার জমি কেনেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ৯ দিন পর । এ-বছর মার্চে তাঁর শ্যালক রাজেশ কুমার মিশ্র ৪৭.৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে সুরজ দাস নামে একজনের কাছ থেকে ৬,৩২০ বর্গমিটার জমি কেনেন । রাজেশের দাবি, নিজের সঞ্চয় দিয়ে তিনি জমি কিনেছেন । বিধায়কের কোনও ভূমিকা নেই ।
৪. বেদ প্রকাশ গুপ্তা, বিধায়ক – ভাগ্নে তরুণ মিত্তল বারহাটায় রেনু সিং এবং সীমা সোনি নামে দু’জনের কাছ থেকে ৫,১৭৪ বর্গমিটার জমি কেনেন ১.১৫ কোটি টাকা দিয়ে । ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর আবার তিনি সরযূ নদীর ধারে মন্দির চত্বরের ৫ কিমির মধ্যে ৪ কোটি টাকা দিয়ে ১৪,৮৬০ বর্গমিটার জমি কেনেন । বিধায়কের দাবি, “অযোধ্যায় আমি একটুকরো জমি কিনিনি ।”
৫. ঋষিকেশ উপাধ্যায়, মেয়র (অযোধ্যা) – সুপ্রিম রায়ের দু’মাস আগেই হরিশ কুমার নামে একজনের কাছ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে ১,৪৮০ বর্গমিটার জমি কেনেন । তাঁর দাবি, “আগে আমি আমার জমি বিক্রি করে দিই । পরে সেটাই আবার কিনি হরিশ কুমারের কাছ থেকে ।”
মন্দির নির্মাণের জন্য রাম জন্মভূমি সংলগ্ন একটি জমির লেনদেন নিয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে আগেই সরব বিজেপি বিরোধী শিবির । জমি বিতর্কে নাম জড়ায় অযোধ্যার মেয়র তথা বিজেপি নেতা ঋষিকেশ উপাধ্যায়ের । রাম জন্মভূমি সংলগ্ন ১৩৫ নম্বর ক্রমিকের যে বিস্তীর্ণ জমি রয়েছে, তার ৮৯০ বর্গ মিটার ২০ লক্ষ টাকায় মহন্ত দেবেন্দ্রপ্রসাদ আচার্যর কাছ থেকে কিনে নেন ঋষিকেশের ভাইপো দীপ নারায়ণ । সেই সময় জমিটির বাজার মূল্য ছিল ৩৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা । এর ৩ মাসের মাথায়, মে মাসে ওই জমিটিই রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রকে আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি করেন তিনি । কিন্তু ওই ৮৯০ বর্গ মিটার জমিটি লেনদেনের আওতায় পড়েই না বলে অভিযোগ ।
বিতর্কের রেশ কটার আগেই ফের নতুন করে বিতর্ক তৈরি হল অযোধ্যায় জমিকে কেন্দ্র করে ।