দেশের অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেছেন, বিজেপি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর আঘাত হানতে চাইছে। তা প্রতিরোধে অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটি বৈঠক ডাকার কথা তিনি বলেছেন ওই চিঠিতে।
আগামী জুলাই মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সম্ভবত এই বৈঠক হলে সেখানে এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে বিরোধীরা কি এক জোট হয়ে পারবে বিজেপিকে চাপে ফেলতে? বা বিজেপির অথবা বলা যায় এন ডি এ-র প্রার্থিকে হারিয়ে দিতে? ২০২৪-এ বিরোধী জোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ হবে তার একটা আভাস কিন্তু পাওয়া যাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেই। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে বিজেপি হেরে যাওয়ার পর বিরোধীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল তা কিন্তু অনেকটাই মিলিয়ে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল প্রকাশের পর। উত্তরপ্রদেশ সহ চার রাজ্যে বিজেপির জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যা বলেছেন, তার অর্থ, ২০২৪-এর ফল মানুষ জেনে গিয়েছেন। সেটা হয়তো বিরোধীদের খোঁচা দিতেই বলা। কিন্তু, এই মুহূর্তে যে বিজেপির মনোবলের সূচক অনেকটাই উপরের দিকে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আবার এটাও ঠিক, দেশের মোট ৪০২৫ বিধানসভা আসনের মধ্যে (জম্মু কাশ্মীর বাদে) এই মুহূর্তে বিজেপির দখলে ১৩১৪টি আসন। অন্য দিকে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, এসপি, আরজেডি, সিপিএম সহ বাকি সব দল এবং নির্দলদের হাতে রয়েছে বাকি ২৭১১টি আসন। বিধানসভার সব আসন মিলিয়ে বিজেপি প্রাপ্ত ভোট ২৯.২ শতাংশ। অন্য সব দলের মোট প্রাপ্ত ভোট ৭০.৮ শতাংশ। ফলে অঙ্কের হিসেবে অসম্ভব কিছুই নয়।
এবার দেখে নেওয়া যাক রাষ্ট্রপতি ভোটের ছবিটা কেমন! কে কোথায় দাঁড়িয়ে। জুলাইয়ে শেষ হচ্ছে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন রাজ্যসভা এবং লোকসভার সাংসদরা এবং বিধানসভার বিধায়কেরা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একেক জন সাংসদের ভোটের মূল্য ৭০৮। সেই হিসেবে সব সাংসদের মোট ভোটের মূল্য ৫, ৪৯, ৪০৮ (দুই কক্ষ মিলিয়ে ৭৭৬ সাংসদ X ৭০৮= ৫,৪৯, ৪০৮)।
সাংসদদের ভোটের মূল্য সবার এক হলেও, বিধায়কদের ভোটের মূল্য কিন্তু রাজ্যে রাজ্যে একেক রকম। এই মূল্য নির্ভর করে রাজ্যের জনসংখ্যা এবং একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে হিসেবের ভিত্তিতে। যেমন উত্তরপ্রদেশের জনসংখ্যা বেশি তাই উত্তরপ্রদেশের একেক জন বিধায়কের ভোটের মূল্য ২০৮। আবার ছোট্ট রাজ্য গোয়ায় এক জন বিধায়কের ভোটের মূল্য ২০। পশ্চিমবঙ্গের বিধায়কদের ভোটের মূল্য ১৫১।
আরও পড়ুন-চতুর্থ স্তম্ভ: মোদিজির বাক্য, মাণিক্য
ভারতের সব বিধায়কের মোট ভোটের মূল্য ৫, ৪৯, ৪৯৫। ফলে সাংসদ এবং বিধায়কদের মোট ভোটের মূল্য দাঁড়াচ্ছে ৫,৪৯, ৪০৮+৫, ৪৯, ৪৯৫= ১০, ৯৮, ৯০৩।
যদি আমরা এই হিসেব ধরে এনডিএ-র ভোটের পরিমাণ দেখি তাহলে এন ডি এ-র সব সাংসদ এবং বিধায়কদের ভোট যোগ করলে দাঁড়ায় ৫,৩৯, ৮২৭টি ভোট। যা অর্ধেকের থেকে ৯, ৬২৫টি ভোট কম। বিজেপি বা এনডিএকে যদি তাদের নিজেদের প্রার্থিকে জিতিয়ে আনতে হয় তাহলে এনডিএ-র বাইরে থেকে এই ৯,৬২৫টি ভোট জোগাড় করতে হবে। সংখ্যাটা বিরাট কিছু নয়। কিন্তু বিরোধীরা এক জোট হতে পারলে কিছুটা হলেও বিজেপিকে চাপে রাখা সম্ভব হত। আর যদি দেখা যায় বিজেপি বা এন ডি এ মনোনীত প্রার্থী প্রয়োজনের থেকেও বেশি ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন, সেক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরে স্বাভাবিক ভাবেই হতাশা বাড়বে। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে তেমনটা হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেই অনৈক্যই বিরোধী শিবিরের সব থেকে বড় সমস্যা। অবশ্য যদি সহমতের ভিত্তিতে এন ডি এ কোনও প্রার্থীকে দাঁড় করায় (যেমন শারদ যাদব) তাহলে অবশ্য বিরোধীদের কোনও পরীক্ষার সামনে পড়তে হবে না।