শারদোৎসবের পরই শুরু উৎসবের আরেক অধ্যায়। বড়দিন ও নতুন বছরের আনন্দে মাতবে মানুষ। পুরনো বছরের ভুল শুধরে সবাই জীবন সাজাবে নতুন করে। কিন্তু কেন নববর্ষের সূচনা ১ জানুয়ারি থেকেই? এর পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক কারণ। খ্রিস্টান ক্যালেন্ডার অনুসারে যিশু খ্রিস্টের জন্ম থেকেই সাল গণনা শুরু। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিন পালিত হলেও নববর্ষ ৮ দিন পর কেন? উত্তর লুকিয়ে আছে ব্যাবিলনীয় ও রোমান ক্যালেন্ডারের বিবর্তনের মধ্যে।
কেন ১ জানুয়ারি তে শুরু হয় নতুন বছর?
যিশুর জন্মের বহু আগে ব্যাবিলনীয় ক্যালেন্ডারে নতুন বছর শুরু হতো মার্চে। প্রকৃতির নবজাগরণের সময় মানুষ বর্ষবরণ করত। পরে রোমান সাম্রাজ্যে বছরকে ১২ মাসে ভাগ করা হয়। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি যুক্ত হলেও বর্ষগণনা শুরু হতো মার্চ থেকেই। তবে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে জানুয়ারি থেকে নতুন বছর ধরা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫ সালে এই ক্যালেন্ডার চালু হওয়ার পর সারা বিশ্বেই এটি জনপ্রিয় হয়।
আরও পড়ুন: ক্রিসমাসের আবহে সেজেছে ৩০ ফুট ক্রিসমাস ট্রি! উৎসবে মাতোয়ারা শহর
খ্রিস্টধর্মের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে সালগণনায় পরিবর্তন আসে। যিশুর জন্মকে ভিত্তি ধরে সাল শুরু করার পরিকল্পনা করেন ধর্মপ্রচারক দিউনিসিয়স এক্সিগুস। তাঁর মতে, যিশুর জন্ম পৃথিবীর ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। খ্রিস্টের আবির্ভাবকে ভিত্তি করেই খ্রিস্টাব্দের সূচনা হয়। ৯০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই পদ্ধতি গৃহীত হয়। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, যিশুর জন্মের বর্ষপূর্তি যদি নববর্ষের কারণ হয়, তাহলে ২৫ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ১ জানুয়ারি কেন নববর্ষ?
এর কারণ ছিল ইহুদি প্রথা। শিশু যিশুর জন্মের ৮ দিন পর ত্বকছেদ ও নামকরণের আয়োজন হয়। সেই দিনটিকে খ্রিস্টাব্দের সূচনার দিন হিসাবে ধরা হয়। প্রাচীন রোমান প্রথা অনুযায়ীও এটি প্রাসঙ্গিক ছিল। তবে দীর্ঘদিন জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহারের কারণে নববর্ষের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের নিয়মহীন লিপ ইয়ার সমস্যার সমাধান করেন পোপ গ্রেগরি ত্রয়োদশ।
১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু হয়, যা আজও বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত। তবে পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশ এখনও জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ধর্মীয় উৎসব পালন করে। রাশিয়া ও ইউক্রেন ৬ জানুয়ারি বড়দিন এবং ১৪ জানুয়ারি নববর্ষ পালন করে। এই বৈচিত্র্যের মধ্যেই আজকের নববর্ষ উদযাপনের ঐতিহাসিক ভিত্তি স্থাপিত।
দেখুন আরও খবর: