কলকাতা: হাওড়ার রামনবমীর (Ram Navami 2025) জোড়া মিছিলে অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। শর্তসাপেক্ষে মিছিলের অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। রামনবমীর মিছিল নিয়ে রাজনৈতিক পারদ চড়ল কলকাতা হাইকোর্টে। রাজ্যের আইনজীবী ও লোকসভার বাম প্রার্থী আইনজীবী সব্যসাচী চ্যাটার্জির সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের দুই সংগঠনের আইনজীবীদের বাক-বিতন্ডা। চলল ৩ ঘণ্টা শুনানি পর্ব। বাগবিতণ্ডায় বিরক্ত হয়ে লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করে দিলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। অবশেষে সব পক্ষের সহমতের ভিত্তিতে মিছিলের অনুমতি দিলেন বিচারপতি।
অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত, এই ধরনের নির্দিষ্ট ধর্মীয় সংগঠনের শোভাযাত্রায় পুলিশ রুট ঠিক করে দিতে পারে বলে সুপ্রিমকোর্টের একাধিক রায়ে উল্লেখ আছে। সে ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়। বিচারপ্রতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, এর আগে বেশ কয়েকটা শোভাযাত্রার অনুমতি দিয়েছি সব ক্ষেত্রেই আগের রুট গুলোতে শোভাযাত্রা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাওড়াতেও যদি আগের বছরের রাস্তাতেই অনুমতি না দেওয়া হয় তাহলে জানতে হবে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ। এবং সংগঠকরা নির্দিষ্ট সংখ্যার বাইরে লোক শোভাযাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যার্থ।
অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, হাওড়ার ঘটনায় এখনও এনআইএ তদন্ত চলছে। রাজ্য পুলিশের ও তদন্ত চলছে। এটা পুলিশের ব্যর্থতা নয়। সংগঠকরা যদি নির্দিষ্ট সংখ্যার বাইরে সমর্থকদের নিয়ে আসেন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। সুবীর সান্যাল, সংগঠকদের আইনজীবী বলেন, গত বছরের হাইকোর্টের নির্দেশে লেখা ছিল ১০০ মিটার যাত্রা পথে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছিল বাকি পথে কিন্তু কোন সমস্যা হয়নি। তাহলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত? পুলিশ গত বছর জানিয়েছিল আমরা দু’শ জনের অনুমতি থাকা সত্বেও দু তিন হাজার লোক নিয়ে র্যালি করেছিলাম। ডিজে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই তথ্য সঠিক নয়। আমরা ২০০ জনকে নিয়েই র্যালি করেছিলাম। বাইরে থেকে কেউ এসে যদি ইট ছোড়ে তাহলে তারা কি অংশগ্রহণকারী হয়? আমরা আশ্বস্ত করতে পারি ৫০০-১০০০ এক হাজারের বেশি সমর্থক আসবেনা। পুলিশ যদি একটা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের লোকজনকে না আটকাতে পারে তাহলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নেওয়া উচিত। কলকাতায় যখন দুর্গাপুজো হয় তখন পুলিশ কি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা? যদি ধরে নেওয়া হয় ২০০ জনের পরিবর্তে ২০০০ জন চলে আসলো, তাহলে কি পুলিশের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই?
স্বপন ব্যানার্জি, রাজ্যের আইনজীবী বলেন, র্যালিতে অস্ত্র ব্যাবহার করা হয়েছে । আমাদের কাছে ছবি রয়েছে। গত চার বছর ধরে এটা সংগঠকরা করছেন। এরা আসলে আইন ভাঙছেন লাগাতার। কিশোর বলেন, কাজিপাড়া থেকে মল্লিকফটক এই এরিয়াটা অত্যন্ত সংবেদনশীল। দুটো র্যালির জন্য আলাদা আলাদা সময় দিক আদালত। যাতে পুলিশের সুবিধা হয়।
আরও পড়ুন: ভরসা রাখুন, মানবিক-রাজনৈতিকভাবে থাকব, চাকরিহারাদের আশ্বাস ব্রাত্যর
বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, আমি পুলিশের উপরই আস্থা রাখছি। আদালত জানিয়েছে, মিছিলে ধাতুর তৈরি কোনও অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। দুই সংগঠনের এক হাজার মানুষ মিছিলে যোগ দিতে পারবেন তার বেশি পরবে না। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেকের নাম-পরিচয় জানাতে হবে পুলিশকে। মিছিলে হাঁটার সময় প্রত্যেকের কাছে নাম-পরিচয় লেখা কার্ড থাকতে হবে।
রামনবমীতে মিছিল করতে চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছিল অঞ্জনীপুত্র সেনা এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নামে দু’টি সংগঠন। পুলিশের মিছিলের অনুমতি দেয়নি। এর পরে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে তারা।আদালতের নির্দেশ, অঞ্জলি পুত্র সেনা সকালে ৮.৩০ থেকে ১২ টা পর্যন্ত মিছিল করতে পারবে। বিশ্বহিন্দু পরিষদ সময় বিকেল৩ টে থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত মিছিল করতে পারবে। বি ই কলেজ গেট নম্বর ওয়ান থেকে জিটি রোড হয়ে রামকৃষ্ণপুর ঘাট পর্যন্ত মিছিল হবে। পুলিশকে ব্যারিকেট করে র্যালির সামনে ও পেছনে নজরদারি গাড়ি রাখতে হবে। পুলিশকে রিপোর্ট দিতে হবে আগামী বুধবার।
অন্য খবর দেখুন
