ওয়েব ডেস্ক: শিশুদের অক্ষর পরিচয়ের কারিগর তিনি। তাঁর হাত ধরেই আজও ‘বর্ণপরিচয়ের’ প্রতিটি অক্ষর চিনতে শেখে ছোট্ট শিশু। তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (Ishwar Chandra Vidyasagar)। তাঁর মানবিক হৃদয়ের জন্য সকলের কাছে তিনি ‘দয়ারসাগর’ নামেও পরিচিত। ১৯ শতকে বাঙালিবাসীর গোড়া মানসিকতা ভেঙে বাঙালি মনে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছিলেন বাংলার অন্যতম এই সমাজ সংস্কারক। তাঁর হাত ধরেই বাংলার মাটিতে এক নতুন জুগের সূচনা হয়েছিল। বাংলায় নারী শিক্ষার প্রসার, বাল্য বিবাহ প্রচলন সহ নানান অন্যায় কু-সংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ‘বিদ্যারসাগর’ ঈশ্বরচন্দ্র (Ishwar Chandra Vidyasagar)। ১৮৯১ সালের ২৯শে জুলাই কলকাতার বুকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন তিনি। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবস। তাঁর মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে যুগের পর যুগ। তবু আজও তাঁর ভাবনা বাঙালি মননের সঙ্গে জড়িয়ে। আজ মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “বাংলার নবজাগরণের প্রাণপুরুষ পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবসে জানাই আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। বিদ্যাসাগর আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব। বাংলা তথা ভারতে শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান এবং নারীর অবস্থার উন্নতির জন্য তাঁর লড়াই আমরা কখনো ভুলতে পারব না। আমরা আজ যা, তা অনেকটাই তাঁর অবদান সেই বর্ণপরিচয় থেকে যার শুরু।”
আরও পড়ুন: কলকাতায় মেঘলা আকাশ, ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা! জারি হলুদ সতর্কতা
এদিনও বিজেপি শাসিত (BJP State) রাজ্যে বাংলা ভাষা ও বাঙালি হেনস্থার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বিষয়কে স্মরণ করে তিনি লিখেছেন, “আজ যখন দেশজুড়ে বিজেপির নেতৃত্বে বাংলা ভাষা ও বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু হয়েছে, তখন এই মহামনীষীর জীবন, শিক্ষা ও দর্শন আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।”
অন্যদিকে, কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে ঈশ্বরচন্দ্রের মূর্তি ভাঙাকে কেন্দ্র করে ফের একবার বিজেপিকে দুষেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর উদ্যোগেই যে সেই মূর্তি নতুন করে তৈরি হয়েছে তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, “যারা আজ বাংলা ও বাঙালিকে আক্রমণ করছে তারাই বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষে কলকাতায় বিদ্যাসাগর কলেজে তাঁর মূর্তি ভেঙেছিল। আমরা সেই মূর্তি পুনঃস্থাপন করেছি। তাঁর দ্বিশতবর্ষ সারা বছর ধরে বাংলা জুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করেছি।”
তিনি আরও লিখেছেন, “বিদ্যাসাগরের জন্মভূমি বীরসিংহে ‘বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদ’ গঠন করে নানাবিধ উন্নয়ন, সংস্কার ও সৌন্দর্যায়ন করা থেকে শুরু করে তাঁর কলকাতার বাদুড়বাগানের বাড়ির মিউজিয়ামটিকে নতুনভাবে করে দেওয়া, বিদ্যাসাগর কলেজকে হেরিটেজ হিসেবে গড়ে তোলা, বিদ্যাসাগর কলেজেই তাঁর নামে একটি আর্কাইভ তৈরি করা, তাঁর প্রতিষ্ঠিত কলকাতার মেট্রোপলিটান ইন্সটিটিউশনকে অনুদান দেওয়া অনেক কিছুই করা হয়েছে, হচ্ছে ও আগামীদিনেও হবে। তাঁর মৃত্যুদিনে আমি আর একবার এই মহামানবকে আমার প্রণাম জানাই। তাঁর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বাঙালি যেন তাঁরই মতো দৃপ্ত ও প্রতিবাদী তেজে পথ চলতে পারে, এই প্রার্থনা করি।”
দেখুন অন্য খবর