কলকাতার বুকেই লুকিয়ে আছে এক টুকরো ইতিহাস, বো-ব্যারাক। আয়তাকার এই মহল্লা যেন কলকাতার এক অন্য রূপ তুলে ধরে। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশন থেকে একটু এগোলেই দেখা মেলে লাল ইটের ব্যারাক, যার প্রতিটি ইট-গাঁথায় লুকিয়ে রয়েছে ৮০ বছরের পুরনো গল্প। শোনা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকান সৈনিকদের থাকার জন্য এই ব্যারাক তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি কলকাতার একটি পুরনো জনগোষ্ঠীর নিবাস হয়ে ওঠে। বড়দিন এলেই এখানকার আলোকসজ্জা, ক্রিসমাস ট্রি আর সান্তাক্লজ যেন নতুন করে প্রাণ জোগায় মহল্লায়।
২৫ ডিসেম্বরের আগে থেকেই বো-ব্যারাকে শুরু হয় বড়দিনের প্রস্তুতি। প্রতিটি বাড়ি সাজে রঙিন বেলুন আর লাইটের ঝলমলে সাজে। পাড়ার চাতালে চলে কেক আর ওয়াইন বিক্রি। বুড়ি মা-র হাতে বানানো রেড ওয়াইন আর মোমো এখানে বেশ বিখ্যাত। বড়দিনের সন্ধ্যায় চাতালে খাবার বিতরণের আয়োজন করা হয় দুস্থ শিশুদের জন্য। আশপাশের পাড়া আর পর্যটকদের ভিড়ে তখন মহল্লার পরিবেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: ক্রিসমাসের আবহে সেজেছে ৩০ ফুট ক্রিসমাস ট্রি! উৎসবে মাতোয়ারা শহর
এ পাড়ার ইতিহাস যেমন সমৃদ্ধ, তেমনই রয়েছে এ পাড়ার মানুষের আবেগ। এই মহল্লার নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগই কর্মসূত্রে বিদেশে থাকেন। তবে বড়দিনে শিকড়ের টানে বাড়ি ফেরেন অনেকেই। লন্ডন থেকে ডিসুজা কিংবা মার্কিন মুলুক থেকে অগাস্টিনেরা ফিরলে, বো-ব্যারাক যেন আবার নতুন করে আলো ঝলমল করে ওঠে। এই পুনর্মিলনের আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মহল্লা।
করোনার কারণে গতবছর বড়দিনের উৎসব বন্ধ থাকলেও এ বছর বো-ব্যারাক ফিরে পেয়েছে তার পুরনো জৌলুস। পলেস্তরা খসে যাওয়া বাড়ির দেওয়ালে নতুন রং পড়েছে। এ পাড়ার মানুষ নিজেরাই তৈরি করেন রেড ওয়াইন এবং কেক। সঙ্গে থাকে পুরনো দিনের ঐতিহ্যবাহী রান্নার মেনু। বড়দিনের সময় বো-ব্যারাকে যেন কলকাতার অন্য রূপ ফুটে ওঠে।
তবে আলো আর উৎসবের মাঝে লুকিয়ে আছে একরাশ অভিমান। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান তকমা, বারবার তাঁদের পরিচিতি নিয়ে প্রশ্নবোধক তৈরি করে। বড়দিনে এখানে আসা অতিথিরা শুধু ছবি তুলে আর গল্প বানিয়ে চলে যান, এটাই তাঁদের অভিযোগ। তবে বো-ব্যারাকের মানুষ এ সব এড়িয়ে নিজেদের ঐতিহ্য আর ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখতে চান। বড়দিন শেষে সবাই ফিরে যান নিজের জীবনে, আর বো-ব্যারাক আবার সময়ের সঙ্গে আরও একটু পুরনো হয়।
দেখুন আরও খবর: