ওয়েব ডেস্ক: পৃথিবী যেন একটু নিঃশ্বাস ফেলেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, একটানা তিন বছর পর গোটা পৃথিবীতে না খেতে পাওয়ার মানুষের হার কিছুটা হলেও কমেছে। কিন্তু সেই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কার মেঘও জমেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের কপালে। কারণ, যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝাঁঝ আর বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থার জেরে এই অগ্রগতি যে কোনও সময় পিছিয়ে যেতে পারে—এমনটাই বলছে রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা সংক্রান্ত সাম্প্রতিক রিপোর্ট (Global hunger falls but conflict and climate threaten progress)।
২০২৪ সালে বিশ্বে যাঁরা মাঝারি থেকে তীব্র খাদ্য ঘাটতিতে ভুগেছেন, তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৭০ কোটি। ২০২৩ সালে সেই সংখ্যা ছিল আরও বেড়ে যায়। দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় (বিশেষত ভারতে) কৃষি, খাদ্য সহায়তা এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পে জোর দেওয়ায় এই অঞ্চলে খানিক উন্নতি দেখা গিয়েছে। কিন্তু আফ্রিকার ছবি এখনও ভয়াবহ। সাব-সাহারার নানা দেশে খাদ্য সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন: ২০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করতে চলেছে নাসা!
রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিবেদন বলছে, আফ্রিকাতেই বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি ক্ষুধার শিকার মানুষ বাস করেন। পরিস্থিতি যদি না পালটে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে যে ৬০ শতাংশ ক্ষুধার্ত মানুষ আফ্রিকা মহাদেশেই বাস করবেন, তা আর ভবিষ্যদ্বাণী থাকবে না—বাস্তব হয়ে উঠবে। প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-র মুখপাত্র ম্যাক্সিমো তোরেরো স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “এই সামান্য অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হলে চলবে না। যত দিন না যুদ্ধ থামে, জলবায়ুর সঙ্গে লড়াই করার মতো সংস্থান না হয়, এবং ঋণ-চাপে জর্জরিত দেশগুলো খাদ্য উৎপাদনে স্বাধীনতা ফিরে না পায়, ততদিন এই সাফল্যও ঝুঁকির মুখে থাকবে।”
রাষ্ট্রপুঞ্জের এই তালিকায় ভারতের নাম ইতিবাচকের তালিকায়। খাদ্য নিরাপত্তা আইন, জনবণ্টন ব্যবস্থা, মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ কর্মযোজনা প্রকল্প (MGNREGA)-র মতো সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের প্রভাব স্পষ্ট হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক বৈষম্য যদি দ্রুত সামাল না দেওয়া যায়, তবে এই সাফল্য বেশি দিন থাকবে না। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করেছেন, “ক্ষুধা শুধু খাদ্যের অভাব নয়, এটি শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবিক মর্যাদার প্রশ্ন। খাদ্যহীন পৃথিবী কখনও স্থিতিশীল হতে পারে না।”
পৃথিবী হাফ ছেড়ে বেঁচেছে ঠিকই। কিন্তু বিশ্বজুড়ে এখনও কোটি কোটি মানুষ জানেন না, পরবর্তী খাবারটির সংস্থান কোথায়? রাষ্ট্রপুঞ্জের এই রিপোর্ট যেন সেই বাস্তবতাকে আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, খিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখনও অনেক বাকি।
দেখুন আরও খবর: