Sunday, August 24, 2025
HomeScrollঅদিতির সঙ্গে সাদা কালো | নির্মলা মাসির উজ্জ্বলা যোজনা

অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | নির্মলা মাসির উজ্জ্বলা যোজনা

যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। ২০১৬ -১৭র বাজেটে আমাদের নির্মলা তাই, নির্মলা মাসি, মানে আমাদের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছিলেন উজ্জ্বলা যোজনার কথা। সেদিনের পর থেকে উনি ওই উজ্জ্বলা যোজনা নিয়ে প্রায় কিছুই বলেননি, যা বলেছেন সবই নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি। দেশের এই এক সমস্যা যে কোনও বিষয়ে ভালো যা কিছু তা আমরা শুনব দেশের চায়ওলা কাম চৌকিদার কাম নন বায়োলজিকাল প্রডাক্ট, ভগবানের দূত ওই মোদিজির কাছে। প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীর মতো বাজেট পেশ করতে পারেন না, মানে আমাদের সংবিধানে সেই ব্যবস্থা নেই, তবে যা চলছে তাতে এই বিষয়ে সংবিধান সংশোধন করে উনিজিই বাজেট পেশ করতেই পারেন। ধরুন বন্দে ভারত ট্রেন, যেখানে যত উদ্বোধন উনিজি হাজির, কিন্তু রেল অ্যাকসিডেন্ট? রেলমন্ত্রীকে যেতে হবে। বিদেশ মন্ত্রক নিয়ে যাবতীয় কথাবার্তা উনিই বলবেন, চক্কর দেবেন পৃথিবী জুড়ে কিন্তু অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের অমানবিকভাবে হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেশে পাঠানো নিয়ে কথা বলবেন বিদেশমন্ত্রী। এটা হল ওই উনিজি স্টাইল, ভালো যা কিছু সব আমার, খারাপ যা কিছু সব অন্যদের।

তো সেই তিনি সেই বাজেটের পর থেকে চিল চিৎকার করে এই উজ্জ্বলা যোজনার কথা বলেই যাচ্ছিলেন। এখন নাকি আদিবাসী, দলিত গরিব ঘরের মহিলাদের আর কাঠের ধোয়াঁয় চোখ জ্বালা করবে না, গ্যাসের চুলোতে তাঁরা রান্না করবেন, সাফসুতরা খানা। এতে করে দেশের জঙ্গল বাঁচবে, কার্বন এমিশন কম হবে, দরিদ্র মানুষদের শরীর ভালো থাকবে। এক ঢিলে হাজার পাখি মরবে। ২০০০ কোটি টাকা খবরচের কথা বলা হয়েছিল সেই ২০১৬–১৭র বাজেটে। কী বলা ছিল এই স্কিমে? ২টো করে সিলিন্ডার ফ্রি, তারপরে কিনতে হবে, ৩০০ টাকা করে সাবসিডি আসবে ব্যাঙ্কে। হল কী? পরের বছর থেকে সাবসিডি কমে ২০০ আর গ্যাসের দাম বাড়তে শুরু করল হু হু করে। এবং মোদিজির সেই সাধের লাউ, থুককুড়ি, সাধের উজ্জ্বলা যোজনাতে ২০২২ সালের বরাদ্দ কত? ৮০০ কোটি টাকা। দারিদ্র বাড়ছে, উজ্জ্বলা যোজনার বরাদ্দ কমছে। এবং আরও মজার ব্যাপার হল বরাদ্দ হলেই তো খরচ হবে না, তো সরকার এখনও লজ্জায় বলে উঠতে পারেনি যে ঠিক কত টাকা খরচ হয়েছে। গত বাজেটে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি, সামনেই বিহার নির্বাচন, তাই এবারে বরাদ্দ বাড়ানো হল, কিন্তু আপনি কি তার সুফল পাচ্ছেন?

আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো। রাহুল – কেজরিওয়াল নারদ নারদ

এবারে আসুন অন্যদিক থেকে দেখা যাক। আপনি উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, যেখানে ওই উজ্জ্বলা যোজনার বরাদ্দ সবথেকে বেশি, সেখানে গিয়ে দেখতে পাবেন গ্যাস সিলিন্ডারগুলো জামাকাপড়, জিনিসপত্র রাখার তাকের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। ফ্রিতে গ্যাস নিয়েছেন কিন্তু রিফিল করার সামর্থ্য নেই, কিন্তু এখানেও কহানি মে টুইস্ট হ্যায়। এই মানুষজনের এলাকাতে যেদিন মোদিজি যাবেন, যেদিন সিএম যাবেন, সেদিন গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা পৌঁছে যাবে, ফিরি সিলিন্ডার মিলেগা। পুরুষ মহিলা সব কাজ ফেলে ফিরি সিলিন্ডারের জন্য জনসভাতে হাজির। জনসভার শেষে বক্তৃতা মঞ্চের পেছনে বা কোনও এক জায়গা থেকে গণতান্ত্রিক অধিকার বহন করে তাঁরা বাড়ি ফিরবেন, চোখে মুখে উল্লাস, আবার মাসখানেক পর থেকে ৮-১০ জনের ফ্যামিলিতে তিন বেলা রোটি ডাল ভাত রান্নার মাসখানেক চালানো বেশ কঠিন। তারপর আবার ধোঁয়া, আগুন, চুলোচাপাটি।

আবার কবে মোদিজি আসিবেন, তবে আসিবে গ্যাস সিলিন্ডার, আহা প্রতীকী এক ব্যাপার মাইরি। গ্যাস এবং গ্যাস সিলিন্ডার একইসঙ্গে আসে ওই গরিব জীবনে। আসলে এ এক অত্যন্ত পুরনো শাসন পদ্ধতি, তোমার জীবনের হাল এমন শতচ্ছিদ্র করে দেবো, তোমার জীবনে এত ধরনের সমস্যা ভরে দেব যে একদিন এক সামান্য আধুলি ছুড়ে দিলেও তুমি আনন্দে নৃত্য করবে, তুমি রাজার জয়গান গাইবে। এবং তুলে ধরব এক স্বপ্নের ছবি, আয়েগা আয়েগা আয়েগা আনেবালা আয়েগা, সেই অচ্ছে দিন আয়েগা, ফাইভ ট্রিলিয়ন ইকনমি আয়েগা, সবকা ঘর হোগা, ঘরমে নল হোগা, নল মে জল হোগা, বাল্ব জলেগা, কেবল প্লেটে আরসালানের বিরিয়ানি রহেগা এই কথাটাই যা আমাদের উনিজি বলেননি। কবে? কতদিনের মধ্যে? শুনলেন তো উনি বলেছিলেন ২০২২ এর মধ্যে সবার ঘর হবে। ২০২২ কেটে গেছে, ঘর আসেনি, নল আসেনি, জল আসেনি। হ্যাঁ ফাঁকা সিলিন্ডার পড়ে রয়েছে। নির্মলা মাসির উজ্জ্বলা যোজনা।

Read More

Latest News