কৃশানু ঘোষ: ছেলেবেলায় সাধারণ জ্ঞানের বইতে তিনটে জিনিস শিখেছিলাম। হকির জাদুকর ধ্যানচাঁদ, ক্রিকেটের রাজা স্যর ডন ব্র্যাডম্যান (Don Bradman) এবং ফুটবলের সম্রাট পেলে (Pele)। তিন খেলায় তিন সেরার দু’জন আগেই পরপারে চলে গিয়েছেন, অনন্তলোকে পাড়ি দিলেন এবার পেলে। এডসন অ্যারিন্টাস ডো নাসিমেন্টো, এই এতবড় নামটাও সেই সময়েই মুখস্থ করা। যখন থেকে ফুটবল দেখার শুরু, তার আগেই চলে এসেছিলেন এক দিয়েগো মারাদোনা (Diego Maradona)। শুধু আসা নয়, তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বজয় করে ফেলেছেন, সেইসঙ্গে জিতে নিয়েছেন মানুষের হৃদয়। পেলের একক রাজ্যপাটে ভাগ বসিয়ে ফেলেছেন মারাদোনা।
২০২২ সালে দাঁড়িয়ে সর্বকালের সেরা বাছতে গিয়ে এখন এই দু’জন ছাড়াও আসে লিওনেল মেসি (Lionel Messi), ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর (Cristiano Ronaldo) নাম। তাহলে কি পেলে সেরা নন? নিশ্চয়ই সেরা। শতাব্দীর পর শতাব্দী আসবে যাবে, মারাদোনা, রোনাল্ডো, মেসিরা থাকা সত্ত্বেও ‘চিরকালের রাজা’ হয়েই থাকবেন পেলে। রোনাল্ডো নিজেই তাঁকে ‘ইটারনাল কিং’ (Eternal King) হিসেবে অ্যাখ্যা দিলেন তাঁর শোকবার্তায়।
আরও পড়ুন: Pele Dies At The Age Of 82: ৮২ বছর বয়সে জীবনাবসান ফুটবল সম্রাট পেলের
রাজার মৃত্যু সংবাদে সারা বিশ্ব শোকগ্রস্ত। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden) থেকে ফিফা (FIFA), ডেভিড বেকহ্যাম থেকে লিও মেসি, সম্মান জানাতে ভুলছেন না কেউই।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে তিনিই একমাত্র, যিনি তিনটি বিশ্বকাপ (১৯৫৮, ১৯৬২ এবং ১৯৭০) জিতেছেন। এই কৃতিত্ব আর কারও নেই, আর কারও হবে বলেও মনে হয় না। সেরকমই কনিষ্ঠতম ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা এবং ফাইনালে গোল করার রেকর্ডটাও এখনও অক্ষত রয়েছে। কিছুটা কাছাকাছি গিয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপে (Kylian Mbappe)।
কিন্তু এসব পরিসংখ্যান গুরুত্বপূর্ণ নয়, পেলে কেন শাশ্বত সম্রাট তার অন্য কারণ আছে। আজ ব্রাজিল দেশটার কথা বললেই সবার আগে মনে আসে ফুটবলের কথা। অথচ একটা সময় ছিল যখন ব্রাজিলের নামই জানত হাতেগোনা মানুষ। বলতে গেলে, একার কৃতিত্বে বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্রে দেশকে সবথেকে বড় জায়গা পাইয়ে দেন পেলে। তাঁর নামে গোটা দেশ এককাট্টা হয়ে যায়। তাঁর খেলা দেখতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল। নাইজেরিয়ায় ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল পেলের দল স্যান্টোস (Santos)। সেদেশে তখন গৃহযুদ্ধ চলছে। কিন্তু পেলের খেলা দেখতে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।