শুক্রবার শুরু হতে চলেছে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। কোভিড অতিমারির কারণে গত বারের মতো এবারও আই এস এল-এর সব ম্যাচ হবে গোয়ার তিনটি শহরে। মারগাও, ভাষ্কো এবং বাম্বোলিনে হবে এগারো দল নিয়ে এবারের আই এস এল। প্রথম দিনে মাঠে নামবে গত বারের রানার্স এটিকে মোহনবাগান এবং কেরালা ব্লাস্টার্স। কেরালা গত বছর আই এস এল-এ দশ নম্বর জায়গায় ছিল। তারা কখনও চ্যাম্পিয়ন হয়নি। কিন্তু দু বার রানার্স হয়েছে। কিন্তু গত বার টিমের খুবই বাজে পারফরম্যান্সের জন্য তারা তাদের কোচ কিবু ভিকুনাকে লিগ শেষ করার আগেই বরখাস্ত হতে হয়েছিল। এবার তারা নতুন করে দল সাজিয়েছে। কোচ হয়ে এসেছেন সার্বিয়ার ইভান ভুকোমানোভিচ। দল গঠনেও কেরালা নতুনদের দিকেই ঝুঁকেছে। এফ সি বেঙ্গালুরু থেকে তারা নিয়ে এসেছে হরমোহনজ্যোত খাবড়াকে। এই পঞ্জাবি প্লেয়ারটি ডিফেন্স এবং মাঝ মাঠ–দুই জায়গাতেই খেলতে পারেন। তাঁর সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় বলতে আছেন জিকসন সিং এবং সাহাল আব্দুল সামাদ। শেষোক্তজন ভারতের জাতীয় দলের ফুটবলার। দলের গোলকিপার আলবিনো গোমসের উপর ভরসা করাই যায়।
তবে আই এস এল-এর সাফল্যের আসল কারিগর তো বিদেশিরাই। দেশি প্লেয়াররা নিশ্চয়ই ভাল খেলেন। কিন্তু বিপক্ষ দলের সঙ্গে পার্থক্য গড়ে দেন বিদেশিরাই। এবার বিদেশিদের কোটা সাত থেকে ছয় হয়েছে। মাঠে থাকবেন চারজন। কেরালার ছয় বিদেশির মধ্যে দুজন ডিফেন্ডার। তাঁরা হলেন সার্বিয়ার ইনের সিপোভিচ এবং মার্কো লেসকোভিচ। আদ্রিয়ান লুনা হলেন মিডফিল্ডার। আর চেচো গিয়েলটেস্টেন, জর্জ পেরিয়ান দিয়াজ এবং আলভারো ভারকুয়েজ–তিন ফরোয়ার্ডই হলেন স্পেনের মানুষ। আই এস এল-এ তো এখন স্প্যানিশ ফুটবলারদেরই রমরমা। দেখা যাচ্ছে, কেরালাও তার ব্যাতিক্রম নয়।
এটিকে মোহনবাগান আই এস এল-এর সবচেয়ে সফল দল। অন্তত ট্রফি জয়ের নিরিখে। গত সাতটি আই এস এল-এ তারা তিন বার চ্যাম্পিয়ন। গত বারও তারা ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু ফাইনালে তাদের ১-০ গোলে হারিয়ে দেয় মুম্বই সিটি এফ সি। এবারও মোহনবাগান বেশ ভাল দল গড়েছে। নিজেদের চার বিদেশিকে তারা ধরে রেখেছে। তাঁরা হলেন ফরোয়ার্ড রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামস। ডিফেন্ডার তিরি এবং মিডফিল্ডার কার্ল ম্যাকহিউ। এদের সঙ্গে মোহনববাগান দলে নিয়েছে ইউরো কাপ খেলা ফিনল্যান্ডের মিডফিল্ডার জনি কাউকো এবং মুম্বইএর মিডফিল্ডার হুগো বৌমোকে। এই দুজনের যোগদানে মোহনবাগানের শক্তি অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে দল গঠন নিয়ে সমস্যাও। যেহেতু চার বিদেশিকেই মাঠে নামানো যাবে, তাই কোচ আন্তোনিও হাবাসকে সমস্যায় পড়তে হবে কোন দুজনকে বাদ দেবেন। রয় কৃষ্ণ তো খেলবেনই। তাঁর সঙ্গী ডেভিড উইলিয়ামসকেও হয়তো নামাতে হবে। অন্তত প্রথম দিকে। তবে গত বছরের লিগে মোহনবাগান রক্ষণকে নির্ভরতা দিয়েছিলেন সন্দেশ ঝিঙ্গন। এবার তিনি চলে গেছেন ক্রোয়েশিয়ার ক্লাবে। তাঁর বদলে সে রকম বড় কোনও নাম পায়নি মোহনবাগান। সেন্ট্রাল ডিফেন্সে দীপক টেংরি কিংবা সুমিত রাঠি-ই ভরসা হাবাসের। তবে তিরি আছেন। তাঁকে যদি নামাতে হয় তাহলে হুগো বৌমো কিংবা জনি কাউকোর মধ্যে একজনকে বসতে হবে। প্রতীক্ষায় থাকতে হবে কার্ল ম্যাকহিউকে। তবে এত বড় লিগে কে কখন চোট পাবেন, কার্ড দেখবেন সেটাও একটা ব্যাপার। তাই সুযোগ হয়তো সবাই পাবেন। এখন দেখার হাবাস কীভাবে বিদেশিদের ব্যবহার করেন। তবে প্রথম দিকে সন্দেশের অভাব নিশ্চয়ই অনুভূত হবে।
হাবাস গত কাল তিন জন অধিনায়কের নাম ঘোষণা করেছেন। রয় কৃষ্ণ এবং প্রীতম কোটালের সঙ্গে শুভাশিস বসু। প্রথম দুজন গত বারও অধিনায়ক ছিলেন। লেফট ব্যাক শুভাশিস এই প্রথম অধিনায়কের আর্ম ব্যান্ড পরে মাঠে নামবেন। নতুন দেশি ফুটবলার বলতে মোহনবাগান দলে নিয়েছে গোয়ার লিস্টন কোলাসোকে। মাঝ মাঠে কোলাসো দলের ভরসা জোগাতে পারেন। গত বার চোটের জন্য পাওয়া যায়নি দুই উইঙ্গার প্রবীর দাস এবং সুসাইরাজকে। এবার তাঁরা দুজনেই ফিট হয়ে গেছেন। সামনের দিকে রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামসের সঙ্গে আছেন মনবীর সিং-ও। মোহনবাগানের হয়ে তিনি অনেক গোলও করেছেন। এবার তিনি কী করেন তাই দেখার।
তবে মোহনবগানের সেরা রিক্রূট হলেন গোলকিপার অমরিন্দর সিং। দীর্ঘ দিন অরিন্দম ভট্টাচার্য ছিলেন মোহনবাগান বারের নীচে। এবার মুম্বই থেকে এসেছেন পঞ্জাব পুত্র অমরিন্দর। অরিন্দম চলে গেছেন এস সি ইস্ট বেঙ্গলে। তাঁকেই অধিনায়ক করেছে ইস্ট বেঙ্গল। তবে অমরিন্দর থাকায় মোহনবাগানের গোলকিপার নিয়ে সমস্যা নেই।
কেউ হয়তো চলে গেছেন। নতুন কেউ এসেছেন। সব মিলিয়ে মোহনবাগানের শক্তি বেড়েছে বলেই মনে হয়। তবে কাগজে কলমে দল গড়া এক জিনিস। আর মাঠে নেমে খেলা অন্য ব্যাপার। তবে প্রথম ম্যাচের আগে মোহনবাগানকে বেশ ভারসাম্যযুক্ত দল বলেই মনে হচ্ছে। প্রথম ম্যাচ সব দলের কাছেই একটু বেশি কঠিন। অবশ্য টিমের নিউক্লিয়াসটা ধরে রাখতে পেরেছে মোহনবাগান। শুক্রবার তাই কেরালাকে হারাতে তাদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।