Friday, August 29, 2025
HomeScrollমরুঝড় এবং শচীন!

মরুঝড় এবং শচীন!

১৯৯৮- এর শারজা। ২২ এপ্রিল। তীব্র দাবদাহ চলছে। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি ভারত। প্রথমে ব্যাট করে ২৮৪ রানের টার্গেট দেয় অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে যেতে হলে ২৫০-এর কিছু বেশি করতে হত ভারতকে। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের পর শারজার কমেন্ট্রি বক্সে তিনজন- ইয়ান চ্যাপেল, গ্রেগ চ্যাপেল এবং সেইসময় শচীনকে প্রমোট করা মার্ক ম্যাসকারনেহাস। মার্ক ইয়ান চ্যাপেলকে বলেন, ‘কী মনে ত্রিদেশীয় ফাইনাল কোন দুটি দলের মধ্যে হতে চলেছে?’ প্রত্যুত্তরে ইয়ান চ্যাপেল বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড। ভারতের কোনও সম্ভাবনা নেই।’ একই সুরে তাল মেলান গ্রেগ চ্যাপেলও। এরপর দুজনকেই মার্ক বলেন, ‘ভারত-অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল হবে। আর আজকের ম্যাচের নায়ক হবে শচীন তেন্ডুলকর।’

শচীন যখন ড্রেসিংরুম থেকে ব্যাট হাতে নামছিলেন কোচ অংশুমান গায়কোয়ার এবং নির্বাচক প্রধান রাজসিং দুঙ্গারপুর শচীনকে বলেন, ‘’আমাদের লক্ষ্য হবে রিভাইজিড টার্গেট (২৫০ এর কিছু বেশি) চেজ করা। অযথা ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।’’ শচীন এক পলক তাকিয়ে বলেন, ‘’আমি যখন নামি জেতার লক্ষ্যেই নামি। আমার কাছে ২৮৪-ই থাকবে।’’ এরপর শারজায় ‘শচীন শো’-এর প্রদর্শন চলে। সব ধরনের শটের সমাহার দেখা যায় মাস্টারের ব্যাট থেকে। কাস্পোইচকে স্ট্রেটে মারা শচীনের ছয় এখনও ইউটিউবে গেলে পাওয়া যাবে। ম্যাচের মাঝেই মরুঝড় শুরু হয়। বাকি ক্রিকেটাররা মাঠে শুয়ে পড়েন। উইকেটকিপার অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে জাপ্টে ধরেন শচীন। পরবর্তীতে শচীন বলেন, ‘মরুঝড় জীবনে প্রথমবার দেখি। মনে হচ্ছিল চোখের সামনে কোনও হলিউড মুভি দেখছি। গিলিকে ধরে রেখেছিলাম নাহলে বোধহয় উড়ে যাবো ভাবছিলাম।’

আরও পড়ুন: সিডনির পিচে নিশ্চিন্তে ঘাস খাবে গরু, কটাক্ষ সানির

কমেন্টেটর ইয়ান চ্যাপেল সেইসময় একটা দারুণ কথা বলেন, ‘আজ রাতে বোধহয় একমাত্র মরুঝড়ই শচীনকে থামাতে পারে। অন্য কেউ নয়।’ শেষে শচীনের নামের পাশে ১৩১ বলে ১৪৩ রানের ঝকঝকে ইনিংস। ম্যাচ হারলেও ভারত রিভিজিট টার্গেট চেজ করেছিল। শারজার শাসক হয়েছিলেন শচীন তেন্ডুলকর।? এত গরমে শরীর বার বার স্টিফ হয়ে যাচ্ছিল শচীনের। রাত ২ টোয় টিম হোটেলে ফেরেন শচীন। পরের দিন অর্থাৎ ফাইনালের আগের দিন টিম হোটেলে একটা পার্টি দেন মার্ক ম্যাসকারনেহাস। সেই পার্টিতেও একটা মজার ঘটনা ঘটে। ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের স্পনসর ছিল কোকাকোলা। অন্যদিকে, সেইসময় পেপসি-র ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন শচীন। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ থেকে দুই পানীয় ব্র‍্যান্ডের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই ছিল দেখবার মতো। কোকাকোলা-র কর্ণধার ২৩ এপ্রিল টিম হোটেলে সবার সামনেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন শচীনকে- ‘যদি ফাইনালে ভারতকে জেতাতে পারো, তাহলে আমার তরফ থেকে মার্সিডিজ!’

পরের দিন ২৪ এপ্রিল আরও একবার শচীন শো- এর সাক্ষী থাকে শারজা। শচীনের নামের পাশে ঝকঝকে ১৩৪। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে কোকাকোলা কাপ চ্যাম্পিয়ন আজহারের ভারত। সেই রাতে শচীনের জন্মদিন বাড়তি মাত্রা পায়। ম্যাচের পর শচীনকে কোলে তুলে ফেলেন মার্ক।

এরপর ভারতে ফিরে শিবাজি পার্কে একটি স্থানীয় টুর্নামেন্টে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত শচীন তেন্ডুলকর। সেই লোকাল টুর্নামেন্টেও শিবাজি পার্ক একেবারে কানায় কানায় পূর্ণ। আর এই জলপ্লাবনের কারণ নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না…

দেখুন অন্য খবর:

Read More

Latest News