কলকাতা: দেশ এবং বিদেশের বিমানবন্দরে চাকরি দেওয়ার নাম করে কোটি টাকার প্রতারণা। বিভিন্ন বেসরকারি বিমানসংস্থার জাল নথি তৈরি করে চলত এই প্রতারণা চক্র। মঙ্গলবার এই প্রতারণা চক্রের পর্দা ফাঁস। ব্লু এভিয়েশন নামে ওই সংস্থার দুই কর্ণধার সহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করল বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। উদ্ধার একাধিক ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট ও বেসরকারি বিমানসংস্থার জাল নথি।
পুলিশ সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা হাকিম শেখ ১৯ ডিসেম্বর বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ করেন। তিনি চাকরির জন্যে একটি জব পোর্টালে নিজের বায়োডেটা আপলোড করেন। সেখান থেকে খোঁজ পেয়ে ব্লু এভিয়েশন নামের একটি সংস্থা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়, বিমানবন্দরে চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু এর পরিবর্তে তাঁকে সেই সংস্থার ট্রেনিং কোর্স করতে হবে। সেই ট্রেনিং বাবদ ওই অভিযোগকারীর থেকে প্রাথমিক ভাবে ১০ হাজার টাকা নেয় ওই সংস্থা। ট্রেনিং শেষে অভিযোগকারীকে প্লেসমেন্ট বাবদ আরও ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে বলে ওই সংস্থা। সেই ব্যক্তি ৫০ হাজার টাকা জমা দিলে তাঁকে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে কার্গোতে চাকরির অফার লেটার দেওয়া হয়।
এরপর অভিযোগকারী বেঙ্গালুরু গিয়ে জানতে পারেন, ওই চাকরি ভুয়ো চাকরি। পুনরায় সে কলকাতা ফিরে এসে ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁকে পুনরায় জানানো হয় কলকাতার একটি বেসরকারি বিমান সংস্থায় তাঁকে চাকরি দেওয়া হবে। সেই মর্মে তাঁকে ওই বেসরকারি বিমান সংস্থার নামে একটি অফার লেটার দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে তাঁর থেকে নগদে আরও ৫০ হাজার টাকা সল্টলেকের একটি হোটেলের সামনে থেকে নেয় ওই সংস্থার এক কর্মী। অভিযোগকারী সেই বিমান সংস্থার অফিসে যোগাযোগ করলে জানতে পারে ওই বিমান সংস্থার নথিও জাল করে ভুয়ো অফার লেটার তৈরি করেছে ওই সংস্থা। এরপরই বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানার দ্বারস্থ হন ওই ব্যক্তি।
ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ জানতে পারে, ব্লু এভিয়েশন নামে একটি সংস্থা চালু করে বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থীদের লক্ষ্য করত এই সংস্থা। এরপরই তাদের দেশের এবং বিদেশের বিমানবন্দরে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে লক্ষাধিক টাকা নিত।
পুলিশ সূত্রে খবর, কলকাতার চিনার পার্ক, কাকুরগাছি, পার্ক স্ট্রিট সহ দুর্গাপুর, দিল্লি, মুম্বাই, হরিয়ানা সহ একাধিক রাজ্যে এই প্রতারণা চক্র জাল বিস্তার করে রেখেছে। এই সংস্থার পক্ষ থেকে একাধিক বেসরকারি বিমান সংস্থার জাল নথি তৈরি করে সাধারণ মানুষদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলার কৌশল সাজিয়েছিল এই সংস্থা বলে পুলিশ সূত্রে খবর। অবশেষে সোমবার রাতে ওই সংস্থার অফিসে হানা দেয় বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। সেখান থেকে এই চক্রের মূল পান্ডা অরুণ সৌখিন এবং সংস্থার অন্যতম কর্ণধার অদিতি বদ্রাইকা সহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে একাধিক ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট, কাস্টমার ডেটা, হার্ড ডিস্ক, মোবাইল ফোন সহ একাধিক জাল নথি উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার অভিযুক্তদের বিধাননগর আদালতে তোলা হয়।