নয়াদিল্লি: তীব্র দহনজালায় জ্বলছে দেশের নানা প্রান্ত। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। ঘর থেকে বাইরে বেরলেই নাক-মুখ জ্বলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) সহ দেশের ৯ রাজ্যে তাপপ্রবাহের সতর্কতা (Heatwave Alert) জারি করল মৌসম ভবন (IMD)। সোমবার দেশের একাধিক রাজ্যের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও উঠে যাওয়ায় মৌসম ভবন পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা, সিকিমে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে। এই রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশে তাপমাত্রা আগামী দিনগুলিতে আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লু বইবার সম্ভাবনাও রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় গত কয়েকদিন ধরে তাপপ্রবাহ চলছে। সোমবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি। কয়েকটি জেলায় আবার ৪২ ডিগ্রিতে পৌঁছে গিয়েছিল তাপমাত্রা। বাঁকুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গিয়েছিল সোমবার। রাজ্যের ২০টি শহরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ঘরে ছিল। আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যে এমন পরিস্থিতি বজায় থাকবে বলেই আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি পড়শি রাজ্য ওড়িশা, বিহারেও পারদ চড়ছে। ওড়িশার একাধিক জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পার করেছে। বিহারের পরিস্থিতিও এক। সোমবার পঞ্জাব এবং হরিয়ানায় তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি বজায় ছিল। মঙ্গলবারও ওই দুই রাজ্যে তাপপ্রবাহ চলছে। উত্তরপ্রদেশে দু-একদিনের মধ্যে তৈরি হতে পারে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি। সিকিম, ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডে আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। সোমবার তেলঙ্গানার জয়শঙ্কর ভুপালপল্লি জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩.৪ ডিগ্রি। এ ছাড়াও ওই ৯ রাজ্যের একাধিক জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পার করেছে।
গত রবিবার তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে মহারাষ্ট্রে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১৩ জনের। ‘মহারাষ্ট্র ভূষণ পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বহু মানুষ। চড়া রোদে খোলা আকাশের নীচে বসেছিলেন দর্শকরা। তার জেরেই হিট স্ট্রোকে মৃত্যু হয় ১৩ জনের। অসুস্থ হয়ে পড়েন আরও অনেকে। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে। মাঠ থেকেই অনেককে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, বেশ কয়েকজন মাঠেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রী মৃতদের পরিবার পিছু এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। গরমে অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন রাজ্যে মৃত্যু হচ্ছে পশু-পাখিরও। ওড়িশার জাজপুর জেলায় হিট স্ট্রোকে অন্তত আটটি বাদুড় মারা গিয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের চিড়িয়াখানায় পশু-পাখিদের প্রাণান্তকর অবস্থা। কর্তৃপক্ষ তাদের ঠান্ডা রাখার জন্য চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছে না। কুলারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় স্নান করানো হচ্ছে জন্তু-জানোরায়দের।