কলকাতা: কয়েক মাস আগে কলকাতায় এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) বুক বাজিয়ে দাবি করেছিলেন, আগামী লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে অন্তত ৩৫টি আসন পাবে বিজেপি (BJP)। কিন্তু জেলায় জেলায় রাজ্য বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল বাড়ছে, তাতে লোকসভা ভোটে (Lok Sabha Election) বিজেপির আসন দুই সংখ্যায় পৌঁছবে কি না, তা নিয়েই সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে দলের অন্দরে। জেলার বিক্ষোভের আগুনের আঁচ এসে পড়েছে কলকাতা এবং বিধাননগরে বিজেপির সদর দফতরে।
বুধবার বারাসতের বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা রীতিমতো হামলা চালায় বিধাননগরে বিজেপির নতুন দফতরে। ইট দিয়ে দরজা ভাঙার চেষ্টা হয়। একদল কর্মীকে গেটে, দরজায় সমানে লাথি মারতে দেখা যায়। বিক্ষুব্ধরা বারাসত সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তরুণকান্তি ঘোষের ইস্তফা দাবি করেন। কর্মীদের বিক্ষোভে দফতরে ঢুকতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন এক সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন: আসানসোল শুটআউট কাণ্ডে গ্রেফতার ১
বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি জেলার কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখান কলকাতায় মুরলীধর সেন স্ট্রিটে বিজেপির রাজ্য দফতরের সামনে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক এবং দলের আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যর বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। তাঁদের ছবিতে জুতোর মালা পরিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। উত্তেজিত কর্মীরা নেতাদের ছবিতে লাথিও মারেন। তাঁদের ছবি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
পঞ্চায়েত ভোটের পর বিভিন্ন জেলায় বিজেপির সাংগঠনিক স্তরে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। অনেক জেলায় সভাপতি বদল হয়েছে। সেসব নিয়েই জেলায় জেলায় প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ চলছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার কর্মীরা বিধাননগরের অফিসে একাধিকবার বিক্ষোভ দেখান। বারুইপুরে সাংগঠনিক সভা করতে গিয়ে হেনস্থা হতে হয় রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদের। বর্ধমান জেলা দফতরে দফায় দফায় বিক্ষোভ হয়েছে গত কয়েক মাসে। সম্প্রতি বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুরে জেলার নেতা তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। তাঁকে দলের জেলা অফিসে তালাবন্দি করে রাখা হয়েছিল। বীরভূম জেলাতেও বিক্ষোভ হয়েছে।
অনেক জেলাতেই শীর্ষ নেতারা পর্যন্ত বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। কিছুদিন আগে দলের জাতীয় সম্পাদক বীরভূমের নেতা অনুপম হাজরা ফেসবুক পোস্টে বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসী মণ্ডলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হন। সব মিলিয়ে লোকসভা ভোটের মুখে জেলায় জেলায় বিজেপির কোন্দল বেড়েই চলেছে।
দেখুন আরও অন্যান্য খবর:
এমনিতেই জেলাগুলিতে বিজেপির বুথভিত্তিক সংগঠন একেবারেই মজবুত নয়। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বারবার বুথ স্তরে সংগঠন গড়ার উপর জোর দিচ্ছেন। কিন্তু কোনও জেলাতেই সেই বুথভিত্তিক সংগঠন গড়ে উঠছে না। কোনও কোনও জেলায় বিক্ষুব্ধরা ক্ষমতাসীন নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলার অভিযোগ এনেছেন।
এই নড়বড়ে অবস্থায় লোকসভা ভোটে কীভাবে লড়াই হবে, তা নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের মনেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। বৃহস্পতিবার খোদ কলকাতায় বিজেপির সদর দফতরে যেভাবে বিক্ষোভ হল, তাতে অশনি সংকেত দেখছেন অনেক নেতাই। আদি এবং নব্য নেতাদের এই দ্বন্দ্বে ঘোর অস্তস্তিতে পড়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বৃহস্পতিবার বলেন, আমি কোনও সাংগঠনিক পদে নেই। তাই কিছু বলি না। তবে বিক্ষুব্ধদের কথাও শোনা উচিত। দলের রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, এই ধরনের বিক্ষোভ দুর্ভাগ্যজনক। দল অবশ্যই এর ফলে অস্বস্তিতে রয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্ব নিশ্চয়ই যথাযথ পদক্ষেপ করবেন।