Sunday, August 10, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: অভিমন্যুদের পাঠানো হচ্ছে যুদ্ধে, তারা ফিরবে তো 

চতুর্থ স্তম্ভ: অভিমন্যুদের পাঠানো হচ্ছে যুদ্ধে, তারা ফিরবে তো 

Follow Us :

পৃথিবীর সব দেশ, সভ্য দেশ, পরিকাঠামোগত, নীতি নির্ধারণ বিষয়ে বড়সড় কোনও বদল আনার আগে তা নিয়ে বহু আলোচনা চালায়৷ বিভিন্ন ফোরামে তা আলোচিত হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার এক পাইলট প্রজেক্ট চালু করা হয়৷ তার থেকে ভুলভ্রান্তি ঠিক করে সেই পরিকাঠামোগত বদল বা নীতি নির্ধারণে বড়সড় পরিবর্তন আনা হয়৷ কিন্তু আমি এক সভ্য ব্যবস্থার কথা বলছি৷ অসভ্য বর্বর, মধ্যযুগীয় ধ্যান ধারণা নিয়ে চলা মানুষজন এসবের তোয়াক্কাও করে না৷ স্বৈরতান্ত্রিক শাসক, চলো দৌলতাবাদ, দিল্লি থেকে লোক লস্কর, সিপাহী নিয়ে মহম্মদ বিন তুঘলক গেলেন দৌলতাবাদ৷ কিছুদিনের মধ্যে বোঝা গেল, এ এক প্রকান্ড ভুল৷ আবার চলো দিল্লি।

আমাদের আপাতত শাসকদের দেখলে ওই বিন তুঘলকের কথাই মনে হয়৷ এক স্বৈরাচারী শাসক, যখন যা মনে হচ্ছে তাই করছে৷ অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনাবোধ বলতে কিছুই নেই। তো গতকাল সেই সরকারের ডিফেন্স মিনিস্টার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ঘোষণা করেছেন, এবার থেকে সাধারণভাবে যে সেনা নিয়োগ হত, তা আর হবে না। বছরে ৬০ হাজারের মত সেনা নিয়োগ হত৷ তাদের সাধারণ চাকরির সময়সীমা ছিল ১৫ বছর৷ এক বছর ট্রেনিং এর পরে তারা স্থল, নৌ, বিমানবাহিনীতে যোগ দিত৷ তারপর কাজ করতে করতে শেখা, তার সঙ্গে বেশ কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের ট্রেনিং ও ছিল৷ তাদের পে স্কেল ছিল৷ রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট ছিল৷ পেনশন ছিল৷ বাহিনী বড় করা হয়েছে৷ অতএব মাইনে, পেনশন বাবদ খরচটাও বড়ই ছিল। এখন নতুন নিয়ম চালু হবে৷ অগ্নিবীর নিয়োগ করা হবে৷ মানে নিউ রিক্রুটদের নাম, অগ্নিবীর। আগে যারা ছিলেন, তারা কী? জানা নেই, বলা হয়নি। এঁরা অগ্নিবীর। তো এই বীরেরা ৬ মাসের ট্রেনিং পাবেন৷ মোট চার বছরের চাকরি৷ বেতন ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা৷ তার এক অংশ আবার জমা থাকবে রাজকোষাগারে৷ ৪ বছর পরে ১২/১৩ লক্ষ টাকা নিয়ে এই অগ্নিবীরদের ৭৫% বাড়ি ফিরে যাবেন। হাতে কী? ৪ বছরের সৈন্য, মিলিটারি, নেভি, বা এয়ার ফোর্সের অভিজ্ঞতা, কমব্যাট ওয়েপন চালানোর অভিজ্ঞতা৷ আর ওই ১২/১৩ লক্ষ টাকা।

১০০ জনের মধ্যে ২৫ জন এরপর আরও ১৫ বছর চাকরি করবেন। এদের বয়স কত? ১৭.৫ থকে ২১ বছর, তার মানে এরা যখন ৪ বছর পরে চাকরি শেষ করে বাড়িতে ফিরবেন, তখন এদের বয়স হবে ২১ থেকে ২৫ এর মধ্যে। এঁরা নাকি তখন ১৮ লক্ষ পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন৷ যাঁরা মাইনে পাচ্ছিলেন ২৫/৩০/৩৫/৪০ হাজার তারা এখন কাঠ বেকার। সে কথায় পরে আসছি, প্রথমে দেখা যাক, সরকার এই সিদ্ধান্ত নিল কেন?

প্রথমত এই সিদ্ধান্তের ফলে সেনাবাহিনীর বিরাট মাইনে, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধে, পেনশনের দায়দায়িত্ব থাকবে না। দেখতে গেলে এটাই একমাত্র বিষয় যা বিবেচনা করা হয়েছে৷ যদিও বলা হচ্ছে এর ফলে সেনাবাহিনী অনেক বেশি ইউথফুল হয়ে উঠবে৷ অনেক বেশি ইয়ং হয়ে উঠবে৷ সেটাই যদি লক্ষ থাকতো, তাহলে সাধারণ সেনা রিক্রুটমেন্ট বয়সই কমিয়ে দিতে পারতো৷ আসলে ওসব কোনও কথাই নয়৷ কারণ বেতন আর পেনশনের টাকা বাঁচানো। কী হতে চলেছে এই সিদ্ধান্তের ফলে, আসুন দেখা যাক৷ আমরা আমাদের যুক্তিগুলো দিচ্ছি, আপত্তি থাকলে আপনারা জানান।

প্রথম যেটা হবে সেটা সাংঘাতিক, তা হল সেনাবাহিনীর ভাষা এলাকাগত চরিত্র বদল, ডেমোগ্রাফিক চেঞ্জ। কী করে? ৩০ হাজারের অস্থায়ী চাকরি তাও আবার সৈন্যবাহিনীর ঝুঁকি নিয়ে, তার চাহিদা দেশের দক্ষিণের থেকে অনেক বেশি আসবে হিন্দি গো বলয় থেকে, সৈন্য বাহিনীর চরিত্র বদলতে বাধ্য। দ্বিতীয় ভঙ্কর ঘটনাটা ঘটবে চার বছর পরে৷ ৪০ হাজার কিশোর, যুবক সেনাতে গেল, মাইনে পেল, কমব্যাট ট্রেনিং পেল, সেনা বাহিনীর কায়দা কানুন জানলো৷ তারপর ৩০ হাজার ফিরে এল সমাজে৷ খুব ভালো হলে ২০ হাজার ফিরে আসা ২১ / ২৫ এর যুবক চাকরি জোগাড় করলেন, ব্যবসা করলেন, বাকি ১০? যারা অস্ত্র চালাতে জানে, যারা শারীরিকভাবে যাকে বলে হাট্টা কাট্টা, তারা কী করবেন? তাদের একটা অংশও যদি বিপথে যায়, তাহলে? সৈন্যবাহিনীতে গেল, ১৫/১৮/২০ বছর চাকরি করলো, ইতিমধ্যে বিয়ে শাদি করেছে, বাচ্চা কাচ্চা হয়েছে, রিটায়ার করার পর একলপ্তে বেশ কিছু টাকা পেয়েছে, পেনশন পাবে, ঠিক আছে৷ কিন্তু এরা? হাতে ১৮ লক্ষ টাকা, ২০২৬-এ ১৩ লক্ষ টাকা দিয়ে কী হবে?

এর আগের সেনাবাহিনীর বিজ্ঞাপনগুলো দেখুন৷ দারুণ এক রোমাঞ্চকর জীবনের সঙ্গে সঙ্গে স্বচ্ছল জীবনের প্রতিশ্রুতি, আসুন দেশের জন্য, দেশবাসীর জন্য, সীমান্ত রক্ষার জন্য। আর আজ কি বলা হচ্ছে? কন্ট্রাকচুয়াল লেবার? চাকরি শেষ, মাইনে শেষ, পেনশন নেই, সে চাকরিও ৪ বছরের? সেই ছেলে বা মেয়েটি প্রাণ দেবে দেশের জন্য? কেন? দেশের প্রাধানমন্ত্রীর সুরক্ষার জন্য প্রতিদিন ব্যয় হবে ১.৪৩ কোটি টাকা, আর দেশের জওয়ান কন্ট্রাকচুয়াল সার্ভিস? আসুন তৃতীয় সমস্যাতে৷ আর্মি মানে তো বাণভাসি মানুষকে ঘরে ফেরানো নয়৷ রিলিফ দেওয়া নয়৷ সেগুলো প্রয়োজনে মাঠে নামা৷ আসল কাজ সীমান্ত রক্ষা আর যুদ্ধ, যাবতীয় ওয়ার মুভি দেখুন, সৈনিকদের কাছ থেকে যুদ্ধের গল্প শুনুন, দেখবেন, রেজিমেন্টের প্রত্যেকের সঙ্গে কি দারুণ আত্মীয়তার বন্ধন, সন্দেশে আতি হ্যায়, সন্দেশে যাতি হ্যায়, দেখে নিন আর একবার, কিন্তু এই চার বছরে সেই বন্ধন তৈরি হবে? যেখানে আবার শেষ দুটো বছরে, নিজেদের মধ্যেই চাকরি বাঁচানোর প্রতিযোগিতা চলবে৷ ১০০ জনের মধ্যে চাকরি থাকবে তো মাত্র ২৫ জনের৷ সিনিয়রদের সুবিধে, প্রচুর স্তাবক, চামচে তৈরি হবে, চাকরি বাঁচানোর জন্য৷ আর কমব্যাট ফোর্সের সাব ইউনিটগুলোতে যদি সেই বন্ধন না তৈরি হয়, তাহলে সেই সেনাবাহিনী কার্যকরী আঘাত করতে পারে না। অনেক অনেক সমস্যা আছে৷

আসুন চতুর্থ বড় সমস্যার দিকে নজর দিই৷ দেখুন এই অগ্নিবীরেরা প্রথমেই ১ বছরের বদলে ৬ মাসের বেসিক ট্রেনিং পেলেন৷ তারপর চারবছরের মাথায় ৭৫% বেরিয়ে গেলেন, ২৫ জনের এক্সপিরিয়েন্স ৪ বছরের, ১০০ জনের ৩ বছরের, ১০০ জনের ২ বছরের, ১০০ জনের ১ বছরের, কিছুদিনের মধ্যেই সেনাবাহিনীতে যুদ্ধে যাবে, এমন সৈনিকদের এক বিরাট অংশ অনভিজ্ঞ, হয়তো তাদের সামনে চীনা বাহিনী, পাক বাহিনী। মনে আছে মহাভারতের অভিমন্যুর কথা? তাঁর অস্ত্রশিক্ষা সম্পূর্ণ নয়, শুরু হয়ে গিয়েছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, সামনে চক্রব্যুহ, মহারথীরা, তিনি ব্যুহ ভেদ করতে তো জানেন, ব্যুহ থেকে বেরিয়ে আসার শিক্ষা তাঁর নেই, তাও তাঁকে পাঠানো হল, তিনি গেলেনও, মারা যাওয়াটা নিশ্চিত ছিল, মারা গেলেন৷ উত্তরা কেঁদেছিল হাউ হাউ করে৷ কেঁদেছিল দ্রৌপদী৷ যুদ্ধ থামেনি, কান্নায় তো যুদ্ধ থামে না। তো আমাদের দেশ কি অভিমন্যু তৈরি করার কাজে হাত দিল? যাদের শিক্ষা অসম্পূর্ণ, যারা এখনও তৈরিই নয়, তাদের যুদ্ধে পাঠানো হবে? হ্যাঁ এই মূহুর্তে মাইনে আর পেনশনের বোঝা অনেকটাই কমবে৷ কিন্তু তার জন্য বলি কা বকরা খোঁজা হচ্ছে? এসব সমস্যা নিয়ে কোনও গুরুতর আলোচনাই হয়নি৷ অন্তত একটা পাইলট প্রজেক্ট করেও বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারত, কী হতে পারে। সেটাও করা হলও না। আবার আবার এক অবিমৃষ্যকারী পদক্ষেপের সাক্ষী হতে চলেছে আমার দেশ, দেশের বেশ কিছু তরতাজা প্রাণের বিনিময়ে শিক্ষা হবে বৈকি, কিন্তু তাদের ঘরে উত্তরারা কাঁদবে, দ্রৌপদীদের চোখের জল থামবে না, কিন্তু নরেন্দ্র মোদির তাতে কী? তিনি তো সিকিওর। তাঁর নতুন গাড়ি এসেছে ৩ কোটি টাকা দিয়ে, ১০ কোটি টাকার প্লেন, প্রতিদিন সুরক্ষার খরচ ১.৪৩ কোটি টাকা, উত্তরা কাঁদবে? সে তো কেঁদেই চলেছে দিনরাত, তাতে মোদিজির ভারি বয়েই গেল৷ তিনি চক্রব্যুহতে পাঠাচ্ছেন দেশের অভিমন্যুদের।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Nabanna Abhijan | নবান্ন অভিযান ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা, তৈরি জলকামা/ন, ব্যারিকেডে আটকানো রাস্তা
03:57:14
Video thumbnail
Nabanna Abhijan | নবান্ন অভিযানে এ কী অবস্থা? দেখুন Live
03:24:10
Video thumbnail
Nabanna Abhijan | RG Kar Incident | 'প্রতিবাদ মিছিলে আমি থাকব' নবান্নমুখী তামান্না খাতুনের মা
03:13:03
Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
03:00:30
Video thumbnail
Nabanna Abhijan | নবান্ন অভিযানের মিছিল রুখতে তৈরি 'লৌহকপাট'
44:46
Video thumbnail
Modi-Putin | পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা মোদির, কী কী বিষয়ে কথা? দেখুন বড় আপডেট
03:25:40
Video thumbnail
Priyanka Gandhi | এই ভাষণে নির্মলাকে ধুয়ে দিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, না দেখলে মিস
03:17:30
Video thumbnail
Jaya Bachchan | Nirmala Sitharaman | বলুন আমি কত ট্যাক্স দেব? সংসদে নির্মলাকে ধুয়ে দিলেন জয়া বচ্চন
03:12:38
Video thumbnail
Politics | 'এ যুগের গান্ধী কে? নরেন্দ্র মোদি আবার কে!'
04:15
Video thumbnail
Politics | ইডির কর্মকর্তা কপিল রাজ রিলায়েন্সে নিলেন কেন কাজ?
03:18