Monday, July 28, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ : অতিমারী এবং কয়েকটা কথা

চতুর্থ স্তম্ভ : অতিমারী এবং কয়েকটা কথা

Follow Us :

কোভিড, করোনা, ডেল্টা, ওমিক্রন এবং শেষতক ঘরে ঘরে জানা নাম নয় আতঙ্ক, মানুষ কখনও ভয় পাচ্ছে, কখনও বা চলে গিয়েছে ভেবেই উৎসবে মাতছে, মেলায় যাচ্ছে, সমুদ্রবেলায় যাচ্ছে। পরমূহুর্তে ঘরে সেঁধোচ্ছে। এত স্ব-বিরোধী কথাবার্তা আর তথ্যের মাঝখানে, মানুষ যাকে বলে কিংকর্তব্যবিমুঢ়, কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। জ্যান্ত মানুষের মরার ভয় তো থাকেই, মরণ রে তুঁহু মম শ্যাম সমান, একথা কজনই বা বলতে পারে?

আজ সেই অতিমারী নিয়ে কয়েকটা কথা। না, অসুখ, তার চিকিৎসা, অক্সিজেন বা হাসপাতালের বেড নিয়ে নয়৷ সরকারি সার্কুলার, যা নাকি রোজ পাল্টাচ্ছে, তা নিয়েও নয়। আসুন আরও একটু গভীরে যাওয়া যাক, তলিয়ে দেখা যাক এই অতিমারীর রহস্য৷ সিকরেট বিহাইন্ড দ্য প্যান্ডেমিক। হিউম্যান ইভিলিউশনের ইতিহাসে লক্ষ লক্ষ বছর পরে, আধুনিক মানুষের পূর্বসূরিরা উঠে দাঁড়াতে শিখল৷ হোমো ইরেক্টাস। তারপর আরো ২ লক্ষ বছর কেটে গেল৷ আধুনিক মানুষ তৈরি হল, হোমো স্যাপিয়েন। গোষ্ঠীবদ্ধ সেই মানুষদের অসুখ হত, মহামারীও ছিল বৈকি৷ কিন্তু তা মুছে দিত এক গোষ্ঠীকে৷ অন্য গোষ্ঠী তখন নিরুপদ্রবে শিকার করছে, যে গোষ্ঠী মুছে গেল তাদের খবর তারা রাখেনি৷ রাখার কথাও নয়। ক্রমশ আগুন, আগুনে সেদ্ধ মাংস, পরে মশলা, খামির বা ইস্ট দিয়ে ফোলানো রুটি। সভ্যতা এগিয়ে চলল সমুখপানে? নাকি পেছন পানে?

ইতিহাস বলে এগিয়ে চলল৷ মানুষ যেমন বড় হয়, বয়স বাড়ে আর শ্মশানের সঙ্গে, কবরখানার সঙ্গে দূরত্ব কমতে থাকে, এও তেমনিই বেড়ে চলা৷ এও কি তেমনিই সমুখপানে ধাবমান সভ্যতা? মানুষ ঘর বানাতো, হাওয়া আলো আসার জন্য জানলা, পূব মুখো ঘর, আলো আসবে বলে। এরপর থমাস আলভা এডিশন, সভ্যতার আরও অগ্রগতি, আলো জ্বলল ঘরে, পূবমুখো ঘরের দরকারই রইল না। দক্ষিণ আর উত্তরে জানলা দিয়ে হাওয়া বইত, এসি এল, শীতাতপ নিয়ন্ত্রক, জানলা দক্ষিণ না পশ্চিম, সে কথা অবান্তর। জেমস ওয়াট ইঞ্জিন নিয়ে এলেন, মালগাড়ি এল, ইধর কা মাল উধর, উধার কা মাল ইধার, সেই গাড়িতে চেপে ধানও এল, ভাইরাসও এল, ধান দেখা যায়, চাল দেখা যায়, ভাইরাস তো দেখা যায় না, সে অনায়াসে চলে এল এবার এক গোষ্ঠী নয়, মহামারী হয়ে উঠল অতিমারী৷ নতুন শব্দ, সভ্যতা এগিয়ে চলেছে। এদিকে অসুখ বিসুখের দোরগোড়ায় দাঁড়ালেন, আলেকজান্ডার ফ্লেমিং, পেনিসিলিন। সর্বরোগহর দাওয়াই। মানুষের রোগও বাড়ল, আয়ুও বাড়ল।

তারপর থেকে রোজ নতুন নতুন দাওয়াই আসছে, তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কারোর জানা নেই, রোজ নতুন অসুখের নাম শুনে চলেছি আমরা। মাত্র কয়েকশ বছর আগে মানুষ প্রকৃতিকে আয়ত্ত করতে নামল, চাঁদে গেল, মঙ্গলে গেল, পরমাণু বোমা তৈরি করল, সভ্যতা দশ ঘোড়ার জুড়ি গাড়িতে ছুটতে শুরু করল, বিজ্ঞাপন এল, করলো দুনিয়া মুঠটি মেঁ, এল দুনিয়া মুঠোয়, উহান থেকে সারা বিশ্বে রোগ ছড়াতে লাগল, মাত্র কয়েক দিন। চিনি, ময়দা, আর্টিফিসিয়াল ফুড কালার, আরও কত কি, ইতিমধ্যেই আমাদের পাকযন্ত্রকে চমকে চমকে দিচ্ছে, যেমন সামান্য শব্দে ভয় পেয়ে, চমকিয়ে পালায় হরিণ বা খরগোশ। কিন্তু পাকযন্ত্রের এই চমকিত হবার খবর আমরা টেরও পেলাম না। বিজ্ঞান, যা নাকি প্রশ্ন করতে শেখায়, তাই এল আমাদের জীবনে প্রশ্নকে বাদ দিয়েই।

সভ্যতার রকেট গতি, মানুষের সাধারণ হাঁটা চলা কেড়ে নিল, গাড়ি, লিফট, মোবাইল ক্রমশ আমাদের স্থবির করল। এবং এরকম এক অগ্রগতির বর্শামুখের সামনে হঠাৎই এক সত্য এসে হাজির, সভ্যতার যাবতীয় অগ্রগতিকে সে প্রশ্ন করছে, সভ্যতার যাবতীয় আশনাইকে সে ব্যঙ্গ করছে, থালা বাজাবে, দিয়া জ্বালাবে না ভ্যাক্সিন নেবে? অক্সিজেন? প্যারাসিটামল? অ্যাজিথ্রল? ককটেল থেরাপি, ভেন্টিলেটর? চিতা জ্বলছে সারি সারি, জল তো কবেই বোতলে ঢুকে গেছে৷ এবার ক্যান ভর্তি অক্সিজেন ভরসা। সভ্যতার অগ্রগতি। শ্মশান ডাকে আয় আয় আয়, যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো? কেউ আপনার প্রশ্ন শোনার জন্য বসে নেই, একরত্তি ভাইরাসের মনে হয়েছে, তাই খাড়া নয়, ভার্টিকাল নয়, হরাইজেন্টাল আপনি, চারজনের কাঁধে চেপে চলতে শুরু করলেন, হরিবোল, হরিবোল, আল্লা হু, আল্লা হু, খই ছড়াচ্ছে রাস্তায়, অগুরুর গন্ধ।

অতঃ কিম? আমরা কী করব? সভ্যতার এই অগ্রগতিকে এক ঝটকায় যদি ফিরিয়ে দিতে পারতাম, অন্য কোনও পথে, প্রকৃতির নিয়মপাঠের সঙ্গে তালমেল করে, তাহলে তো ভালই হত। কিন্তু তা তো হবার নয়, আমরা মুক্তকচ্ছ হয়ে পথে নেমেই পড়েছি, ফেরার রাস্তা আর নেই। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে তার রুদ্ররোষ, ঘন ঘন মাথা নাড়াচ্ছে সে, ভাইরাস মিউটেট করছে, এক ভাইরাস গেলে অন্যটা তৈরি হচ্ছে সব্বার অলক্ষে, আবার সেই প্রশ্ন অতঃ কিম? এবার কী?

দুটো কাজ করাই যায়, একটা হল করেক্টিভ মেজারস, সঠিক পথে হাঁটা শুরু করা, এখনই, সময় নষ্ট করার সময় যে নেই আমাদের। অন্যটা হল, অতিমারীর মোকাবিলা করা। একটার পর আরেকটা আসবে, আসবেই, সেটা জেনে নিয়েই তার মোকাবিলার অস্ত্রগুলোকে শানিয়ে নেওয়া, তৈরি থাকা, দুটো কাজই সমান্তরাল গতিতেই করতে হবে, দুটো কাজই গুরুত্বপূর্ণ। এই যে চারিদিকে বিজ্ঞানকে হাতে নিয়ে, প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করার কাজ আমরা প্রতিদিন করে চলেছি, তাতে রাশ টানা। গাছ কেটে, নদী বাঁধ দিয়ে, কৃত্রিম বৃষ্টিপাত করে, বন ধ্বংস করে, মাইলের পর মাইল খনি থেকে টন টন খনিজ সম্পদ তুলে, সিমেন্ট, ইঁট পাথরের নগরায়নে লাগাম দিতে হবেই, গ্যালন গ্যালন নোঙরা আবর্জনা মিশছে নদীতে, কারখানার চিমনি থেকে, পেট্রল ডিজেলের ধোঁয়া থেকে বিষ ছড়াচ্ছে, মিশে যাচ্ছে সেই বায়ুতে যা আমাদের নিশ্বাসে প্রশ্বাসে ছড়িয়ে যাচ্ছে শিরায় ধমনীতে, সেখানে রাশ টানতেই হবে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নামে, ধ্যাস্টামো চলছে, শসার সঙ্গে করলা, পেঁপের সঙ্গে ঝিঙে, মুরগির সঙ্গে শকুন, ছাগলের সঙ্গে শুয়োর মিলিয়ে মিশিয়ে, বকচ্ছপ তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে, সে প্রতিযোগিতার শেষ কোথায় কেউ জানে না, সে প্রতিযোগিতায় অলক্ষে আর কী কী তৈরি হচ্ছে, তাও কারোর জানা নেই।

এসব করার আগেই কী হতে পারে, কী হতে চলেছে জানা দরকার, নাহলে মাখন নয় মার্জারিন খাও, মার্জারিন নয় ঘি খাও, চিনি নয় সুগার ফ্রি খাও, সুগার ফ্রি নয় গুড় খাও, খাসি নয় ব্রয়লার খাও, ব্রয়লার নয় দেশি খাও চলতেই থাকবে, এ যেন মোদি সরকারের জি এস টির সার্কুলার, রোজ পালটে যাচ্ছে, রোজ। অর্থাৎ এককথায় আমাদের এই সভ্যতার অগ্রগতির নামে যে বিশৃঙ্খলা চলছে, তাকে বন্ধ করতেই হবে, এ হল প্রথম কাজ। দ্বিতীয় কাজটা কী?

বেদ থেকে কোরান, জেন্দাবেস্তা থেকে ত্রিপিটক, বাইবেলে বহু আগেই তা বলা হয়েছে, বি অ্যা গুড সামারিটান। পড়শির দিকে নজর দিন, পাশের মানুষের ওপর নজর দিন, সে ভাল থাকলে, আপনিও ভাল থাকবেন। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব, একলা বাঁচা যায় না, একলা বাঁচা সম্ভব নয়। আপনি স্যানিটাইজার আর ফিউম কিনলেন, আপনার ঝাঁ চকচকে বাড়ি সানিটাইজ হল, আর আপনার কাজের লোক, রান্নার মাসি এলেন মুঠো মুঠো ভাইরাস নিয়ে, আপনি ভালো থাকতে পারবেন তো? আপনার ভর পেট, আপনার প্রতিবেশীর পেটে খাবার নেই, তার ইমিউন সিস্টেমের দফারফা, আপনি ভাল থাকতে পারবেন? সমাজের সর্বস্তরে এই বৈষম্য আপনাকে ছেড়ে কথা বলবে? তা হয় না।

দুঃখ কিসে হয়?
অভাগার অভাবে জেনো শুধু নয়।
যার ভাণ্ডারে রাশি রাশি
সোনা দানা ঠাসা ঠাসি
তারও ভয়।
জেনো সেও সুখী নয়
সুখী নয়।
দুঃখ যাবে কী?
দুঃখ যাবে কী?
বিরস বদনে রাজা ভাবে কী?
বলি যারে তারে
দিয়ে শাস্তি
রাজা কখনো সোয়াস্তি পাবে কী?
দুঃখ যাবে কী?

দুঃখ কিসে কিসে যায়?
দুঃখ কিসে যায়?
প্রসাদেতে বন্দী রওয়া
বড় দায়।

একবার ত্যাজিয়া সোনার গদি
রাজা মাঠে নেমে যদি
হাওয়া খায়!
তবে রাজা শান্তি পায়।
রাজা শান্তি পায়
শান্তি পায়।

এই অতিমারীর সময়ে আমাদের ভাবতেই হবে এই বৈষম্যের কথা, ন্যাকা কান্না বন্ধ করে, মানুষের পাশে দাঁড়ান, যতটুকু সামর্থ আছে তাই নিয়ে দাঁড়ান, যাদের মাথার ওপর ছাদ আছে, পেটে খাবার আছে, পোশাক আছে, তাঁদের বলছি, মানুষের, সেই সব মানুষের পাশে দাঁড়ান, যাদের এটুকুও নেই। নিজের হাতে ল্যাজে আগুন তো জ্বালিয়েছেন, তাতে হতাশার ঘি ঢালবেন না, অতিমারি কেবল প্রাণ নিচ্ছে না, অর্থনীতিকে ধ্বংশ করছে, মানুষের রোজগার কেড়ে নিচ্ছে, চাকরি চলে যাচ্ছে, তার ওপরে অর্বাচীন সরকারের অবিবেচনায় দু বেলার অন্নও অনেকের জুটছে না, মানুষ অসহায়, হাত ধরুন।

এবং ব্যক্তি মানুষ, তাদের জন্যও দুটো কথা, ভাল থাকার সহজ মন্ত্র কেবল শরীর নয়, মনটাকেও ভাল রাখা, নেই নেই বলে ন্যাকা কান্না, মরে যাবো মারে যাবো বলে হতাশা না ছড়িয়ে অন্তত নিজে ভাল থাকুন। গান করুন, বই পড়ুন, গল্প করুন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলুন, সকালে উঠুন, হাঁটুন, হাল্কা ব্যায়াম করুন, এগুলোর জন্য সরকারের দরকার হয় না, আর পারলে দিনে একটা মানুষকে সাহায্য করুন, দেখবেন এ অতিমারী কেটে গিয়েছে৷

‘সর্বে ভবন্তু সুখিন, সর্বে সন্তু নিরাময়া, সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু, মা কশ্চিদ দুঃখ মাপ্নুয়াত,ওম শান্তি শান্তি শান্তি ।
সবাই যেন সুখী হয়, সকলে আরোগ্য লাভ করুক, সকলে অপরের ভালোর জন্য কাজ করুক, কেউ যেন দুঃখে না থাকে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Donald Trump | স্কটল্যান্ড সফরে গিয়ে গলফ খেলছেন ট্রাম্প, বাইরে চলছে বিক্ষো/ভ, দেখুন কী অবস্থা
03:30:55
Video thumbnail
America | বোয়িং বিপত্তি! ল্যান্ডিং গিয়ারে আ/গু/ন, ফ্লাইট থেকে লাফ আমেরিকার যাত্রীদের
01:23:30
Video thumbnail
Operation Sindoor | অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সোম-মঙ্গল উ/ত্তা/ল হবে পার্লামেন্ট? দেখুন এই ভিডিও
49:31
Video thumbnail
Haridwar Incident | হরিদ্বারে মনসা দেবী মন্দিরে ভয়া/বহ দু/র্ঘটনা আ/হত বহু, মৃ/ত ৬
56:36
Video thumbnail
Weather Update | জেলায় জেলায় জল যন্ত্রণা, কবে কমবে নিম্নচাপের বৃষ্টি? কী জানাচ্ছে হাওয়া অফিস?
02:56:20
Video thumbnail
Stadium Bulletin | ভাই স্টোকস, এর নাম স্পোর্টসম্যানশিপ?
20:25
Video thumbnail
B. R. Gavai | CJI | চেয়ার পাপ হয়ে যায়, আমি রিটায়ার করে যাব, সুপ্রিম প্রধানের ইঙ্গিত কার দিকে?
03:30
Video thumbnail
Chandrababu Naidu | NDA | চন্দ্রবাবু নাইডু বললেন আলবিদা, ৩৮ নেতা দিলেন ইস্তফা, টিকবে তো মোদি সরকার?
03:35
Video thumbnail
Ghulam Nabi Azad | Vice President | নতুন উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার মুখে গুলাম নবি আজাদ, দেখুন সবচেয়ে বড় খবর
02:37
Video thumbnail
SIR Issue | West Bengal | আতঙ্কের আগুন বাংলায়, ভোটার তালিকাসংশোধন শুরু অগাস্টে
05:18

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39