Monday, August 18, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: গুজরাত নির্বাচন- ২

Fourth Pillar: গুজরাত নির্বাচন- ২

Follow Us :

আমাদের বাংলায় অনেক বাবা-মা বেশ গর্বের সঙ্গেই বলেন, আমার ছেলে তৃণমূল করে, চওড়া হাসি। কিছুদিন আগে বাবা-মায়েরা তৃপ্তি পেত বলে, আমার ছেলে সিপিএম করে, ব্যস আর কী চাই? আদর্শ ইত্যাদি কিছু মধ্যবিত্ত ঘরে ছিল, বাবা মা সিপিএম, সেসব ঘরেও ছিল, সেসব বাবা-মারা ছেলেমেয়েকে ভাল স্কুলে পাঠিয়েছেন, রামকৃষ্ণ মিশনে পাঠিয়েছেন, কিন্তু প্রান্তিক সমাজে, নিম্ন মধ্যবিত্ত, গরিব মানুষজন রাজনীতির মধ্যেই পেয়েছেন অর্থনীতির রসদ। লাল ঝান্ডা থাকলে অটো দৌড়েছে, না থাকার প্রশ্নই নেই। জমানা পাল্টেছে, সব লাল ঝান্ডা ঘাসফুল হয়ে গেছে। শহরতলি থেকে গ্রাম, রাজনৈতিক বিভাজন খুব স্পষ্ট, কারণ সেই বিভাজনের ওপর নির্ভর করছে ভাল থাকা, মন্দ থাকা। যে ছেলেটি বাম জামানায় জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতের রাস্তা, কালভার্ট ইত্যাদির কনট্রাক্ট পেয়েছে, সে তার রাজনৈতিক আনুগত্য না বদলালে ভিটেয় ঘুঘু চরবে, সবাই জানে। আর এ খানিকটা নিউটনের তৃতীয় সূত্রের মতো, তোরা করেছিলিস, এখন আমরাও করব। গুজরাতে এসব নেই, শহরের এক্কেবারে বিচোবিচ রাজনৈতিক উত্তেজনা পাবেন কিন্তু নির্বাচনের এই ভরা মরসুমেও তেমন উত্তেজনা পাবেন না, কারণ ধান্দা, ব্যবসা। প্রত্যেকে ব্যস্ত রোজগারে, আর সেই রোজগার রাজনীতির ওপরে নির্ভরশীল নয়। অবশ্যই কোটি কোটি টাকার কনট্রাক্ট ইত্যাদিতে রাজনীতি আছে, থাকবেও। কিন্তু পাড়ার মোড়ে দু’জন বন্ধুর একজন অনায়াসে বিজেপি, অন্যজন কংগ্রেস হতেই পারে। বহু কংগ্রেস ভোটার আছে যারা বিধানসভায় কংগ্রেসকে ভোট দেয়, কিন্তু লোকসভায় মোদিজি, কারণ গুজরাতি অস্মিতা, আদর্শ গেছে গরু চরাতে। দেওয়াল লিখন, পথসভা ইত্যাদি নেই, র‍্যালি আছে, গাড়িতে চড়ে মাইক ফুঁকতে ফুঁকতে নেতা, মন্ত্রী, প্রার্থী যাবে, দোকানদার জিনিসপত্র ওজন করতে করতেই আড়চোখে দেখে নেবে, কেউ কেউ রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াবে, তার মানে এমনটাও নয় যে সে ওই দলের সমর্থক। রাজনৈতিক মেরুকরণে এক প্রবল অনীহা আছে গুজরাতবাসীদের, আজ থেকে নয়, বহুদিনের। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস খুলুন, গান্ধী, জিন্না, প্যাটেল তিনজনেই গুজরাতের কিন্তু আম গুজরাতবাসী চুটিয়ে ব্যবসা করেছে তখনও। সব থেকে কম ধরপাকড়, সবচেয়ে কম জেল ভরো হয়েছে ওই গুজরাতে, সহিংস আন্দোলন তো বাদই দিন। ধান্দা শব্দটা বাংলায় অশ্লীল, গুজরাতে প্রাণ, কোই ধন্দা ছোটা নহি হোতা, আউর ধন্দে সে বড়া কই ধরম নহি হোতা। পাকিস্তান থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করে কে? গৌতম আদানি। এটাই গুজরাত। এটা মোদি–শাহ বুঝেছিলেন বহু আগে, তাই তাঁরা গুজরাতের রাজনীতিতে কংগ্রেস–বিজেপি মেরুকরণ করার চেষ্টাও করেননি, তাঁরা হিন্দু মুসলমান মেরুকরণ করেছিলেন। কংগ্রেস নয়, মুসলমানদের ভিলেন বানিয়েছিলেন আর জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ওই কংগ্রেস হল মুসলমানদের দল, ২০০২ ছিল তাদের ফাইনাল সলিউশনের লড়াই। না, তারপর থেকে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা তো দূরস্থান, কাজিয়াও হয়নি, হয়নি কারণ গুজরাতে থাকতেই হবে এমন মুসলমানরা বুঝে গিয়েছিলেন ১) রাজনীতিতে তাদের ভাগেদারি বন্ধ। ২) চুপচাপ ধান্দা চালিয়ে যাও, মাথা নিচু করে থাকো, বেঁচে থাকার নিয়ম এটাই। আজ বিজেপির কাছে সমস্যা হল গুজরাতে না কংগ্রেস, না মুসলমান কেউই তাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নেই। অমিত শাহ মনে করিয়ে দিতে চাইছেন ২০০২-এর কথা, কিন্তু তা মনে করার কোনও তাগিদ বোধ করছে না গুজরাতের হিন্দু সমাজ, কারণ এমনকী তাদের অনুমতি ছাড়া মুসলমান সংগঠন মহরমের তাজিয়া বের করে না। এদিকে বিজেপির রাজনীতি দলের এবং ধর্মের তীব্র মেরুকরণের ওপরই নির্ভরশীল, কাজেই এবারের নির্বাচনে গুজরাতে বিজেপির প্রথম সমস্যা হল দলীয় বা ধর্মীয় মেরুকরণ না থাকা, গত ২৪ বছর ধরে ক্ষমতায় বিজেপি, নতুন প্রজন্ম হিন্দু মুসলমান বা কং-বিজেপি মেরুকরণ দেখেনি এটাই বিজেপির কাছে সবথেকে বড় সমস্যা। কাজেই বিজেপিকে বিকাশ বা উন্নয়নের হিসেব দিতে হচ্ছে, যা বড্ড নড়বড়ে। ফলে চাকরি, শিক্ষা, বিদ্যুৎ এমনকী রাস্তাঘাটের ইস্যু সামনে এসে যাচ্ছে যা নির্বাচনকে খুব স্থানীয় করে তুলেছে, এখানেও বিজেপি সমস্যার মুখোমুখি। কিন্তু বিজেপির আছে এক বিরাট ক্যাডার বাহিনী, আছে প্রচুর পয়সা, আর আছে নরেন্দ্র মোদির মুখ, এবারের নির্বাচনে এই দিয়েই তাদের উতরোতে হবে। 
এবার চলুন কংগ্রেসের কথা বলা যাক। রাহুল গান্ধী মহারাষ্ট্রে পদযাত্রা করবেন আর গুজরাতে তার ভিডিও দেখিয়ে প্রচার হবে, তা সম্ভব নয়, কাজেই রাজ্য জুড়ে কংগ্রেসের তেমন মুখের বড্ড অভাব। আর পয়সার অভাব তো আছেই, ক্ষমতার থেকে ২৪ বছর বাইরে থাকা একটা দলের অবস্থা যা হওয়ার তাই হয়েছে, এমএলএদের নিজেদের পয়সায় লড়তে হচ্ছে, জিগনেশ মেওয়ানি, পরিচিত মুখ, কাজেই তিনি ক্রাউড ফান্ডিং-এর আবেদন করেছেন, পাচ্ছেনও, বাকিদের অবস্থা খুব খারাপ। যার ফল চোখের সামনে, কংগ্রেস নির্বাচনের ময়দানে আছে বলেও বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু কংগ্রেসের পক্ষে ইস্যু আছে, মানুষ রাজ্য সরকারের কাজে খুশি তো নয়ই, বরং ক্ষুব্ধ। তার ওপরে বেকারত্ব মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে দিশেহারা করে তুলেছে, গ্রামীণ গুজরাতে আজও কৃষিই ভরসা, সারের দাম বেড়েছে, ডিজেলের দাম বেড়েছে, কার্পাস, বাদামের সাপোর্ট প্রাইস বাড়েনি, এসব কংগ্রেসের পক্ষেই যাবে, স্থানীয়ভাবে স্কুল, রাস্তা, বিদ্যুৎ নিয়েও সরব কংগ্রেস প্রার্থীরা, বিপাকে বিজেপি। মোদ্দা কথা হল, কংগ্রেসের ভরসা মানুষের ক্ষোভ, সরকারের বিরুদ্ধে অ্যান্টি ইনকমব্যান্সি। কংগ্রেসের অসুবিধে হল প্রচারের মুখ না থাকা, টাকাপয়সার অভাব, আর শহরে আপ-এর উঠে আসা। 
এবার আসি আপ-এর কথায়। এক বছর আগে মিউনিসিপালিটি নির্বাচনে সুরাত, রাজকোট ইত্যাদি জায়গায় কিছু আসন পেয়েছে আপ, আর দিল্লির সরকার, পঞ্জাবের বিরাট জয়, এটাই আপ-এর ভরসা। আপ দিল্লির শিক্ষা বা স্কুলের কথা বলছে, দিল্লি মডেলের কথা বলছে, শহরের যুবক যুবতীরা মাথায় টুপি পরে আপ-এর হয়ে রাস্তায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় জবরদস্ত প্রচার, সব মিলিয়ে নতুন স্টার্ট আপ যেমন হয়। বেশ নজর কেড়েছে, কিন্তু গুজরাতের মানুষ এখনও এটা মনে করছে না যে আপ সরকার তৈরি করতে পারবে। এবারে ১৮-২০ শতাংশ ভোট পেলে অবশ্যই পরের নির্বাচনে মানুষ সেটা ভাবতেই পারে, কিন্তু এবারেই সে চিন্তা ভাবনা আনুষের মাথায় নেই। আপ-এর আরেকটা সুবিধে হল কংগ্রেসের মতো মুসলমান প্রেম আছে বা হিন্দু বিদ্বেষী, এমন কথাও বলা যাচ্ছে না। বিলকিস বানোর গণধর্ষণে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়া হল, কেজরিওয়াল সযত্নে এই ইস্যু এড়িয়ে গেছেন, একটা কথাও বলেননি। উলটে বলেছেন টাকায় লক্ষ্মী গণেশের ছবি ছাপা হোক, প্রস্তাবে বিজেপিও অবাক। সব মিলিয়ে ওই আর্বান নকশাল ইত্যাদি কিছু কথা বলা ছাড়া আপ-এর বিরুদ্ধে বিজেপির তেমন কিছু বলার নেই, এটাই আপ-এর সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। কিন্তু আপ-এর অসুবিধে হল তাদের আর্বান অ্যাপ্রোচ, শহুরেপনা, তাদের কথা গ্রামের মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার মতো নেতা তাদের নেই। যদিও আপ কিন্তু ট্রাইবাল এলাকায় কিছুটা হলেও পা ফেলতে পেরেছে। আপ-এর সবথেকে অসুবিধে হল গুজরাতে তাদের এক্কেবারে নতুন পা ফেলা, এখনও মানুষকে এটা বিশ্বাস করাতে তারা পারেনি যে, আপ গুজরাতে সরকার তৈরি করতে পারে। আজকের গুজরাত গ্রাম আর শহরে আড়াআড়িভাবে বিভক্ত, রাজনৈতিক মেরুকরণ যেমন নেই, হিন্দু মুসলমান মেরুকরণও নেই। আজকের গুজরাত গুড গভর্নেন্স চাইছে, পারফরম্যান্স চাইছে, চাইছে শিক্ষা, চাকরি, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, কৃষকরা সস্তায় সার চাইছে, কার্পাস, বাদামের সাপোর্ট প্রাইস চাইছে। ২০০২-এর পরে মোদিজির আমলে শুরুয়াতি কাজ ছিল চোখে পড়ার মতো, এখন তা পাতে দেওয়ার মতোও নয়। তাই দুজনের নাম এই নির্বাচনের প্রসঙ্গে এসেই যাচ্ছে, একজন কুতুবুদ্দিন আনসারি, ২০০২-এ হাতজোড় করে বাঁচতে চাওয়ার আকুতি নিয়ে সেই যুবক, তিনি সজোরেই বলে যাচ্ছেন, মুসলমানরা এখনও ভীত, সন্ত্রস্ত, তাদের মাথা তুলে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও কেড়ে নিয়েছেন মোদিজি। অন্য মুখ উগ্র হিন্দুত্বের, মাথায় ফেট্টি, হাতে রড, মুখে ক্রূর চিৎকার, অশোক পারমারের, সেদিন দাঙ্গায় নেমেছিলেন জয় শ্রীরাম বলে, আজ ফুটপাথে মুচি, জুতো সারাচ্ছেন। সাফ জানালেন, দাঙ্গা থেকে যা ফায়দা তোলার সে তো মোদিজি তুলেছেন, তিনি গুজরাত থেকে দিল্লি গিয়েছেন, আমরা তো ফুটপাথেই পড়ে আছি। তাঁর কথায়, গরিব মানুষ, দলিত, আদিবাসী আর মুসলমান গুজরাতে সবথেকে অবহেলিত। সেদিন দাঙ্গায় নামিয়েছিল মানুষকে আজ তারা আমার দিকে তাকিয়েও দেখে না, সেদিন আমি ছিলাম হিন্দুত্বের পোস্টার বয়, আজ আমি ফুটপাথে কারণ আমি দলিত, আমি গরিব, কাজ ফুরিয়ে গেছে, আজ ওরা একজন দলিতকে হিন্দুত্বের পোস্টার বয় বানাবে কেন? ২০০২-এর দাঙ্গায় যাদের ঘর জ্বলেছিল, তাদের প্রতিনিধি কুতুবুদ্দিন, যারা সেদিন ঘর জ্বালিয়েছিল, তাদের প্রতিনিধি অশোক পারমার দুজনেই ফুটপাথে, এটাই আপাতত গুজরাতের ছবি।   

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Good Morning Kolkata | সকালের গুরুত্বপূর্ণ খবর, দেখুন একনজরে সরাসরি
03:42:56
Video thumbnail
Tejashwi Yadav | Narendra Modi | চুনা VS খৈনি মে চুনা, মোদি VS তেজস্বী, এই ভিডিও না দেখলে মিস
09:17
Video thumbnail
Stadium Bulletin | মরসুম তাহলে ইস্টবেঙ্গলের?
23:02
Video thumbnail
Ek Brishti Raate | 'এক বৃষ্টির রাতে'-র টিজার রিলিজ
01:52
Video thumbnail
Vote Adhikar Yatra | ভারত জোড়ো যাত্রার পর বিহারে রাহুল-তেজস্বী জুটির ভোট অধিকার যাত্রা
00:00
Video thumbnail
Election Commission | বিহারে বাদ যাওয়া নামের তালিকা প্রকাশ করল কমিশন, কী হতে পারে এবার?
02:44
Video thumbnail
SSC | SSC-তে স/কে/ট বো/মা, ভাইরাল অডিও ক্লিপে তোলপাড় রাজ্য, কী হতে চলেছে? দেখুন বিশেষ আপডেট
00:00
Video thumbnail
Vote Adhikar Yatra | ভারত জোড়ো যাত্রার পর বিহারে রাহুল-তেজস্বী জুটির ভোট অধিকার যাত্রা
05:13
Video thumbnail
SSC | SSC-তে স/কে/ট বো/মা, ভাইরাল অডিও ক্লিপে তোলপাড় রাজ্য, কী হতে চলেছে? দেখুন বিশেষ আপডেট
06:46
Video thumbnail
Durand Cup | Derby | ৭৫০ দিন পর ডার্বি জয়ের মুখ দেখল ইস্টবেঙ্গল, মাঝে সবই মোহনবাগান
07:05