এটিকে মোহনবাগান–২ এফ সি গোয়া–১
(দিমিত্রি পেত্রাতোস, হুগো বুমো) (আনোয়ার আলি)
বছরের শৈষ ম্যাচে
এটিকে মোহনবাগান—২ এফ সি গোয়া–১
(দিমিত্রি পেত্রাতোস, হুগো বুমো) (আনোয়ার আলি)
বছরের শেষ ম্যাচে জয়ের সরণিতে ফিরল এটিকে মোহনবাগান। আগের ম্যাচে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের কাছে অপ্রত্যাশিত হারের পর এই ম্যাচে না জিতলে বাগানের সমর্থকদের কাছে তা হত অত্যন্ত বেদনার। কিন্তু জুয়ান ফেরান্দোর ছেলেরা যেন প্রতিজ্ঞা করে নেমেছিলেন কোনও ভাবেই পয়েন্ট মাঠে ফেলে আসা যাবে না। তাই শুরু থেকেই দাপিয়ে খেলে মোহনবাগান জয় ছিনিয়ে নিল। ভাগ্য আরও একটু সুপ্রসন্ন হলে তারা ম্যাচটা আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারত। শেষ দিকে ফাঁকা গোলে বল রাখতে পারেননি আশিক কুরুনিয়ন। আবার ভাগ্য সাথ দেয়নি গোয়াকেও। এডু বেদিয়ার ফ্রি কিকে আনোয়ার আলির ফ্লিক বিশাল কাইথকে হার মানিয়ে বারে লেগে ফিরে আসে। তবে ম্যাচ কখনও বাগান ফুটবলারদের হাতছাড়া হয়নি। যে টিমের কাছে প্রথম লেগে ০-৩ গোলে হেরে এসেছিল মোহনবাগান সেই টিমকে নিজেদের মাঠে পেয়ে ভাল করেই শোধ তুলল ফেরান্দোর ছেলেরা। অবশ্য এই সল্ট লেক স্টেডিয়াম গোয়ার কাছে একেবারেই পয়মন্ত নয়। আটটা ম্যাচ খেলে তারা হারল সাতটাতেই। অবশ্য এ সবই খেলার অঙ্গ। বুধসন্ধ্যার ম্যাচের হিরো দিমিত্রি পেত্রাতোস। নিজে গোল করছেন। বুমোকে দিয়ে গোল করিয়েছেন। তাঁকে ছাড়া আর কাকেই বা ম্যাচের সেরা বাছা যেত ? সব মিলিয়ে বারো ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান আবার পয়েন্ট তালিকায় উঠে এল তিন নম্বরে। সমসংখ্যক ম্যাচে ১৯ পয়েন্টে গোয়া রয়ে গেল পাঁচ নম্বরেই।
বাগান কোচ ইদানিং অনুযোগ করছিলেন তাঁর টিমে সুস্থ প্লেয়ারের সংখ্যা ১৭-১৮ জনের বেশি নয়। তবে এদিন তিনি চার বিদেশি নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন। হুগো বুমো ঘাড়ের ব্যথা সারিয়ে ছিলেন শুরু থেকেই। আপ ফ্রন্টে দিমিত্রি, বুমো আর লিস্টন কোলাসো। ফেরান্দো এক সময় গোয়ার কোচ ছিলেন। ভাল করেই জানেন গোয়া মাঝ মাঠ নির্ভর ফুটবল খেলে। তাই এদিন তিনি ৪-৩-৩-এর পরিবর্তে ৩-৪-৩ ছকে খেলতে শুরু করেন। মাঝ মাঠের চার প্রহরী ছিলেন আশিস রাই, কার্ল ম্যাকহিউ, প্রণয় হালদার এবং আশিক কুরুনিয়ন। এদের মধ্যে প্রণয় বহু দিন পরে মাঠে নামলেন। এক সময় ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে খেলেছেন। বহু দিন পরে নামায় একটু জড়তা ছিল। পরের দিকে অবশ্য মানিয়ে নিয়েছেন। তিন ডিফেন্ডার ছিলেন প্রীতম কোটাল, ব্রেন্ডন হামিল এবং শুভাশিস বসু। নর্থ ইস্ট ম্যাচে তাঁর সামনে থেকে বিপক্ষের স্ট্রাইকার হেড করে গোল করেছিলেন। এর জন্য যারপরনাই সমালোচিত হয়েছেন প্রীতম। এদিন কিন্তু বাগান অধিনায়ক কোনও ভুল করেননি। তবে নয় মিনিটের মধ্যে গোল খেয়ে গোয়া কিন্তু আস্তে আস্তে মাঝ মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে। এডু বেদিয়া, ব্রেন্ডন, গ্লেন মার্টিন্সরা একটার পর একটা মুভমেন্টে বাগান মিডফিল্ডকে হারিয়ে চলে যাচ্ছিলেন পেনিট্রেটিভ জোনে। কিন্তু তাদের ফরোয়ার্ডদের মধ্যে তেমন ভেদশক্তি ছিল না। বা বলা যেতে পারে প্রীতমরা তাদের ফণা তুলতে দেয়নি। তাই গোয়ার মাঝ মাঠের সুপ্রিমেসি গোলে পরিণত হয়নি।
৯ মিনিটের মধ্যে গোল পেয়ে যায় মোহনবাগান। দিমিত্রি পেত্রাতোস দুর্দান্ত গোল করেন। মাঝ মাঠ থেকে একটা বল উড়ে এল তাঁর কাছে। একটু দৌড়েই বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের দুর্দান্ত ভলিতে তিনি গোল করলেন। ধীরাজ সিং প্রথম পোস্টে থেকেও বলটা ধরতে পারলেন না। শটে এত জোর ছিল যে ধীরাজ কিছু করতে পারেননি। গোলটা গোয়া শোধ করল ২৫ মিনিটে। এডু বেদিয়া আই এস এল-এর অন্যতম সেরা সেট পিস প্লেয়ার। চমৎকার ফ্রি কিক নেন। বক্সের অনেক বাইরে থেকে নেওয়া তাঁর ফ্রি কিকে ডান পা ছুঁইয়ে গোল করে গেলেন সেন্টার ব্যাক আনোয়ার আলি। অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্ব কাপে ভারতের সদস্য ছিলেন এই ধীরাজ এবং আনোয়ার। কিন্তু পাঁচ বছরে আনোয়ার নিজেকে যতটা উচ্চতায় নিয়ে গৈচেন ধীরাজ সেটা পারেননি। আনোয়ার তাই ভারতের সিনিয়র টিমের সদস্য। ধীরাজ এখনও শুধুই আই এস এল প্লেয়ার। গোল শোধের পর গোয়া তাদের আক্রমণের ধার বাড়ায়। কিন্তু গোল করার লোক ছিল না। তাই গোল করতে পারেনি।
বিরতির পর মিনিট সাতেক যেতে না যেতেই মোহনবাগান গোল করে ফেলে। এবার আশিস রাই বল বাড়ান দিমিত্রিকে। খানিকটা ধরে সব দিক দেখে দিমিত্রি বলটা বাড়ান ফাঁকায় দাঁড়ানো বুমোকে। ধীরাজ তখন গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। ফাঁকা গোলে গোল করতে অসুবিধে হয়নি বুমোর। মোহনবাগানের পরের ম্যাচ ১৪ জানুয়ারি। ঘরের মাঠে সেদিন মোহনবাগান খেলবে মুম্বই সিটি এফ সি-র সঙ্গে। এই বিরতিতে তারা পোগবা এবং কাউকোর পরিবর্ত খুঁজে পাবে নিশ্চয়ই। নতুন বছরে নতুন বিদেশিদের নিয়ে মোহনবাগন খেমন খেলে তার অপেক্ষায় রইল সমর্থকরা। আপাতত তারা বর্ষশেষের জয়ের আনন্দ উপভোগ করুক।