মনে আছে সেই শেখ শাহজাহানের কথা, গোটা সন্দেশখালির মহিলাদের যিনি নাকি মাঝরাতে পিঠে বানানোর জন্য দলের দফতরে নিয়ে আসতেন? হ্যাঁ, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে সেটা ইস্যু হয়েছিল বলা উচিত নয়, কিন্তু সেটাকেই ইস্যু করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছিল বেতনভুক সংবাদমাধ্যম আর অবশ্যই বিজেপি নেতারা, নেতৃত্বে শুভেন্দু অধিকারী। খাস বাংলার এক গ্রামে অনর্গল হিন্দি বলার মতো এক মহিলাও খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, সেই রেখা পাত্রকে ফোন করেছিলেন সেই নেতা যিনি সম্ভবত মবড হয়ে যাওয়ার ভয়েই মণিপুরে যাওয়ার সাহস কুলিয়ে উঠতে পারেননি। নরেন্দ্র মোদি ফোন করেছিলেন, সিবিআই এসেছিল আর এনআইএ-কে আনা হয়েছিল, যারা দেশের মধ্যেই পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পারে না। সেই সরকারের নির্দেশে এজেন্সি এখানে এসে রোবট চালাচ্ছিল, এদিক থেকে সেদিক, ভয়ঙ্কর আর্মস অ্যামুনেশন উদ্ধার করার জন্য। এঁটোকাঁটাতে পালিত ডালকুত্তার দল রব তুলেছিল সন্দেশখালি, মানে বসিরহাট তো গয়া, এর ধাক্কাতে ডায়মন্ডহারবারও না চলে যায়। ৫২.৭৬ শতাংশ ভোট পেয়ে বসিরহাটে জিতেছিল তৃণমূল আর ওই লোকসভা আসনে সেই হঠাৎ বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্র তার আগেরবারের চেয়ে ০.৭৫ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছিলেন। মানুষ ওই পিঠের গল্প বিশ্বাস করেনি, একদা সিপিএম বিধায়ক, পরে হেরে যাওয়া বিপ্লবী নিরাপদ সর্দার যিনি হেরে যাওয়ার পরে থাকেন টালিগঞ্জে, সেই তিনি পেয়েছিলেন ০.৩৪ শতাংশ ভোট। আপাতত সেই সন্দেশখালিতে নিরাপদ সর্দারকে মাঝেমধ্যে দেখা গেলেও, রেখা পাত্র? নিরুদ্দেশ। সেটাই বিষয় আজকে, সন্দেশখালি, নির্বাচনের আগে রেখা পাত্রও কি তৃণমূলে চলে আসতে পারেন?
বিশ্বাস করুন, নাম বলতে পারব না, পারব না কারণ তিনি এখনও শুভেন্দুর কাছের বৃত্তেই আছেন, এক শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা তখন বলেছিলেন, শুভেন্দু নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে বলেছে যে যেমন কুকুর, তেমন মুগুর, মমতার জন্য এই রেখা পাত্রই আমাদের ব্রহ্মাস্ত্র, শুধু মোদিজিকে দিয়ে একটা মিটিং করালেই এই আসন আমাদের হাতে, পাথরপ্রতিমা তো এসেই গেছে। মমতার মাজা ভেঙে যাবে। তিনি সত্যিই বলেছিলেন কি বলেননি আমি জানি না তবে কী হয়েছিল সেটা আমরা সবাই জানি।
আরও পড়ুন: Aajke | কালীগঞ্জে বিজেপি হারবে অন্তত ৫০ হাজার ভোটে
আর এটাও সেদিনই বলেছিলাম, ২০২৬-এর আগে ঘর গোছাবে তৃণমূল। সন্দেশখালিতে সেই বীরবাহা হাঁসদা, যাঁকে অপমান করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, তাঁকেই সামনে রেখে কড়া জবাব দিল তৃণমূল কংগ্রেস। ছিলেন রাজ্যের আর এক মন্ত্রী বসিরহাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুজিত বসু, সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতো সহ জেলা নেতৃত্ব। যে সভায় বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্রের ছায়াসঙ্গী লতিকা মিস্ত্রি-সহ সন্দেশখালিতে প্রথম আন্দোলনকারী সুদেষ্ণা দাস, সুজিত নস্করের পাশাপাশি ৩০০০ জন রবিবার তৃণমূলে যোগ দিলেন। তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিলেন মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা, বসিরহাট তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বুরাহনুল মুকাদ্দিম, চেয়ারম্যান সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। তাঁদের বক্তব্য বিজেপি যে প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের দিয়ে ভুল পথে নিয়ে গিয়েছিলেন। সন্দেশখালি কানমারী ভারত সেবা সংঘের মাঠে গত ৮ জুন সভা করেছিলেন শুভেন্দু। সেই সভায় এক নিখোঁজের ছবিতে তাঁকে ‘শহিদ’ বলে মালা দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। এখনও দেবদাস মণ্ডল নিখোঁজ কিন্তু তাঁকেই শহিদ আখ্যা দিয়ে চন্দন ধূপ দিয়ে মালা পরিয়ে সভা করা হয়। শুধু তাই নয়, যে রেখা পাত্রকে ‘শক্তি’ বলে আখ্যা দিয়ে ২০২৪-এ নির্বাচনী সভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী সেই রেখা পাত্রই হাজির ছিলেন না শুভেন্দুর সভায়। তাঁর নামও কেউ করেনি। বীরবাহা এদিনের সভায় বলেন, “আপনার ভুল করবেন না। বিজেপি বলছে ৩০০০ টাকা করে লক্ষ্মীর ভান্ডার দেবে। আগে সেটা বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে দিক, তার পরে পশ্চিমবাংলার কথা বলবেন।” সুজিত বসু বলেন, “যাঁরা বুঝতে পেরেছেন তাঁদের ভালো। তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁরা এসেছেন। ২৬-এর নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস আবারও সরকার গঠন করবে। বসিরহাট লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস সাতটি আসনের সাতটিই পাবে।” তৃণমূলে যোগ দেওয়া সুদেষ্ণা দাস ও লতিকা মিস্ত্রিরা বলেন, “রাজ্যের উন্নয়ন দিদিই করছে, বিজেপি মিথ্যে প্রলোভন দিয়ে যাচ্ছে।” এমনিতে তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি, বিজেপির ভেতরে খেয়োখেয়ি ইত্যাদির ফলে যত বিধানসভার নির্বাচন এগিয়ে আসবে তত এই যোগদানের হিড়িক বাড়বে, আবার এধার থেকে ওধারেও কি কিছু লোকজন যাবে না? যাবে। কিন্তু সন্দেশখালি তো যে কোনও একটা জায়গা নয়, এখানের প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী ফোন করেছেন, শক্তিরূপা ইত্যাদি বলে গ্যাস খাইয়েছেন, এবার সেই কেন্দ্রে এরকম এক অবস্থা তো অন্য ছবি তৈরি করবে। কিন্তু আমার খবর বলছে এখানেই শেষ নয়, এরপরে আরও মুখ পোড়ানো বাকি রয়েছে, নির্বাচনের আগে সেটা হবে, এখন স্রেফ ট্রেলার দেখলেন, নির্বাচনের আগে ফিল্ম রিলিজ হবে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, সন্দেশখালিতে রেখা পাত্রের গুরু থেকে বাম ডান হাত চলে এলেন তৃণমূলে, নির্বাচনের আগে রেখা পাত্রও কি তৃণমূলে চলে আসতে পারেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
এই বাংলার এক মহামানব খুব সাফ জানিয়েছিলেন, চালাকির দ্বারা মহৎ কাজ সম্পন্ন হয় না। কিন্তু সে কথা কাঁথি অবধি পৌঁছয়নি, সেই ২০২১ থেকে উনি চালাকিকেই নিজের একমাত্র অস্ত্র বানিয়ে ফেলেছেন। উনি একজন রেখা পাত্র, একটা মুর্শিদাবাদ, একটা মহেশতলা বা রামনবমীর মিছিল, কার্তিক মহারাজকে সামনে রেখে বাংলার গদিতে বসতে চান। বাংলার মানুষজন অত বোকা তো নয়, এটা তো বাংলার ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায়। এক দীর্ঘ স্বাধীনতার আন্দোলনের ঐতিহ্যকে সামনে রেখেই কংগ্রেস এসেছিল ক্ষমতায়, লাগাতার কৃষক শ্রমিক মধ্যবিত্তদের লড়াইকে সামনে রেখে ক্ষমতায় এসেছিলেন বামপন্থীরা, সাধারণ মানুষ, জমির লড়াই, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার এক দীর্ঘ লড়াইয়ের পরেই ক্ষমতায় এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর আমাদের কাঁথির খোকাবাবু ভাবছেন খানিক হিন্দু-মুসলমানের ধোঁয়া দেব, কটা মিথ্যে ছড়িয়েই দখল নেব বাংলা। হবে না দাদা, আপনি বরং ওই হাজি থেকে চর্বি ছাড়া রাংয়ের মাংস নিয়ে পেঁপে আলু দিয়ে পাতলা ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে ঘুমোন। আপনার ঘোষিত পিতার দম বেরিয়ে যাচ্ছে, আপনি তো শিশু মাত্র।