Tuesday, August 5, 2025
HomeআজকেAajke | পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই গাজর ঝোলানো হল, দেড় লক্ষ চাকরি

Aajke | পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই গাজর ঝোলানো হল, দেড় লক্ষ চাকরি

Follow Us :

দাদাঠাকুরের ছড়া মনে পড়ার কথা, আমারও মনে পড়ছে। মাছ কাটলে মুড়ো দেব, গাই বিয়োলে দুধ দেব, উড়কি ধানের মুড়কি দেব, আয়রে ভোটার আয়, ভোট দিয়ে যা। হ্যাঁ, ভোটের আগে ভোটপ্রার্থীদের কথাবার্তা খানিক এমনটাই হয়। ভোটের আগের বাজেট মানে আয়কর ছাড়, ভোটের আগে বাজেট মানে নতুন করে ট্যাক্স চাপানো নয়, ভোটের আগে বাজেট মানেই প্রকল্পের পরে প্রকল্প, শিলান্যাসের পরে শিলান্যাস। আগের শিলা পড়ে আছে, তার পাশেই সেই প্রকল্পের নতুন শিলা পুঁতে দেওয়া হল। এমনটা আজকের রেওয়াজ নয়, এ রেওয়াজ ভারি পুরনো। হঠাৎ বাড়ির সামনের রাস্তায় পিচ পড়ছে, রোড রোলারের ঘড়ঘড় আওয়াজ হচ্ছে মানে ভোট আসছে, এটা বোঝার জন্য খুব বেশি বুদ্ধি খরচ করতে হয় না। সেই উদ্বোধন আর প্রতিশ্রুতি বিলানোকে এক শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাজ্যে নির্বাচন? মাস পাঁচেক আগে থেকে মোদিজি প্রায় ডেলি প্যাসেঞ্জারের মতো যাওয়া আসা শুরু করবেন, রাস্তা, ট্রেন, বাস, স্টেডিয়াম, জল পরিবহন যা হয় কিছু একটা হলেই হল, মোদিজি যাবেন, বক্তৃতায় বলবেন এই তো স্বাধীনতার পরে প্রথম বিকাশ হচ্ছে। তারপরে সেই সব প্রকল্পের কথা যা উবে গেছে কবেই, যেমন উজ্জ্বলা যোজনায় ফ্রি গ্যাস সিলিন্ডারের গপ্পো। তারপর আরও কিছু প্রতিশ্রুতি, দিল্লি ফিরে যাওয়া আবার সাতসকালে হাজির হওয়া। নতুন আরেক পদ্ধতি হল, যেদিন ভোট, সেদিন মোদিজি লাগোয়া কোনও রাজ্যে যাবেন সাতসকালে, নতুন প্রকল্পের উদ্বোধনে, ওধারে ভোট চলছে, এধারে টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর বিকাশের বাওয়াল। এবং এতটা বলার পরে বলে রাখি, এ শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, বিজেপি নয়, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের একই চেহারা, বিজেপির টা বিশাল, অন্যদেরটা বহরে ছোট। কিন্তু গাজর ঝোলানোর পদ্ধতিটা একইরকম। আমাদের রাজ্যেও দেড় লক্ষ চাকরির ঘোষণা হয়ে গেল। সেটাও কি তাহলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে খুড়োর কলের সামনে ঝোলানো গাজর? সেটাই বিষয় আজকে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই গাজর ঝোলানো হল। দেড় লক্ষ চাকরি।

এবার বিষয়টাকে একটু অন্য দিক থেকে দেখা যাক। নির্বাচনের সেকালের সঙ্গে একালের মোদ্দা দুটো পরিবর্তন ঘটে গেছে। প্রথমটা হল কেবল লোকসভা বিধানসভাই নয়, গুরুত্ব বেড়েছে মিউনিসিপ্যালিটি, কর্পোরেশন ব ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের নির্বাচনেও। এবং তা কোনওভাবেই ওই লোকসভা বা বিধানসভার মতোই সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। একই তীব্রতায় প্রচার হচ্ছে, নেতারা মাঠে ময়দানে চক্কর দিচ্ছেন। আর এরই লাগোয়া দ্বিতীয় পরিবর্তন হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমের উপস্থিতি, খবরের কাগজ, টিভি চ্যানেলের সঙ্গেই হাজারটা ওয়েব পোর্টাল, ইউটিউব চ্যানেল সেই নির্বাচন কভার করছে। তাহলে দাঁড়াল কী? প্রায় প্রতিবছর কোনও না কোনও নির্বাচন চলছে, প্রচার হচ্ছে আর সব প্রচারের রেকর্ড থেকে যাচ্ছে অসংখ্য গণমাধ্যমে। মাছ কাটলে মুড়ো দেব বলার পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে থাকবে, কই দাদা, কই দিদি কবে দেবেন? নরেন্দ্র মোদি যেখানেই যান, ওনার সেই পন্দ্রহ পন্দ্রহ লাখ ওনার পিছু ছাড়েনি এখনও। কাজেই গাজরই ঝোলান, মুলোই ঝোলান, বাতাসাই ঝোলান বা বিরিয়ানি, মানুষ কিন্তু মিলিয়ে নেবে। কাজেই প্রতিশ্রুতি যেমন আসছে, তেমনই সেই প্রতিশ্রুতি কতটা রাখা হল, ঘর দেবেন বলেছিলেন, ক’টা ঘর দিলেন? চাকরি দেবেন বলেছিলেন? কটা চাকরি দিলেন? মানুষ কিন্তু মিলিয়ে নিতে শিখে গেছে। নরেন্দ্র মোদিও বুঝেছেন সে কথা, ইদানিং ওনার প্রতিশ্রুতির বহর কমেছে। 

আরও পড়ুন: Aajke | হাসপাতাল নাকি নরক? 

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোঝেননি? বেশিই বুঝেছেন, এ চাকরি বেশ কিছু বছরের জমে থাকা শূন্যপদের যোগফল, চালাকিটা কেবল সময়ের। হ্যাঁ, সময়টা বেছে নিয়েছেন, সামনেই পঞ্চায়েত ভোট, গ্রাম বাংলার লক্ষ লক্ষ বেকারের নজর থাকবে এই চাকরির দিকে। পেলে হাততালি, না পেলে পরেরবার এ চালাকি কাজে দেবে না। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী এই প্রথম প্রতিশ্রুতি দিলেন, এমনও তো নয়। তাহলে আসুন না, তৃণমূল সুপ্রিমো তেনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য কাজ করেন কি না তা জেনে নেওয়া যাক মানুষের কাছ থেকে। আমরা সাধারণ মানুষকে প্রশ্ন করেছিলাম, বর্তমান রাজ্য সরকার যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলোর কতটা পূরণ করেছে? যা করেছে, তাতে আপনারা খুশি না অখুশি? আসুন শুনে নিই মানুষের মতামত।

ইয়ে পাবলিক হ্যায় ইয়ে সব জানতি হ্যায়, সেই জনগণ আজ এই ৩৬০ ডিগ্রি মিডিয়া এক্সপোজারের মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকটা প্রতিশ্রুতিকে মেপে নেবেন এটাই স্বাভাবিক। এরপরেও যাঁরা মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তাঁরা খালি কর্নাটকের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে দেখুন। ইতিমধ্যেই কর্নাটকের মানুষ পাচ্ছেন ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ফ্রি, মহিলার পাচ্ছেন দেড় হাজার টাকা, বেকাররা বেকার ভাতা, হ্যাঁ, প্রতিশ্রুতি দিলে হাতে গরম তা দিতেও হবে। তাই খেপে খেপে দেড় লক্ষ শূন্যপদের ঘোষণার বদলে ঠিক নির্বাচনের আগেই চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়াকে আমরা বেনিফিট অফ ডাউট দেব, কিন্তু নজর রাখব সে প্রতিশ্রুতি পূরণ হয় কি না তার দিকে।

RELATED ARTICLES

Most Popular


Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39