বার্মিংহ্যাম: ৭৮ ওভারে ৩৯৩ রান। ওভারপ্রতি গড় ৫.০৩। জ্যাক ক্রলি ৭৩ বলে ৬১, অলি পোপ ৪৪ বলে ৩১, জো রুট (Joe Root) ১৫২ বলে ১১৮, হ্যারি ব্রুক ৩৭ বলে ৩২, জনি বেয়ারস্টো ৭৮ বলে ৭৮ (Jonny Bairstow)। না, এগুলো কোনও সাদা বলের ম্যাচের পরিসংখ্যান নয়, বরং টেস্ট ম্যাচের। দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে যেখানে রয়ে সয়ে, ধীরেসুস্থে, দেখেশুনে খেলাই দস্তুর সেখানে এরকম আগ্রাসনে খেলাই কি বাজবল ক্রিকেট (Bazball Cricket)?
না।
টেস্ট ম্যাচে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং আমরা আগেও দেখেছি। স্টিভ ওয়া কিংবা তার পরে রিকি পন্টিংয়ের (Ricky Ponting) নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া ওভার পিছু চার, সাড়ে চার রান তুলত। কিংবা আমাদের বীরেন্দ্র সেওয়াগ! টেস্ট ম্যাচ খেলছেন নাকি টি২০ বোঝাই যেত না। যাঁর নামে বাজবল শব্দের উৎপত্তি সেই ব্রেন্ডন ম্যাককালামও (Brendon McCullum) আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতেন। কিন্তু টেস্ট ফর্ম্যাটে দ্রুত রান তোলাই বাজবল ক্রিকেট নয়।
বাজবল আসলে এক মানসিকতা। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা, পরিণতি কী হবে তা না ভেবে। সেটা ব্যাট হাতে হোক, বল হাতে হোক কিংবা ফিল্ড প্লেসিংয়ে। এমনকী কখন ইনিংস ডিক্লেয়ার করা হছে সেখানেও নিহিত রয়েছে এই বাজবল ক্রিকেটের দ্যোতনা।
আরও পড়ুন: Stadium Bulletin | মেসির বাঁ পা থেকে ঋদ্ধি ট্র্যাজেডি, সঙ্গে অ্যাশেজ এবং ৮৩ বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ
সদ্য টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে (WTC Final) চতুর্থ ইনিংসে ভারতের সামনে ৪৪৪ রানের টার্গেট দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ধারাভাষ্যকার এবং বিশেষজ্ঞরা বলাবলি করছিলেন, একটু দেরিই করে ফেলেছেন প্যাট কামিন্স (Pat Cummins)। পুরো প্রথম সেশন খেলে অস্ট্রেলিয়া। লাঞ্চের সময় রান ২০১, অর্থাৎ ৩৭৪ রানে এগিয়ে। কিন্তু তখনও ডিক্লেয়ার করলেন না কামিন্স। আরও বেশ খানিকটা সময় কাটিয়ে প্রায় চা বিরতিতে এল সেই ঘোষণা।
Anyone know what Rooty had for tea? ?
He RAMPS Scott Boland for six! ?
We’ll have what he’s having! ? #EnglandCricket | #Ashes pic.twitter.com/ajXQi3biYK
— England Cricket (@englandcricket) June 16, 2023
ভারত জঘন্য ব্যাটিং করে হেরে গিয়েছে তাই কোনও উচ্চবাচ্য হয়নি। কিন্তু একটু দেখেশুনে খেলে ম্যাচ ড্র করতে পারলেই তখন কামিন্সের সমালোচনা হত। ড্রয়ের দায় নিতে হত তাঁকেই। অজি অধিনায়ক আসলে ঝুঁকি নিতে চাননি। তিনি জেতা, হারা এবং ড্রয়ের মধ্যে থেকে হারের সম্ভাবনা নির্মূল করে দিয়েছিলেন।
এখানেই ভিন্ন প্রকৃতির ইংল্যান্ড। এজবাস্টনের পিচ ব্যাটিং স্বর্গ। সাধারণ বুদ্ধি বলে, প্রথম ইনিংসে যতটা সম্ভব রান করে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দাও। ৩৯৩ রানে ৮ উইকেট, ক্রিজে তখনও জো রুট, সাড়ে ৪৫০ করার প্রবল সম্ভাবনা। কিন্তু ডিক্লেয়ার করে দিলেন বেন স্টোকস (Ben Stokes)। সারাদিন ধরে ফিল্ডিং করে হত্যোদম হয়ে পড়া অজিদের শেষ চারটে ওভার ব্যাট করাতে নামালেন। চমক দিলেন। এই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে আঘাত করতে পারে ইংল্যান্ডকে। অস্ট্রেলিয়া যদি পাল্টা ৪৫০ করে তো চাপে পড়ে যাবে স্টোকসরা। তা জেনেও ঝুঁকি নিলেন তিনি। জেতা, হারা এবং ড্রয়ের মধ্যে থেকে ড্রয়ের সম্ভাবনা নির্মূল করে দিলেন। এটাই বাজবল ক্রিকেট।
প্রথাগত ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত রুট রিভার্স-স্কুপে ছয় মারলেন। ১৭৬ রানে পাঁচ উইকেট পড়ে গিয়েছে, স্টোকস ১ রান করে সাজঘরে। ওই সময় নেমে ৭৮ বলে ৭৮ করলেন বেয়ারস্টো। এটাই বাজবল ক্রিকেট। আজ ইংলিশদের বোলিং আক্রমণে, ফিল্ডিং প্লেসিংয়েও বাজবলের ছাপ দেখা যাবে, তা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। এবং একথা ম্যাচ শুরুর আগে বলে রেখেছেন অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটার স্টিভ স্মিথ (Steve Smith)।