দেবতাদের মধ্যে শিবের নাচার কিছু রেফারেন্স পাওয়া যায়, তাণ্ডব নৃত্য। একে তো তাঁর শ্বশুরমশাই দক্ষরাজ তাঁকে ডাকেননি, তিনি দেবাদিদেব, তার উপরে সেই লজ্জায় সতী যজ্ঞের আগুনে ঝাঁপ দিয়েছেন, এই খবর পেয়ে রুদ্র তাণ্ডব নৃত্য শুরু করলেন। ওদিকে কালীয় দমনের আগে কালীয় নাগের মাথায় চড়ে কৃষ্ণের নাচ আছে। আরও কিছু আছে কিন্তু সে সবই কিছু সময়ের জন্য, কিন্তু শনিদেব? তিনি প্রতিটা ক্ষণ, প্রতিটা পলে কারও না কারও কপালে নেচেই চলেছেন, আর সে জ্বালা যে কী জ্বালা বোঝে না আনজনে, যার কপালে নেচেছে সেই জানে, হ্যাঁ এরকমটাই ভাগ্যে বিশ্বাসীরা বলে থাকেন। সেই তাঁদের কথা অনুযায়ী শনি কখনও এর তো কখনও তার কপালে নেচে বেড়ান। কিন্তু সমস্যা হল তিনি সেই যে শুভেন্দুর কপালে নাচতে শুরু করেছেন, সে নাচ আর থামছে না। একের পর এক, গেরোর পরে গেরো, কেলোর পরে কেলো চলছে তো চলছে। শেষতম কেলো হল ওনার পেয়ারের বিচারক সাহেব শোকজ খেয়েছেন। কেন? কারণ তিনি হাজির ছিলেন না সংসদে, এক দেশ এক ভোট বিল প্লেস হবে, আগেভাগেই হুইপ জারি করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি হাজির ছিলেন না। অসুস্থতা হলেও মানা যেত, কোনও জরুরি ব্যাপার, কোনও দুর্ঘটনা হলেও মানা যেত, কিন্তু তিনি যেতে পারেননি কারণ তার আগের সন্ধেয় তিনি নাকি কোনও এক টিভি চ্যানেলের আলোচনা সভায় হাজিরা দিতে গিয়ে প্লেন মিস করেছেন। ব্যস, প্লেন উড়ে গেছে। এ তো সেই দিনকাল নয়, এজলাসে বসে হুকুম জারির দিন তো শেষ, কাজেই তিনি বিপাকে। কিন্তু শুধু কি তিনি? দিলু ঘোষ অ্যান্ড কোম্পানি এক্কেবারে উপরতলা পর্যন্ত সব জানিয়ে দিয়েছেন, এবং তার মূলে যে শুভেন্দু সে কথাও গুছিয়েই বলেছেন। আর সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, শুভেন্দুর কপালে শনি নাচছে।
মহাজ্ঞানী মহাজনেরা বলে গেছেন “খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে, কাল হলো এঁড়ে গরু কিনে।” এখন সামলাও। পরিবার সুদ্ধু মন্ত্রীসান্ত্রী, সাংসদ, হলদিয়া ডক থেকে কাঁথি দিঘা, ট্রলার মাছ ব্যবসা, সমবায় সমিতি, রসে বসেই কাটছিল শুভেন্দুবাবুর। হঠাৎ হেড আপিসের বড়বাবুর মতো খেপে উঠলেন। কী না মুখ্যমন্ত্রী হব। অনেকেই বুঝিয়েছিল ভাই সেটা হাতের মোয়া তো নয়, সবুর করো, ভেতরে বসেই চেষ্টা চালাও। একে তো মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার খোয়াব, তার উপরে জেলে ঢোকার ভয়, কাজেই তিনি অমিত শাহজিকে জানালেন, দল ভেঙে চৌপাট করে দেবেন, হরির নাম খাবলা খাবলা।
আরও পড়ুন: Aajke | দিদিমণি তো নবান্নেই আছেন, সেলিব্রিটিরা কোথায় উধাও হলেন?
অমিত শাহ স্লোগান দিলেন অবকি বার ২০০ পার। দল থেকে কুঁচো চিংড়ি, চারা পোনা কয়েকটা ভাঙানোর পরে ২০০ তো দূরস্থান ১০০-ও পার করতে পারলেন না, অমিত শাহজি বুঝলে,ন ভুল ঘোড়াতে দান ধরা হয়েছে। সেই কুঁচো চিংড়ি বা চারাপোনারাও আবার পপাত চ মমার চ হওয়ার পরে দিদিমণির কালীঘাটে হত্যে দিয়ে দিয়ে দিয়ে শেষমেশ দলে ফিরেছেন। শেষতম এন্ট্রি একদা সাংবাদিক প্রবীর ঘোষালের। এখন ওনার পাশে তৃণমূলের কে? কেউ নেই, হ্যাঁ যদি আপনি ছ্যাবলা তৃণমূলের কারোর কথা ভাবেন, তাহলে ঐ রুদ্রনীল অবশ্য এখনও আছেন, তবে ওনার যা ট্রাক রেকর্ড, যে কোনও মূহুর্তে বি এস পি বা আকালি দলেও চলে যেতে পারেন। সে পর্ব চোকার পরে এল ২০২৪, আমার ক্যান্ডিডেটদের দাঁড় করান, জিতিয়ে আনবো। নিজের ভাই আর এই কলুর গাধা বিচারক ছাড়া একজনের জয়ের পেছনে শুভেন্দুর হাত নেই বরং দিলীপ ঘোষের প্রায় নিশ্চিত আসনটা যে তৃণোমূলের কাছে গেছে তাতে ওনার বিরাট যোগদান আছে, অন্তত দিলীপ ঘোষ সেটা মনে কেবল করেন না, প্রকাশ্যেই বলেছেন ওনাকে কাঠি করা হয়েছে। লোকসভা ভোটের এই ডিব্যাকলের পরে মোদি শাহ আবার বুঝলেন খুবই পচা ঘোড়া, কী আর করা, অন্তত নিজের কাঁথি তমলুক নিয়েই থাকুক, দুটো আসন তো কম নয়। রাজ্যের নতুন সভাপতি নিয়ে ওনারা মাথা ঘামাতে লাগলেন, দিলীপ ঘোষকে নিয়ে অনেকটা কথা এগনোর পরে আবার মূলত এই কাঁথির খোকাবাবু আর তাঁর কিছু লোকজনের কথা শুনেই সেই প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু শনি তো কপাল থেকে নামেনি। কাঁথায় আগুন লাগল, সরি, কাঁথিতে আগুন লাগল, সমবায় সমিতির ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বাহিনী ইত্যাদি এনেও ১০৮-এ ৬? অমিত শাহ মনে মনে ভাবছেন, এটা কি হচ্ছে না করানো হচ্ছে? হ্যাঁ, দিলু ঘোষ লবি থেকে সেই কথাও ভাসানো হয়েছে, দলের মধ্যে থেকেই দলের গুষ্টির ষষ্ঠীপুজো করছেন আমাদের কাঁথির খোকাবাবু। মানে শনিদেব নেচেই যাচ্ছিল, এবারে প্রলয় নাচন, আর ঠিক সেই সময়ে আমাদের বামপন্থী বিজেপি এক্স বিচারপতি প্লেন মিস করলেন, হুইপ জারির পরেও গিয়ে উঠতে পারলেন না সংসদে। শোনা যাচ্ছে কাঁথির খোকাবাবু শনিদেবকে তুষ্ট করার জন্য নাকি কীসব পুজো-আচ্চা করছেন। তো আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শুভেন্দুর কাজকর্ম নিয়ে যখন বেশ বিরক্ত, তখন কাঁথি সমবায়ে বিরাট হার আর তারপরেই ওনার লোক বলে খ্যাত অভিজিৎ গাঙ্গুলির সংসদে না থাকা কি শুভেন্দুকে আরও বিপাকে ফেলল? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
আমার সঙ্গে শুভেন্দুবাবুর তেমন পরিচয় নেই, আর মহিলা দেখলেই ওনার একটা টাচ মি নট মনোবৃত্তি চাগাড় দেয়, যার জন্য আমি ওদিকে ঘেঁষতেই চাই না, আর আমাদের চ্যানেল? নাম শুনলেও ওনার গায়ে ফোসকা পড়ে, কাজেই আমাদের কোনও অ্যাডভাইস উনি নেবেন বলে মনে হয় না, কিন্তু তবুও দিয়ে রাখি ওনার শুভাকাঙ্ক্ষী কেউ যদি জানিয়ে দেন, ওই শনিদেবের নাচন থামানোর এক প্রকৃষ্ট উপায় আমার জানা আছে, চুপি চুপি জানিয়ে রাখি, কালীঘাটে চলে যান। বুঝেই ফেলেছেন, বুদ্ধিমানকে লিয়ে ইশারা কাফি হোতা হ্যায়, কিন্তু ওনার বুদ্ধির উপর ভরসা করবেন না, ডিটেইল বুঝিয়ে দেবেন কালীঘাটে কার কাছে গিয়ে কী পুজো দিলে ওই শনিদেব নাচা বন্ধ করবে। করবেই? গ্যারান্টি দিতে পারছি না, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারেন, এর আগে অনেকেই সেই চেষ্টা করেছেন।