এ ছিল জল মাপার খেলা, শুভেন্দুর নির্দেশে, শুভেন্দুর ব্যবস্থাপনায় এক নামগোত্রবিহীন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, নবান্ন অভিযান। আমরা প্রথম দিন থেকেই বলছিলাম এ আবার কেমন অভিযান যা কারা করবে সেটা খুঁজে বার করতে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। শেষমেশ যাদের পাওয়া গেল তারাই বা কারা? একজন বলছেন আমি শিক্ষক, কিন্তু আসলে আমি ছাত্র, আসলে ছাত্রও তো শিক্ষক বা শিক্ষকও তো ছাত্র হয়। আরে কেহনা কেয়া চাহতে হো? তারপরে একজনের পড়ার নমুনা হল ইতিহাসে এমবিএ, অনেকেই চমকে চোদ্দ, আমি চমকাইনি, কারণ এদেশের প্রধানমন্ত্রী এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স-এ মাস্টার্স করেছেন, এবং তারপরে বিএ-ও করেছেন। সেসব থাক, একজনের নামে ধর্ষণের অভিযোগ, আর একজন আরএসএস, কিন্তু তারা ছাত্রসমাজ। আমরা তখনই বলছিলাম যে এর পিছনে রহস্য আছে। রহস্য আরও বাড়ল, মানে বাড়ানো হল, লাশ পড়বে ইত্যাদি কথাবার্তায়, এবং কিছু উদো পাবলিক মাঠে নেমে ছাত্রসমাজের ডাকে নবান্ন চলো ডাইনি তাড়াওয়ের ডাক দিতে শুরু করলেন, কাজেই নিশ্চিন্তে আর থাকা গেল না রে তোপসে। কলকাতা পুলিশ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ আর একটা কেলেঙ্কারি থেকে বাঁচতে সর্বোচ্চ সিকিউরিটি ব্যবস্থা তৈরি করল, জলকামান, টিয়ার গ্যাস, বিরাট পুলিশ বাহিনী, ড্রোন উড়ছে আকাশে, চারিদিকে পুলিশ আর অসংখ্য সাংবাদিক। তাঁরা আসবেন, তাঁরা আসবেন, ওই আসছেন, ওই আসছেন করতে করতে বেলা ১টা থেকে এখানে ৫০০ ওখানে হাজার, সেখানে হাজার তিন, সব মিলিয়ে সাকুল্যে হাজার ১৫ হবে? মনে হয় না। তারা এল, উসকানি দিল, পুলিশ ওই জলকামান, টিয়ার গ্যাস, আর হালকা লাঠি দিয়েই সামলেছে, কিন্তু সিনেমার ভাষাতে যাকে বলে ফ্লপ শো, সেটাই বিষয় আজকে, শুভেন্দুর সুপার ফ্লপ নবান্ন অভিযান!
কেন শুভেন্দু এই কাজটা করলেন? কারণ উনি দলকে দেখাতে চাইছিলেন, সুকান্তকে দেখাতে চাইছিলেন, মানুষ উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে, সামান্য টাকা দিলেই পিলপিল করে মানুষ বেরিয়ে আসবে আর তারপর তিনি আশেপাশেই থাকবেন। দু’ তিনটে লাশ পড়লে এতদিনের লালিত পালিত ইচ্ছে পূরণের স্বপ্ন ছিল তাঁর দু’ চোখে। তিনি দলকে নিয়ে চলতে পারেন না, ওটা তাঁর কুষ্ঠিতে নেই, তিনি চিরদিনই এক এলাকার নেতা, দল মমতার, সংগঠন মমতার, উনি এলাকার নেতা। কিন্তু ওই যে ইঁদুর হইতে বাঘ হইবার পরে ইঁদুরের বাঘ যিনি করিয়াছিলেন তাঁকে খাবার শখ হয়, উনিও সেটাই করতে গিয়েছিলেন। দলের মাথায় বাকিরা মুখ টিপে হাসছিলেন, এখন তো এই রগড় দেখে হো হো করে হাসছেন।
আরও পড়ুন: Aajke | যে দলের শিরদাঁড়ায় নিজেদের নামে একটা নবান্ন অভিযান করার ধক নেই, তারা নেমেছে মমতার বিরুদ্ধে!
শুভেন্দু ভেবেছিলেন মেঘনাদের মতো মেঘের আড়াল থেকে ছাত্রসমাজের নাম করে আবেগটাকে উসকে দিয়ে লন্ডভন্ড করে ছাড়বেন, সব কৃতিত্ব তখন তেনার। বেলা ১২টাতেই বুজে ফেলেছেন সব ডুবেছে, এখন অন্য গান গাইছেন, সামান্য ক’জন ছাত্রের ডাকা বনধে মমতা এত ভয় পেয়েছেন, তা হলে আমরা নামলে করবে কী? আগ বাড়িয়েই বললেন, আমরা তো বলেই দিয়েছিলাম, আমরা এই আন্দোলনের পিছনে নেই, কিন্তু বিরোধী নেতা হিসেবে এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলাম। কতগুলো অপরিণত ছেলেমেয়ে, প্রৌঢ়, কিছু মানুষকে মাঠে নামিয়ে উনি এই আন্দোলনকে উলটে হাস্যকর করে তুললেন। কারা এরা, ছাত্রসমাজ ডাক দিল, ছাত্ররা কই? অন্যরা আসবেন, আসুন, কিন্তু ছাত্ররা কই, দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হবে। এবং যথেষ্ট সংখ্যা না থাকার ফলে একবার এখানে একবার ওখানে, ঘোরাফেরা করে সাড়ে তিনটে, মানে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে নবান্ন অভিযানের ইতি হয়ে গেল। সক্কাল থেকে মানুষ চোখ রেখেছিল এই নবান্ন অভিযানের দিকে, এক সুপার ফ্লপ শো শেষ পর্যন্ত বুঝিয়ে দিল যে এখনও এই বাংলার প্রধান বিরোধী দল এবং বিধানসভাতে তাদের নেতা নেহাতই শিশু, না হলে এমন এক শিশুসুলভ বিশৃঙ্খলা তৈরি করতেন না। আমরা আমাদের দর্শকদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম, মূলত শুভেন্দু অধিকারীর উদ্যোগে যে হাস্যকর সুপার ফ্লপ নবান্ন অভিযান হয়ে গেল তা নিয়ে তাঁদের বক্তব্য কী? শুনুন তাঁরা কী বলেছেন।
সব কিছু চালাকি করে হয় না, হ্যাঁ মানুষের আবেগ আছে, মানুষের আবেগ আছে তার প্রিয়তম শহরে এক ডাক্তার তাঁর কর্মস্থলে ধর্ষিতা হয়েছেন, তাঁকে ভয়ঙ্কর কষ্ট দিয়ে খুন করা হয়েছিল, তার বিচার নিয়ে বিচারের পদ্ধতি নিয়ে, এমনকী তদন্তের বিভিন্ন গাফিলতি নিয়েও মানুষের প্রশ্ন আছে, আবেগ আছে। কিন্তু তা অত ঠুনকোও নয় যে ইতিহাসে এমবিএ করা, নিজের মাথার ওপর শ্লীলতাহানির অভিযোগ থাকা এক ভুঁইফোড় নামগোত্রহীন সংগঠন ডাক দেবে আর মানুষ হু হু করে নবান্ন অভিমুখে রওনা দেবে। নবান্ন গণভবন নয়, পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশ নয়। মানুষ তিনবার হ্যাঁ তিনবার ওই বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, এ তো বিজেপির এক নিউ রিক্রুটের চালাকি মাত্র, মানুষ তা ধরে ফেলেছে। মানুষ প্রতিবাদ করবে, কার পাশে থেকে কার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে সেটাও জানে, জানে বলেই আজকের নবান্ন অভিযান সুপার ডুপার ফ্লপ।