ঠিক এই মুহূর্তে দেশের অন্তত ডজনখানেক বিরোধী নেতাকে যে কোনও সময়ে গ্রেফতার করা হতে পারে। সাংসদ থেকে বিধায়ক, দলের রাজ্য বা জেলাস্তরের নেতাদের গ্রেফতার করে জেলে পোরা এখন সময়ের অপেক্ষা। মানে এক মেকানিজম কাজ করছে দেশ জুড়ে, আসনভিত্তিক পর্যালোচনা চলছে, তার ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে এক তালিকা যাদের তুলে নিলে সেই এলাকাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাওয়া যাবে, কিছুটা হলেও হতোদ্যম হবে বিরোধী দল। মূলত বাংলা, দিল্লি, তামিলনাড়ু আর বিহার জুড়ে এই কাজ শুরু হয়েছে। নির্বাচনের ঠিক আগেই এ ধরনের গ্রেফতারি চলছে। নির্বাচন কমিশন কী বলছে? সরকার নির্বাচনের আগে ঝড়ে ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামতের টাকা দিতে পারে না কিন্তু বিরোধী নেতাদের চুন চুন কর জেলে ঢোকাতে পারে। তেলঙ্গানাতে হেরে যাওয়ার পরে বিআরএস-এর সমর্থন এসে যাবে এটাই ধারণা ছিল বিজেপির, আসেনি।
চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কে কবিতা রাওকে গ্রেফতার করা হয়েছে, জামিন নাকচ হয়েছে, এখন তাঁর কাছ থেকে দিল্লি লিকার মামলায় সনসনিখেজ, আগে না জানা তথ্য উঠে আসবে বলেই আশা করা যায়, যে সমস্ত তথ্য আর কিছুদিনের মধ্যেই মানুষের সামনে আসবে এবং যা অবধারিতভাবেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে। লক্ষ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড স্ক্যামের একজনও জেলে নেই, আমাদের ওষুধের দাম বাড়ছে, নরেন্দ্র মোদির পোস্টার ছাপা হচ্ছে, আমাদের জল জঙ্গল জমি বেচে দেওয়া হয়েছে তার বিনিময়ে অর্থ দিয়ে ভোট লুঠের ব্যবস্থা পাকা করা হচ্ছে, একজনকেও ধরে জেলে পোরা তো দূরস্থান, জিজ্ঞাসাও করা হয়নি, জেরা করা হয়নি। এতেও কুলোচ্ছে না, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচনী জনসভাতেই দাঁড়িয়ে বলছেন, উল্টো করে ঝুলিয়ে মারব, দেশের প্রধানমন্ত্রী হুমকি দিচ্ছেন চুন চুন কর জেল মে ভর দেঙ্গে। এটাই নয়া গণতন্ত্র। এবং বিরোধীরা এখনও যথারীতি ছত্রভঙ্গ, নিজেদের একটা দুটো আসনের হিসেব কষে কোথাও বিরোধিতা করছেন কোথাও মৌন। এ রাজ্যে যে সিপিএম মমতা, অভিষেককে জেলে পোরার কথা বলছে, সেই সিপিএম দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির বিরোধিতা করছে।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ৪১)
যে কংগ্রেস উচ্চকণ্ঠে অরবিন্দ কেজরিওয়াল বা হেমন্ত সোরেনের গ্রেফতারির বিরোধিতা করছে তাঁরাই কেরালাতে পিনারাই বিজয়নের মেয়ের সোনা পাচারের মামলাতে ইডি কেন চুপ করে বসে আছে তার কারণ জানতে চেয়ে বিবৃতি দিচ্ছে। দিল্লিতে সিপিআইএম-এর নেতারা নিউজক্লিক সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থের মুক্তির দাবিতে সেমিনার করছেন, আর এ রাজ্যে কলকাতা টিভির সম্পাদককে গ্রেফতার করার খবর ছাপছেন যাতে বলা হচ্ছে তৃণমূল নেত্রী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গ্রেফতার। এই দ্বিচারিতা ইতিহাস মনে রাখবে, এই দ্বিচারিতার সুযোগ নিয়েই বিজেপি বেড়ে উঠছে, বেড়ে উঠবে। আমরা এই দ্বিচারিতার নিন্দা করি, মনে করি এক রাজনৈতিক কারণেই ভুয়ো তথ্য তৈরি করে জেলে পোরা হয়েছে আমাদের সম্পাদককে, আমরা জাস্টিস চাই, কেবল আমাদের সম্পাদকের জন্য নয়, দেশ জোড়া বিরোধী রাজনৈতিক দল, সমাজকর্মী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, মিডিয়ার সম্পাদককে গ্রেফতার করার বিরুদ্ধে আমরা বলে যাব। লালু যাদব বা তামিলনাড়ুর স্তালিন বা কেরালার পিনারাই বিজয়ন বা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, হেমন্ত সোরেন সমেত দেশের প্রতিবাদী মানুষজন যে এক ভয়ঙ্কর চক্রান্তের মুখোমুখি সে কথা আমরা বার বার বলব। বলব জাস্টিস ফর কলকাতা টিভি, জাস্টিস ফর কৌস্তুভ রায়।
দেখুন ভিডিও: