সুজাতা সদন আর কত বড়, তবুও এক ছবির প্রদর্শনী উপলক্ষে উপচে পড়েছিল ভিড়, দেখানো হচ্ছিল ‘দ্য মিরর’ নামে ছবিটি, গতকাল মানে বুধবারের অনুষ্ঠান। কঙ্কনা সেনের ছবি, অভিনেত্রী নিজেই হাজির ছিলেন। ছবি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কঙ্কনা জানালেন তাঁর ভয়ের কথা। তিনি ভয় পাচ্ছেন, এই সময়ে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন। সামান্য কোনও কথা বলার পরেই কাউকে দেশদ্রোহী বলে দেওয়াটা এক রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বললেন কঙ্কনা। তাঁর কথায় এল ৮০-র দশকের স্মৃতি, সেই মিলে সুর মেরা তুমহারা তো সুর বনে হামারা, এক চিড়িয়া, অনেক চিড়িয়া, সেই যূথবদ্ধ পাখিরা কীভাবে এক ব্যাধকে বোকা বানিয়েছিল, সেই গানের স্মৃতি। কঙ্কনা বলছিলেন, আমরা তো অনায়াসে সেদিন সরকারের বিরোধিতা করেছি। সত্যিই তো সেদিন বলিউড বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধিতার সুর তুলত, কিশোর কুমারকে তো ঘাড় ধরে ব্যক্তিগত মনোরঞ্জনের জন্য নামানো যায়নি, বরং ব্যান করা হয়েছিল, অলিখিত ব্যান, দেশদ্রোহী বলা হয়েছিল? জেলে পোরা হয়েছিল? এই তো ক’বছর আগে পেট্রল ডিজেলের দাম বাড়া নিয়ে টুইট করেছেন অমিতাভ বচ্চন নিজে, টুইট করেছেন দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ড নিয়ে।
তিনিও কি ভয় পেয়েছেন? কই মণিপুর নিয়ে তো তাঁকে টুইট করতে দেখা গেল না, আজকের গ্যাস, ডিজেল, পেট্রলের দাম এত বেড়েছে, কই তিনি তো টুইট করছেন না? ভয় পেয়েছেন? নিশ্চয়ই পেয়েছেন। নাকি বলিউড এখন গোদিউড হয়ে গেছে? বুধবার কলকাতায় এসে কঙ্কনা যা বললেন তা তো অনেকের কথা। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে দাঁড়িয়ে জনসভাতে বিরোধী দলের নেতাদের দেশদ্রোহী বলছেন। বলছেন, এরা সব মুসলিম লিগের এজেন্ডা তুলে ধরছে। ওনার এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স পড়া আছে বলেই শিক্ষাদীক্ষা আছে এমনটা তো কেউ বলে না, তাই হঠাৎ মুসলিম লিগের প্রসঙ্গ তুলে ধরলেন। দেশের প্রত্যেক বিরোধী মানুষ, যারা এই সরকারের, আরএসএস–বিজেপির সাম্প্রদায়িক এজেন্ডার বিরোধিতা করে, যারা বিজেপিকে ভোট দেয় না, তারা সব্বাই দেশদ্রোহী?
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ৪০)
কত শতাংশ মানুষ বিজেপিকে ভোট দেয়? ৩৮ শতাংশ, তার মানে ৬০ শতাংশ মানুষ, দেশের গরিষ্ঠাংশ মানুষ দেশদ্রোহী। এখন আর এক নতুন খুড়োর কল চালু করেছেন, নির্বাচনী বন্ডের মতো এই খুড়োর কলের আসলি রহস্য একদিন নিশ্চয়ই বের হবে। সেই কল হল ইডি, যাকে খুশি গ্রেফতার করে জেলে পুরে দাও। একজনকে পুরে দিলে আরও হাজার জন ভয় পাবে। একজন ব্যবসায়ীকে জেলে পুরে দিলে আরও হাজার জন ব্যবসায়ী বিরোধী রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দেওয়া বন্ধ করবে। একজন সম্পাদক বা সাংবাদিককে জেলে পুরে দাও, বাকিরা চমকে চোদ্দো, ভয়ে কুঁকড়ে রুমাল। এবং এক্ষেত্রে কেবল দেশদ্রোহী নয়, গায়ে লাগবে চোরের ছাপ। সেই ইডি নামের খুড়োর কলেই আটকে আছেন আমাদের সম্পাদক, ভয় দেখানো হচ্ছে। বিশুদ্ধ জুজুর ভয়। আমরা ভয় পাচ্ছি না। আমরা বলে যাব আমাদের কথা, গেয়ে যাব শিকল ভাঙার গান, বিধির বাঁধন কাটবে তুমি, এমন শক্তিমান? আমরা দাবি করছি সুবিচারের, জাস্টিস। জাস্টিস ফর কলকাতা টিভি, জাস্টিস ফর কৌস্তুভ রায়।
দেখুন ভিডিও: