নয়াদিল্লি: ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের (Israel-Hamas War) পরিণতি ভয়ঙ্কর দিকে এগচ্ছে, অনুমান ছিল। কিন্তু, গাজার আল আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে (AL AHLI BAPTIST HOSPITAL) মারণবোমা নিক্ষেপে ৫০০-র বেশি প্রাণহানি হওয়ার পর বিষয়টি আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে। কারণ আন্তর্জাতিক আইন ও যুদ্ধনীতি ভঙ্গ করে এ ধরনের আক্রমণ কোথায় হয়েছে, তা নিয়ে গবেষকরা এখন চুলচেরা বিশ্লেষণে বসেছেন।
হাসপাতালে শুধু রোগী ও বোমায় জখমদের চিকিৎসা হচ্ছিল তা নয়, সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন পলায়নে অপারগ অনেক মহিলা। কোলে তাঁদের শিশু সন্তান। ঠাঁই নিয়েছিলেন অসংখ্য প্রবীণ মানুষ। যাঁরা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যেতে অক্ষম বার্ধক্যের কারণে। তাহলে এখন প্রশ্ন উঠছে, কে বা কারা এই হাসপাতালকে এক মুহূর্তে ধুলোয় মিশিয়ে দিল।
আরও পড়ুন: গাজার হাসপাতালে বোমা, মৃত ৫০০-র বেশি
ইজরায়েলের দিকে অভিযোগের তির উঠলেও তারা তা খারিজ করে দিয়েছে। তাদের দাবি, প্যালেস্তিনীয় ইসলামিক জেহাদের (PIJ) লক্ষ্যভ্রষ্ট রকেট আছড়ে পড়ে হাসপাতালে। অন্যদিকে, ওই সংগঠন এই দাবিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। অভিযোগের চাপানউতোর চলতে থাকলেও এই ঘটনায় এই মুহূর্তে গোটা মুসলিম দুনিয়া একছাতার তলায় চলে এসেছে।
বিস্ফোরক এবং অস্ত্র বিশেষজ্ঞ এক অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা আধিকারিকের বিশ্লেষণ হল এইরকম—
বিস্ফোরণের সময়কাল ছিল ০.৫ থেকে ০.৭৫ সেকেন্ড। ওর মধ্যেই আগুন জ্বলে ওঠে। তাঁর মতে, এটা কোনও আগ্নেয় বোমা ছিল না।
যেখানে গাড়ি পার্কিং করা ছিল সেখানে খুব সামান্যই ক্ষতি হয়েছে। অর্থাৎ যেটুকু ক্ষতি হয়েছে তা অতিরিক্ত চাপে এবং জ্বালানি বিস্ফোরণের কারণে হয়েছে।
হাসপাতালের কাছাকাছি থাকা সব বাড়ির জানালা ভেঙে পড়েছে বিস্ফোরণের কম্পনে এবং আগুনের উত্তাপে।
চূড়ান্ত যে ভিডিয়োটি দেখা গিয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে যে জ্বালানির বিস্ফোরণ খুব কম হয়েছে এবং বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষুদ্রতম অংশের বিস্ফোরণ মাত্রা স্পষ্ট নয়।
ওই বিশেষজ্ঞের মতে, বিস্ফোরকটির ওজন ৩০০ থেকে ৬০০ পাউন্ডের মতো ছিল। যদি তার থেকে বড় ওজনের হতো তাহলে পার্কিং এলাকায় আরও বড়সড় ক্ষতি হতে পারত। ৭০০ পাউন্ডের বেশি বোমা বাড়ির উপরের দিকে অংশের বেশি ক্ষতি করত।
সম্ভাব্য বোমার প্রকৃতি এবং উদ্দেশ্য
এমকে-৮২ অথবা এমকে ৮৩ হল সাধারণ বোমা। আমেরিকা, ন্যাটোসহ প্রায় সব দেশই চিরাচরিত এই বোমা ব্যবহার করে থাকে। এই বোমায় নিশানা নির্দিষ্ট করা থাকে না।
জিবিইউ-৩৯ হল ছোট সাইজের বোমা। আমেরিকা এবং সহযোগী দেশগুলি ব্যবহার করে।
জিবিইউ-১২ হল লেজার গাইডেজ বোমা। আমেরিকা সহ সহযোগী দেশগুলির ভাঁড়ারে আছে।
এজিএম-৬৫ মাভেরিক ক্ষেপণাস্ত্র। খুব প্রয়োজনীয় হামলায় ব্যবহার করা হয়। বিমান থেকে মাটিতে ফেলা হয় এই বোমা।
ভিডিয়োয় যে আওয়াজ শোনা গিয়েছে তাতে হামাসরা যে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে শব্দটা অনুরূপ নয়। জয়েন্ট ডিরেক্ট অ্যাটাক মিউনিশন (জেডিএএম) ক্ষেপণাস্ত্র হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন তিনি। হাসপাতালে যে বোমা নিক্ষেপ হয়েছে তা অনেকটা জেডিএএম ক্ষেপণাস্ত্রের আওয়াজের মতোই।
হামাসের এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োগের ক্ষমতা এবং পরিকাঠামো নেই বলেই তাঁর মত। ইজরায়েল বাহিনী যে দাবি করছে, তাও সত্যি নয়। কারণ ইসলামিক জেহাদি গোষ্ঠীদের এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের পরিকাঠামোই নেই। দক্ষতাও নেই। এধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রয়োগের প্রশিক্ষণও নেই তাদের।
দেখুন অন্য খবর