উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম দফা সেমিফাইনালে মঙ্গলবার রাতে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির সামনে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচটি হবে সিটির ঘরের মাঠ আল ইত্তিহাদ স্টেডিয়ামে। পেপ গুয়েরদিওলার সিটি এখন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এক নম্বরে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হতে পারে কি না তাই এখন দেখার। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি সিটি। গত বছর তাদের কাছে সুবর্ণ সুযোগ ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। কিন্তু চেলসির কাছে হেরে তারা সেই সুযোগ নষ্ট করেছে। এবার আবার তারা সেমিফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদের, যারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তেরো বারের চ্যাম্পিয়ন। রিয়ালের কোচ কার্লোস আনসোলত্তি এর আগে দুবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফিতে হাত দিয়েছেন। ২০০৭ সালে এ সি মিলানের হয়ে, আর ২০১৪ সালে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। অবশ্য পেপ গুয়েরদিওলাও বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন দুবার। ২০০৯ এবং ২০১১ সালে। কিন্তু পরবর্তীকালে বায়ার্ন মিউনিখ এবং এখন পর্যন্ত ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে তিনি চ্যাম্পিয়ন করতে পারেননি। এবার যদি সেই লক্ষ্যে পৌছতে চান তাহলে আপাতত রিয়াল মাদ্রিদকে হারাতে হবে।
কাজটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। নিজেদের মাঠে সিটি ইদানিং অপরাজেয়। সে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেই হোক কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। তাদের টিমের প্রধান শক্তি মাঝ মাঠ এবং অ্যাটাকিং লাইন। মাঝ মাঠৈ বের্নাদো সিলভা, রড্রি এবং অধিনায়ক কেভিন ডে ব্রুইন যে ফুটবলটা খেলেন তাকে সামাল দেওয়া যে কোনও ডিফেন্সের পক্ষে কঠিন কাজ। বিশৈষ করে বাঁ দিক দিয়ে বেলজিয়ান তারকা ডে ব্রুইনের গতি এবং চকিতে শট নিয়ে গোল করা তাঁকে এই মুহুর্তে ইউরোপের অন্যতম সেরা ফুটবলার করে তুলেছে। রিয়ালকে হারাতে সেরা ফর্মের দে ব্রুইনকে চায় সিটি। তাঁর সামনে তিন তুরন্ত ফরোয়ার্ড আছেন। রিয়াদ মাহেরাজ, গ্যাব্রিয়েল জেসুস এবং রহিম স্টার্লিং। এই তিনজনই গোলের মধ্যে রয়েছেন। দু দিন আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে হ্যাটট্রিক করেছেন ব্রাজিলিয় গ্যাব্রিয়েল জেসুস। তাই গোল করার লোক মজুত আছে সিটিতে। একটু বেশিই আছে।
সিটির ডিফেন্সে প্রধান ভরসা রাইট ব্যাক কাইল ওয়াকার। তাঁর পাশে থাকবেন পর্তুগিজ সেন্টার ব্যাক রুবেন ডায়াস। মাত্র ২৪ বছর বয়সে ডায়াস এখন বিশ্বের সেরা ডিফেন্ডারদের একজন। ডায়াসের পাশে আয়মেরিক লাপোর্তে এবং ওলেকজান্দার জিনচেঙ্কো যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য। স্পেনের লাপোর্তে এবং ইউক্রেনের জিনচেঙ্কো দুজনেই তাদের জাতীয় দলের প্লেয়ার। আর কাইল ওয়াকার তো ইংল্যান্ডের প্রথম তিনজন ডিফেন্ডারের মধ্যে একজন। তবে তৃতীয় হলুদ কার্ডের জন্য পাওয়া যাবে না জোয়াও ক্যানসেলোকে। চোটের জন্য দলে নেই সেন্টার ব্যাক জন স্টোনস। এবং এদের পিছনে থাকবেন গোলকিপার ব্রাজিলের এডেরসন, যাঁর উপর নির্ভর করে ব্রাজিল প্রচুর ম্যাচ জিতেছে। সব মিলিয়ে সিটির টিম যথেষ্ট ভাল এবং রিয়াল মাদ্রিদকে হারানোর মতো।
কিন্তু রিয়ালকে হারানো তো সহজ ব্যাপার নয়। বিশেষ করে যে ফর্মে এখন আছেন তাদের অধিনায়ক করিম বেঞ্জামা। রিয়াল যে এ বছর আবার লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হতে চলেছে তার পিছনে রয়েছে বেঞ্জামার বিরাট অবদান। ম্যাচের পর ম্যাচে তিনি গোল করে টিমকে জেতাচ্ছেন। এমন কি কোয়ার্টার ফাইনালে নিজেদের মাঠে চেলসির বিরুদ্ধে ৩-১ গোলে এগিয়ে গিয়ে যখন ম্যাচ হেরে সমতায় ফিরল তখন অতিরিক্ত সময়ে গোল করে এই বেঞ্জামাই টিমকে সেমিফাইনালে তুললেন। রিয়ালকে থামাতে গেলে তাই সিটিকে যে করেই হোক আটকাতে হবে বেঞ্জামাকে। ম্যাচের যে কোনও মুহুর্তে গোল করতে পারেন বেঞ্জামা। তাঁর দুপাশে ভালভার্দে এবং ভিনিসিয়াস জুনিয়র নিশ্চয়ই ভাল। কিন্তু তাঁরা কেউ বেঞ্জামা নন। তবে এই তিন জনই রিয়ালের ফরোয়ার্ড লাইনকে জিতিয়ে দিচ্ছেন। এদের পিছনে দুই মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচ এবং টনি ক্রূসের অভিজ্ঞতা এবং গেম মেকিং এবিলিটি রিয়ালের সম্পদ। তবে চোটের জন্য ব্রাজিলের মিডিও কাসেমিরোকে পাবে না রিয়াল। ডিফেন্সে কার্ভাজাল, এডের মিলিতাও, নাচো এবং মার্সেলোকে নিয়ে গড়া ব্যাক ফোর যে কোনও আক্রমণকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। গোলে বেলজিয়ামের থিওবা কুতোর্য়া এখন বিশ্বের এক নম্বর। ছয় ফুট সাত ইঞ্চি লম্বা কুর্তোয়া দিনের পর দিন অবিশ্বাস্য ভাবে প্রচুর গোল বাঁচান।
তাই মঙ্গলবারের সেমিফাইনালে কোনও দলকেই এগিয়ে রাখা যাবে না। তবে একটা কথা বলা যায় সিটিকে যদি জিততে হয় করিম বেঞ্জামাকে কিন্তু আটকাতেই হবে।