কেরালা ব্লাস্টার্স–১ এস সি ইস্ট বেঙ্গল–০
(এনেস সিপোভিচ)
সোমবার ছিল ভ্যালেন্টাইন দিবস। সারা বিশ্বের মানুষের ভালবাসার দিন। বাঙালি ফুটবলপ্রেমীর চিরন্তন ভ্যালেন্টাইন করশানু দে-র ষাটতম জন্ম দিন ছিল এদিন। মাত্র একচল্লিশ বছর বয়সে মর্ত্যভূমির মায়া কাটিয়ে অমর্ত্যলোকে চলে যাওয়া কৃশানুর জন্মদিনে ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকদের আনন্দ দিতে পারত তাদের প্রিয় টিমের একটা জয়। কিন্তু এই টিমটা তো জিততেই জানে না। বেশ ভাল ফুটবল খেলে এবং গোল করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেও সেই খালি হাতেই ফিরতে হল মারিও রিভেরার ছেলেদের। যা সুযোগ এসেছিল লাল হলুদের সামনে তাতে অন্তত একটা পয়েন্ট প্রাপ্য ছিল তাদের। কিন্তু ফ্রাঙ্ক সোতা কিংবা আই এস এল-এর দুনিয়ায় পা ফেলা রাহুল পাসোয়ানরা সামনে শুধু গোলকিপারকে পেয়েও তিন কাঠির মধ্যে বল রাখতে না পারলে গোল আসবে কী করে? অতএব সেই পুরনো কাসুন্দিই হাতে রইল। সতেরো ম্যাচে মাত্র একটা জয়। এগারো টিমের লিগে দশ নম্বরে ছিল ইস্ট বেঙ্গল। সেখানেই থাকল। আর কেরালা প্রথম দিকে খুবই ভাল খেললেও মাঝ খানে খেই হারিয়ে ফেলেছিল। গত পাঁচ ম্যাচে তাদের দুটোতে হারতে হয়। বাকি তিনটেতে তারা জিততে পারেনি। আগের ম্যাচেও জামশেদপুরের কাছে তারা ০-৩ গোলে হেরেছে। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গলকে হারিয়ে আবার তিন নম্বরে উঠে এল। পনেরো ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট হয়ে গেল তাদের। আর ইস্ট বেঙ্গল পড়ে রইল সেই তিমিরেই।
মারিও রিভেরা এদিন বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এনেছিলেন দলে। অরিন্দম ভট্টাচার্য রিজার্ভ লিস্টেও ছিলেন না। গোলে শঙ্কর রায়। ডিপ ডিফেন্সে আদিল শেখকে বসিয়ে তিনি আনলেন জয়নারকে। তাঁর পাশে ফ্রানিও পার্সে। মাঝ মাঠে শুরু থেকেই ফ্রান সোতা। রাইট হাফে আন্তোনিও পেরোসেভিচ। দুই ফরোয়ার্ড মহম্মদ রফিক এবং রাহুল পাসোয়ান। কলকাতা লিগের টপ স্কোরার রাহুল পাসোয়ানের এদিনই আই এস এল অভিষেক হল। প্রথম ম্যাচেই নায়ক হওয়ার সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। পেরোসেভিচের মাটি ঘেঁষা সেন্টারে পা ছোঁয়াতে পারলেই গোল। কিন্তু রাহুল পা ছোঁয়াতেই পারলেন না। তাঁর পায়ের উপর থেকে বল তুলে নিলেন কেরালা গোলকিপার প্রভুসুখন গিল। বেশ ভালই খেললেন গিল। শুধু এবারই নয় বেশ কয়েকবার তিনি ইস্ট বেঙ্গল এবং গোলের মাঝ খানে প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে পড়লেন। কেরালার মাঝ মাঠে অধিনায়ক আদ্রিয়ান লুনা এবং বিদেশি ফরোয়ার্ড জর্জ পেরেরা দিয়াজ ও আলভারো ভাজকুয়েজ দুজনেই বেশ দক্ষ। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্স তাদের ফনা তুলতে দেয়নি। দুই সেন্টার ব্যাক জয়নার এবং ফ্রানিও পার্সের পাশে হীরা মণ্ডল এবং নওচা সিং যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে মাকিঁং করেছেন। তাদের ট্যাকল, হেডিং, স্ন্যাচিং এবং ব্লকিং বেশ ভাল ছিল। এদের পিছনে খর্বকায় শঙ্কর রায় ছিলেন বেশ ভাল। শূণ্যে অথবা জমিতে তিনি বেশ কয়েকটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন।
তবু হারতে হল ইস্ট বেঙ্গলকে। ৪৯ মিনিটে ম্যাচের সেরা পুইতিয়ার কর্নার থেকে হেড করে গোল করে গেলেন দীর্ঘকায় সেন্টার ব্যাক এনেস সিপোভিচ। বসনিয়ার এই ডিফেন্ডারকে তিন দিক দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন ইস্ট বেঙ্গলের তিন জন। কিন্তু তারা এত বেঁটে যে তাদের মাথার উপর দিয়ে হেড করে বল গোলে রাখতে অসুবিধা হয়নি সিপোভিচের। উল্টো দিকে বেশ কয়েকটা কর্নার পেয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। কিন্তু সেগুলো নষ্ট করেন ফ্রান সোতা। এত জোরে মারলেল বলগুলো যে সেগুলো ছয় গজের বক্সের এক গাদা প্লেয়ােরকে টপকে নো ম্যানস ল্যান্ডে পড়ল। এ রকম একটা ৪০-৬০ ম্যাচে সেট পিস-গুলো নষ্ট হলে গায়ে লাগে। এর উপর শেষ দিকে সোতা কেরালা ডিফেন্সের ভুলে একেবারে ছয় গজের মধ্যে পেয়ে গিয়েছিলেন শুধু গোলকিপারকে। বড় লোকের বাউন্ডূলে ছেলের মতো সেটাকে বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দিলেন। গোল করার এ রকম সহজতম সুযোগ একটা ম্যাচে একবারই আসে। তার যদি এই পরিণতি হয় গায়ে লাগে।
তাই গোলকিপার শঙ্কর, চার ডিফেন্ডারের প্রাণপণ লড়াই এবং মাঝ মাঠের প্লেয়ারদের জেদে যে লড়াইটা ইস্ট বেঙ্গল করল তার কোনও মূল্য পাওয়া গেল না। দুই বিদেশির সঙ্গে মাঝ মাঠে ছিলেন দুটো পাহাড়ি ছেলে। অমরজিৎ কিয়াম এবং নামতে। কিন্তু সামনে মহম্মদ রফিক না হোমে না যজ্ঞে। না পারেন একটা পাস বাড়াতে, না পারেন বল নিয়ে উঠতে বা শট নিতে। যা কিছু খেলার খেললেন আন্তোনিও পেরোসেভিচ। এই ক্রোয়েশিয়ানের খেলার মধ্যে একটা চেষ্টা ছিল। কিন্তু সতীর্থদের কাছ থেকে তেমন সাহায্য পাননি। পেলে অন্তত একটা পয়েন্ট নিয়ে ঘরে ফিরতে পারত ইস্ট বেঙ্গল। সতেরো ম্যাচে মাত্র একটা জয়। একশো দু বছরের ক্লাবের কী করুণ দশা।