ওড়িশা এফ সি–২ এস সি ইস্ট বেঙ্গল–১
(জোনাথাশ জেসুস, জাভি হার্নান্ডেজ) (আন্তোনিও পেরোসেভিচ)
ওড়িশা এফ সি-র কাছে হার যেন ইস্ট বেঙ্গলের ভবিতব্য হয়ে গেছে। গত বছরের লিগের শেষ ম্যাচে ওড়িশা ৬-৫ গোলে হারিয়েছিল ইস্ট বেঙ্গলকে। এ বছরের প্রথম ম্যাচে ওড়িশা জিতেছিল ৬-৪ গোলে। যে টিমের কাছে পর পর দুটো ম্যাচে ছয় গোল খেয়েছিল লাল হলুদ, সেই টিমের কাছে নূন্যতম ব্যবধানে হার কি সম্মানজনক? এ সব ভেবে যাঁরা আত্মপ্রসাদ লাভ করবেন তাদের সঙ্গে হামরা একমত হতে পারছি না। শেষ পর্যন্ত তো হাতে রইল পেনসিলই। আসলে এই ইস্ট বেঙ্গলের পক্ষে এই ওড়িশাকে হারানো বেশ অসম্ভব ব্যাপার। আই এস এল-এর টিমগুলোর আসল শক্তি হচ্ছে তাদের বিদেশি প্লেয়ার। ওড়িশার চার বিদেশিই দুর্দান্ত। অধিনায়ক এবং সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার ভিক্টর মঞ্জিল, মিডফিল্ডার জাভি হার্নান্ডেজ এবং দুই ফরোয়ার্ড ব্রাজিলের জোনাথাস জেসুস এবং আরিদাই। এই চারজনই দলের মূল শক্তি। এদের সঙ্গে স্বদেশি ব্রিগেড মিলে ওড়িশা দুর্দান্ত দল না হলেও ইস্ট বেঙ্গলের চেয়ে অনেক ভাল। এদের সঙ্গে যদি তুলনা করা যায় ইস্টবেঙ্গলের তাহলে কী পা? ডিফেন্সে ফ্রানিও পার্সে, মাঝ মাঠে ড্যারেন সিডিয়েল এবং সামনে আন্তোনিও পেরোসেভিচ এবং মার্সেলো। নেহাতই নিম্ন মানের চার বিদেশি। এদের নিয়ে যেটুকু পারা যায় প্রাক্তন এবং বর্তমান কোচ তাই করছেন। ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এটা ছিল ইস্ট বেঙ্গলের ১৬ নম্বর ম্যাচ। এই নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল আটটা ম্যাচে হারল। পয়েন্ট মাত্র ১০। আর পনেরো ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে ওড়িশা উঠে এল ছয়ে। তাদের এটি ষষ্ঠ জয়। গোল করে এবং গোল করিয়ে ম্যাচের সেরা জাভি হার্নান্ডেজ, যিনি এটিকে মোহনবাগানের প্রাক্তনী।
ইস্ট বেঙ্গল কোচ জুয়ান ফেরান্দো এদিন তাঁর টিমে দুটো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করেছিলেন। গোলে অরিন্দম ভট্টাচার্যকে বসিয়ে নামানো হয় শঙ্কর রায়কে। এত দিন যিনি লেফট ব্যাকে খেলতেন সেই হীরা মণ্ডলকে তিনি নামান রাইট ব্যাকে। আর হীরার জায়গায় লেফট ব্যাকে নামানো হয় মুম্বই সিটি থেকে লোনে আসা নওচা সিংকে। এদের দুজনের মাঝখানে সেই আদিল শেখ ও ফ্রানিও পার্সে। চার মিডফিল্ডার সৌরভ দাস, নাওরেম মহেশ, আঙ্গু এবং ড্যারেন সিডোয়েল। সামনে মার্সেলো এবং আন্তোনিও। প্রথম দিকে কিছু অক্ষম ছোটাছুটি এবং নির্বিষ আক্রমণের পর ইস্ট বেঙ্গল তেইশ মিনিটেই গোল খেয়ে যায়। ডান দিক থেকে বল নিয়ে উঠে শুধু গতিতে নওচা সিংকে টপকে জাভি যে মাটি ঘেঁষা ব্যাক সেন্টারটা করলেন সেটা আদিল শেখের ক্লিয়ার করা উচিত ছিল। আদিল পা চালালেন এবং বল তাঁর পায়ের তলা দিয়ে গলে গেল। ছয় গজের মধ্যে তখন দাঁড়িয়ে আছেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার জোনাথাস জেসুস। আলতো পুশ এবং গোল। শঙ্করের কিছু করার ছিল না। দুটো গোল খেয়েছেন বটে এই খর্বকায় গোলকিপার। কিন্তু খারাপ খেলেননি। অনেকগুলো সেভ করেছেন। আর হীরা সোমবার তাঁর টিমকে হারের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি। কিন্তু ম্যাচ শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে গোল লাইন থেকে যে বলটা বাঁচিয়েছেন তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। গোটা ডিফেন্স এবং গোলকিপারকে কাটিয়ে জাভি আলতো পুশ করে নিশ্চিন্ত ছিলেন বলটা গোল হচ্ছেই। কিন্তু পিছন থেকে বলটাকে ফলো করে আসা হীরা শেষ মুহূর্তে বাঁ পায়ের টোকায় বলটা বের করে দেন। জাভি গোলের জন্য সরব হয়েছিলেন। কিন্তু টিভি রিপ্লে-তে দেখা গেছে বল গোল লাইন অতিক্রম করেনি।
ওড়িশার জয়ের গোলটার কারিগর কিন্তু জাভিই। এবার বলটা বাড়িয়েছিলেন জোনাথাস। বক্সের বাইরে থেকে সাজিয়ে গুজিয়ে জাভি যে শটটা মারলেন তা ধরার কোনও উপায় ছিল না শঙ্করের। তখন ম্যাচের বয়স ৭৫ মিনিট। এর তেরো মিনিট আগে ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে গোল করে ম্যাচে সমতা এনেছিলেন আন্তোনিও পেরোসেভিচ। মাঝ মাঠ থেকে ফ্রানিও পার্সের লং বল থ্রু পাস ধরে বক্সের মধ্যে ঢুকে বাঁ ্রায়ে চমৎকার ভলিতে ফিনিস করলেন ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় দলের প্লেয়ার পেরোসেভিচ। এই গোলটার পর মনে হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল তেড়ে ফুঁড়ে খেলে আবার গোল করবে। কারণ পেরোসেভিচের গোলের আগে দুটো হাফ চান্স পেয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। সে দুটোই নষ্ট করেন পেরোসেভিচ ও মার্সেলো। দুটো থেকেই গোল হতে পারত। ম্যাচটা তখন ধরে নিয়েছে ইস্ট বেঙ্গল। এবং মিনিট পাঁচেক যেতে না যেতেই আবার ম্যাচ চলে গেল ওড়িশার পায়ে। তারপর আবার গোল খাওয়া এবং জেতার স্বপ্নের পঞ্চত্ব প্রাপ্তি।
আর চারটে ম্যাচ বাকি আছে ইস্ট বেঙ্গলের। ১৬ ম্যাচে মাত্র দশ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে দশ নম্বরে। গত বার শেষ করে ছিল নয় নম্বরে। এবার মনে হয় সেটাও হবে না।