বড়ঞা: শুধু নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) নয়, গরু পাচার কাণ্ডেও (Cow Smugling Case) যোগ রয়েছে বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার (Jiban Krishna Saha), এমনটাই দাবি সিবিআইয়ের (CBI)। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, গরু পাচারের সঙ্গে সরাসরিই যোগ রয়েছে ধৃত তৃণমূল বিধায়কের (TMC MLA)। প্রায় ৬৫ ঘণ্টা ম্যারাথন তল্লাশির পর সোমবার ভোর ৫টা নাগাদ জীবনকৃষ্ণ সাহাকে বড়ঞার আন্দির বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে সিবিআই (CBI)। নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে তদন্তে অসহযোগিতা ও তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা, মূলত এই দুই অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।
বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা (Jiban Krishna Saha) অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। অনুব্রতের গ্রেফতারের পর থেকেই সিবিআই স্ক্যানারে ছিলেন বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ। বীরভূমে জীবনের একাধিক সম্পত্তির হদিশও মিলেছে। তদন্তকারীরা গরু পাচারে জীবনের ভূমিকা খতিয়ে দেখছিলেন। সিবিআই সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূম থেকে গরু মুর্শিদাবাদ হয়েই পাচার করা হত। এই গরু যখন জীবনকৃষ্ণের এলাকা দিয়ে পাচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হত, তখন তিনিও সেখান থেকে টাকা তুলতেন বলে জানতে পেরেছে সিবিআই। অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির পর থেকেই এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সিবিআইয়ের হাতে আসে।
আরও পড়ুন:Kisi Ka Bhai Kisi Ki Jaan | Salman Khan | Farhad Samji | আত্মবিশ্বাসী ফরহাদ
অনুব্রতর প্রাক্তন দেহরক্ষী বর্তমানে তিহার জেলে বন্দি সায়গল হোসেন আদতে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের বাসিন্দা। আর জীবনকৃষ্ণ শিক্ষকতা করেন বীরভূম জেলায়। সূত্রের খবর, সায়গলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই জীবনের সঙ্গে অনুব্রতর যোগাযোগ হয়। পরবর্তীকালে সেই যোগাযোগ ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হয়। সেই সূত্রেই গরু পাচারেও জড়িয়ে পড়েন তিনি।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ জীবনকৃষ্ণের (Jiban Krishna Saha) বড়ঞার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সিবিআইয়ের (CBI) একটি দল। তল্লাশি চালানো হয় তাঁর অফিস-সহ একাধিক জায়গায়। বিধায়কের বাড়ি এবং তাঁর বাড়ির পাশের খাল, সমস্ত জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৩,৪০০ চাকরিপ্রার্থীর তথ্য উদ্ধার করেছে তদন্তকারী সংস্থা। জীবনকৃষ্ণের বাড়ি থেকে দু’টি নোটপ্যাডও বাজেয়াপ্ত করেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের দাবি, বাড়ির একটি ঘরকে নিয়োগ দুর্নীতির আস্তানা বানিয়ে রেখেছিলেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক। ওই ঘরটিকে ওয়ার রুম বলছেন সিবিআই আদিকারিকরা। ঘর থেকে একাধিক কম্পিউটার, বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ, তিনটি নোটপ্যাড, হাই-স্পিড ইন্টারনেট সংযোগের ডিভাইস এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু সফটওয়্যারের খোঁজ মিলেছে। শুধু তাই নয়, একটি সিঁদুর কৌটোর মধ্যে জীবনকৃষ্ণ মোবাইলের মেমরি কার্ড লুকিয়ে রেখেছিলেন বলেও সিবিআই সূত্রে খবর। পুকুরে ফেলে দেওয়া জীবনের দুটি মোবাইল ফোনও অবশেষে সিবিআই উদ্ধার করে সমস্ত জল পাম্প দিয়ে ছেঁচে ফেলার পর।
দীর্ঘ ৭৫ ঘণ্টা পর সোমবার বেলা ৩.৫০ মিনিটে মোট ৮টি গাড়িতে চেপে সিবিআই আধিকারিক এবং সিআরপিএফ জওয়ানরা জীবনের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এদিন বহরমপুরে বলেন, শুধু জীবনকৃষ্ণই নন, নিয়োগ দুর্নীতিতে জেলার আরও অনেক রথী-মহারথী জড়িত। সবে জীবন ফেঁসেছেন, আরও কতজন ফাঁসবেন, দেখুন। অধীরের দাবি, রাজ্যের ২৩টি জেলাতেই দুর্নীতির জাল ছড়িয়ে রয়েছে।