মুম্বই: যে কোনও বড় বাজেটের ছবি মুক্তির আগেই আগুনের মতো সাোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে হ্যাসট্যাগ বয়কট বলিউড। এবার এই ট্রেন্ডের বিরুদ্ধে সরব হল দ্যা ফেডারেশন অফ ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে এমপ্লয়িজ( The Federation of Western India Cine Employees -FWICE)। বয়কট বলিউড ট্রেন্ড নিয়ে একটি দীর্ঘ বিবৃতি প্রকাশ করে এবার এই বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপের আর্জি জানাল এই সংস্থা।
শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (UP CM Yogi Adityanath) মুম্বইতে বলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে বলিউড অভিনেতা সুনীল শেট্টি (Suniel Shetty) যোগীকে বলেন, ইদানীং বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলিউড বয়কটের ডাক একটা প্রবণতা হয়ে উঠেছে। এটা সবার আগে বন্ধ করা উচিত। সুনীলের এই বক্তব্যকে বৈঠকে উপস্থিত অনেকেই স্বাগত জানায়। বেশ কিছুদিন ধরেই কারণে অকারণে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংস্থা বলিউড বয়কটের (bollywood boycott) ডাক দেয়। তা নিয়ে বলিউডেও যথেষ্ট আলোড়ন পড়ে। কিন্তু কেউ সাহস করে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে পারছিলেন না। বৃহস্পতিবার সেই কাজটিই করে দেখালেন সুনীল শেট্টি। এরপরই ফেডারেশন শুক্রবার এক দীর্ঘ বিবৃতি জারি করে এই বয়কট প্রবণতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে।
‘বয়কট বলিউড এক ধরনের গুন্ডামি’
বিবৃতিতে প্রথমেই এই ট্রেন্ডকে গুন্ডামি (hooliganism) বলে উল্লেখ করেছে ফেডারেশন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে ফেডারেশন লিখেছে, এর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রযোজকরা ও ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক কর্মী। গোটা বিষয়টি এমন আকার ধারণ করেছে যে রীতিমতো ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ কর্মী, টেকনিশিয়ান ও কলাকুশলীদের রুজি রোজগার বিপন্ন হচ্ছে, দুর্বিষহ হয়ে উঠছে জীবিকা অর্জনও।
আরও পড়ুন: Pathan CBFC Controversy: ‘পাঠান’ আদৌ সেন্সর বোর্ডের অনুমোদন পায়নি
‘আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে’
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে,যারা এই ধরনের বলিউড বিরোধী আবেগকে সুড়সুড়ি দেয়, (anti bollywood sentiment) তারা বোঝে না, এর ফলে কত মানুষের স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়। অনেক পরিশ্রম করে, আবেগ নিয়ে, বহু অর্থ ব্যয় করে একটি ছবি তৈরি করা হয়। সেই ছবি ভালো চলবে, এই স্বপ্ন সকলেই দেখেন কিন্তু এই ধরনের বয়কটের ডাকে অনেক সময় এক শ্রেণির মানুষ প্রভাবিত হয়। তারা কখনও হলের বাইরে স্লোগান দেয়, ভাঙচুর করে। এমনকী হলে ঢুকে দর্শকদের মারধর বার করে দেয়। এখানেই শেষ নয়, ছবির প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা -অভিনেত্রীদেরও হুমকি, গালি গালাজের শিকার হতে হয় অনেক সময়।
‘ছবি নেয়ে আপত্তি থাকলে জানান হোক সেন্সর বোর্ডকে’
নির্দিষ্ট কোনও ছবির নাম না করেই ফেডারেশনের বিবৃতিতে আরও লেখা হয়, কারও যদি কোনও ছবি ও তার বিষয়বস্তু নিয়ে আপত্তি থাকে তা হলে হলে হামলা না করে বরং এই নিয়ে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশনের (Central Board of Film Certification- CBFC) দ্বারস্থ হওয়া উচিত। কারণ কোনও সিনেমার ছাড়পত্র দেয় তারাই। এই প্রসঙ্গে বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যে ছবি আগেই ফিল্ম অথরিটি ও সেন্সর বোর্ডের (Censor board) ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে সেই ছবি বয়কট করা কিংবা নানা অপ্রীতিকর কাজের আমরা তীব্র ধিক্কার জানাই। ফেডারেশনের বক্তব্য, প্রতিবাদ জানানোর আরও অনেক পদ্ধতি আছে। শুধু বয়কটের ডাক দিয়ে বা হিংসাত্মক কার্যকলাপ করে মানুষকে উত্তেজিত করা কোনও কাজের কথা হতে পারে না।
আরও পড়ুন: Pathan Saffron Bikini Censor Board: রং বদল গেরুয়ার!
সরকারি হস্তক্ষেপ
সরকারের কাছে ফেডারেশনের আর্জি, অবিলম্বে এই বয়কটের ডাক দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ এটা প্রযোজক থেকে শুরু করে পরিচালক, কলাকুশলী, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের রুটি রুজির বিষয়। বৃহস্পতিবার যোগী আদিত্যনাথকে সুনীল শেট্টি অনুরোধ করেন তিনি যেন বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) সঙ্গে কথা বলেন। শেট্টি জানান এমনিতেই, কোভিড পরবর্তী সময়ে ইন্ডাস্ট্রি খুবই ‘খারাপ অবস্থায়’ রয়েছে।
আরও পড়ুন: আমেদাবাদে দেখানো যাবে না পাঠান মলে তাণ্ডব চালিয়ে হুমকি বজরং দলের
উল্লেখ্য, শুক্রবার সকালে শাহরুখ খান(Shah Rukh Khan) ও পাঠানের (Pathan) বিরোধিতা করে আমেদাবাদের একটি মলে তাণ্ডব চালায় বজরং দল (Bajrang Dal)। গোটা ঘটনাটি প্রথমে বজরং দলের টুইটার (Twitter) হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা হয়। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে পড়ে তাদের সেই ভিডিয়ো। বর্তমানে ছবির গান বেশরম রংয়ে দীপিকার বিকিনির রং ও শাহরুখের পোশাক, কিছু দৃশ্য নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়ার কথা পাঠানের ।