Thursday, July 31, 2025
Homeফিচারতোমারে বধিবে যে.....

তোমারে বধিবে যে…..

Follow Us :

কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: আপাতত বিজেপির খেলা শেষ। কলকাতা পুরভোটের ফল প্রকাশের পর, এবার অন্তত কিছুদিন পদ্মফুল হিমঘরে রাখাই শ্রেয়। কারণ একের পর এক ভোটে দশাননের মতো উচ্চৈস্বরে হ্রেষারবে ডাক দিয়েও একটি করে মুণ্ড কাটা যাচ্ছে ভিখারি জনতার রোষে। এরপর আবার পুরসভা ভোটের বিউগল বাজলে মুরলিধর সেন লেনে কুচকাওয়াজ শুরু হবে। সে কদিন ক্যামেরার সামনে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের বাণী ও রাজভবনে নালিশ-চা চক্রে যোগ দেওয়া ছাড়া সাময়িক অবসর জীবন কাটান নেতারা। কলকাতার গো-বলয় ছাড়া গোধন-সম্বল দলকে যে শিক্ষিত, রুচিশীল, সংস্কৃতিমান বাঙালি অন্তঃস্থল থেকে পরিত্যাগ করেছেন, সেটা বুঝে উঠতে চিন্তন শিবির খোলা উচিত বিজেপির। এই ভোটে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সেটা হল লাল ব্রিগেডের সূর্যোদয়। খরতেজে না-হলেও কুসুম-আলোয় ফুটে উঠতে চলেছে বামেরা। অতএব, পুরভোট থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, মোদি-শাহের অট্টালিকার ছত্রছায়া ছাড়া রাজ্যের নেতারা বন্ধ্যা আম্রবৃক্ষ। ঝাড়েবংশে বড় দেখালেও লক্ষ্মীপুজোর আমসত্র ছাড়া কোনও উৎপাদন নেই। আলোর বিন্দুর মতো হলেও পুরভোটে লাল সিগন্যালে থমকে গিয়েছে, গেরুয়া বাহিনীর বৈজয়ন্ত ট্যাঙ্ক।

২০১১-র পর সিপিএমের মরা আগলে রাখার লোকও ছিল না। তারপর থেকে মস্তিষ্ক-মৃত সিপিএমের বন্ধুরা বেঁচে ছিলেন সামাজিক মাধ্যম বিপ্লবে। অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিধানসভা ভোট, তারপর চারটে উপনির্বাচন ও শেষে কলকাতা পুরভোট। মার্কসবাদ ও কমিউনিজমের স্যান্ডো গেঞ্জি এবং পাতলুন পরিহিত সিপিএম যে কীভাবে এমন ফাঁকা মাঠের কাকতাড়ুয়া গোছের দল হয়ে গেল, তা সত্যই এক গবেষণার বিষয়। রেড আর্মির কমরেডরা গেলেন কই! ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করা একটা পার্টি এভাবে চোখের সামনে বিলুপ্ত হয়ে গেল, ভাবাই যায় না! প্রাগৈতিহাসিক কয়েকটি কীট-পতঙ্গ, প্রাণী রূপভেদে এখনও টিকে রয়েছে। কিন্তু, ৫৭ বছরেই নাম ও নিশান মুছে গেল সিপিএমের। ভোট আসছে, যাচ্ছে- ১-২ রানে আউট হওয়া তো দূরঅস্ত, মাঠে খেলতেই নামছে না সিপিএম! আর যে কারণে ফাঁকা মাঠে শাসক-বিরোধিতার বিজ্ঞাপনী বিরতির সময় খেয়ে নিচ্ছে বিজেপি।

অসহায় গণতন্ত্রের যে অভিযোগ বামনেতারা আজ তুলছেন, মনে পড়ে কমরেড সেদিনের কথাগুলো! সুষ্ঠু-অবাধ ভোট, পুলিসি দক্ষতা, ওরা বুথে এজেন্ট না দিতে পারলে, আমাদের বললে আমরা এজেন্ট দিয়ে দিতাম। আর আজ তারাই ভোটকে প্রহসন বলে ফটোশ্যুট করছে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কচিকাঁচাদের মতো ‘স্যার আমায় মারলে’, বলে আদালতে যাচ্ছে। ভোটে রিগিং হয়েছে, ছাপ্পা হয়েছে, জাল ভোট হয়েছে, বুথ দখল হয়েছে তো ঠেকাতে পারল না কেন সিপিএম!

আরও পড়ুন: রক্ত দেখলেই কেমন গা গুলিয়ে ওঠে

আসলে দলে এখন আর সংগঠন বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই। কোথায় গেল সিধুবাবুর (সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়) আমলের সিপিএম। জরুরি অবস্থার সিপিএম। কোথায় গেল সেই হিরের টুকরো এসএফআই-ডিওয়াইএফের ঠেঙাড়ে বাহিনী। আসলে নীতি-আদর্শ বিচ্যুত সিপিএম বহুদিনই হল জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ‘খোঁয়াড়-রাজনীতি’র ক্ষমতার অলিন্দে ঘোরাফেরা করতে গিয়ে সর্বহারার সর্বনাশ ঠেকাতে পারেনি তারা। সে কারণে ‘লাঙল যার, জমি তার’, ‘…শৃঙ্খল ছাড়া হারানোর কিছু নেই’ স্লোগানের জোশ একসময় ক্লিশে হয়ে গেল ঠান্ডাঘরে বসা নেতাদের কাছে। অবশেষে সমাজতন্ত্রের খোলস ত্যাগ করে গণতন্ত্রের নেকড়ের চামড়া গায়ে এঁটে মোঘল সাম্রাজ্যের মতো রাইটার্সে গেড়ে বসল। উত্তুঙ্গ অহংকার, সকলকে হেন্নাত করা, রাজ্যে কার্যত একদলীয় শাসন কায়েম করা, সমালোচনাকে বিরোধী দলের তকমা দেওয়ার মার্গদর্শক তো সিপিএমই। যদিও তখনও বুর্জোয়া দল কংগ্রেসের বিরোধিতা বজায় রেখেছিল লাল পার্টি। আর সেই কংগ্রেসকে উৎখাত করতে অটলবিহারী বাজপেয়ির হাত ধরেছিল সিপিএম।

সুবিধাবাদী নীতির কারণে এরপর বিজেপির গায়ে ‘সাম্প্রদায়িক’ লেবেল এঁটে দিয়ে কংগ্রেসকেও সমর্থন দানে পিছপা হয়নি। কেন্দ্রীয় ক্ষমতার লালসায় ‘ঐতিহাসিক ভুল’ করা নিয়ে দক্ষিণ লবিকে কিমা করে ছাড়তেও দ্বিধা করেনি বঙ্গ ব্রিগেড। তখন অবশ্য কিংবদন্তি রাজনীতিক জ্যোতি বসুতে বুঁদ হয়ে ছিল লাল নিশান। যিনি লালকৃষ্ণ আদবানির রামরথকে সেফ প্যাসেজ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু, কেন? সেই আমলে এই প্রশ্ন করার কোনও সজ্জন কিংবা বিদ্বজ্জন লাল বাংলায় অন্তত ছিল না। সেই সিপিএম ‘১১ সাল থেকে পুরভোটের আগে পর্যন্ত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ছিল। আমরা ফিরছি, আমরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছি— ফেসবুক দেওয়ালের পোস্টার ছাড়া শহরে-গ্রামের দেওয়ালে লাল দাগটি দেখা যায়নি। মন্দের ভালো এবার নগর-ভোটে কোমা কাটিয়েছে সিপিএম।

বোঝাই যাচ্ছে, নাগরিক মনে সিপিএমের ঝকঝকে তরুণ ব্রিগেড ধীরে ধীরে ছাপ ফেলছে। একঝাঁক সৎ, পার্টিনিষ্ঠ, শাসকদলের নীতিগত বিরোধী একটি শক্তির অঙ্কুর দেখা যাচ্ছে, যার অন্যতম কারণ হল— বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের নীতিহীনতা, অদূরদর্শিতা, দুর্নীতিগ্রস্ত, ‘মেড ইন তৃণমূল’ ছাপ মারা আমদানিকৃত লোকজনকে নেতার পদে বসানো, সর্বোপরি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ফোকাস ছাড়া নিজ ক্যারিশমার দৈন্য। আর সে কারণেই ভরাডুবির পরই টিম বদল।

আরও পড়ুন: KMC Election 2021: সংখ্যাগরিষ্ঠ তৃণমূল, বিরোধী দলনেতাহীন কলকাতা পুরসভা

মোদি-অমিত শাহ ভেবেছিলেন শুধু বজ্রগর্ভ ভাষণ, জেলের চাক্কি পেষানোর হুমকি দিলেই বোধহয় বাংলায় ভোট করা যায়। কিন্তু, বাঙালি চিন্তাশীল জাতি। এটা তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন। তাই তাঁদের মুখে ভুলভাল রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ, সারদার বাণী বাঙালি মানতে পারেনি। যেমন মানতে পারেনি পদ ও মন্ত্রিত্বের টোপ ফেলে তৃণমূল ভাঙিয়ে দলের বপুবৃদ্ধি করা।

শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতা, যাঁর সৎতা নিয়ে কোনও সাধারণ মানুষের মনে বিন্দুমাত্র আস্থা নেই, তাঁকে মুকুট পরিয়ে বসিয়েছেন মোদি। কারণ সেটাই ডিল হয়েছিল। বর্তমানে অসুস্থ মুকুল রায়ও রাতারাতি আইএসও মার্কা হয়ে গিয়েছিলেন। অর্জুন সিং, জয়প্রকাশ মজুমদার, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো সকলেই কোনও না কোনও পার্টির উচ্ছিষ্ট। এই উচ্ছিষ্ট ঘেঁটে তৈরি দলের দুর্গন্ধ বেরতে শুরু করল এবারের পুরভোট থেকেই। এখন অপেক্ষা শুধু রবিনসন স্ট্রিট কাণ্ডের মতো শুকনো পদ্মের কঙ্কাল আগলে মুরলিধর সেন লেনে বসে থাকা। এটাও স্পষ্ট করে বুঝে নেওয়া যে, আপাতত মমতা-বিরোধিতার জন্য বাংলায় কোনও মঞ্চ আলো করতে আসছেন না নরেন-ভাই। বরং মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বাণিজ্য সম্মেলনে আসবেন তিনি।

অতএব, আপাতত ডিপ ফ্রিজে থাকুন রাজ্য বিজেপি নেতারা। কারণ এতদিন ডিপ ফ্রিজে রাখা ন্যূনতম ষাটোর্ধ্বো আলিমুদ্দিনের নেতাদের মর্গে শুইয়ে শীতের তাজা সবজির মতোই বেরিয়ে এসেছে সিপিএমের তরুণ প্রজন্ম। হয়তো সামনে কঠিন লড়াই, তবে একটা বিষয় তারা প্রমাণ করে দিয়েছে, বিজেপির পায়ের তলা থেকে বিরোধী দলের মাটি সরিয়ে নিতে, এরাই যথেষ্ট।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | ভারতে গোঁসা পাকিস্তানে প্রেম?
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | দুর্গাপুজো নিয়ে নেতাজি ইন্ডোর থেকে কী কী ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর?
00:00
Video thumbnail
America | Pakistan | আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য চুক্তি, চুক্তিতে কী কী আছে? দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | এবার পুজো কমিটিগুলিকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা অনুদান, বিরাট ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
00:00
Video thumbnail
Tamil Nadu | BJP | NDA-তে বড় ভাঙন, দল ছাড়লেন বড় নেতা! কী করবে বিজেপি?
00:00
Video thumbnail
ঘোষাল নামা | Ghosal Nama | দোস্ত দোস্তনা রহা! দেখুন ঘোষালনামা
06:01
Video thumbnail
Amartya Sen | বাংলা ভাষা আ/ক্রা/ন্ত নিয়ে অস/ন্তোষ প্রকাশ অমর্ত্য সেনের, কী বললেন নোবেলজয়ী? শুনুন
04:18
Video thumbnail
Parliament News | রাহুল vs জয়শঙ্কর ইতিহাস কে বেশি জানে? শুনে নিন নিজের কানে
13:55
Video thumbnail
Aajke | জয় কালী, জয় দুর্গার জয় বাংলা বলবে এবার
00:47
Video thumbnail
Aajke | শ্লোগানের ফাঁদে শুভেন্দু কাঁদে
01:01

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39