Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: আরএসএস এবার মুখোশ খুলেই মাঠে নামছে

Fourth Pillar: আরএসএস এবার মুখোশ খুলেই মাঠে নামছে

Follow Us :

শমীক ভট্টাচার্য কিংবা রন্তিদেব সেনগুপ্তকে জিজ্ঞেস করলে ওনারা বলবেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, আরএসএস হল এক সামাজিক সংগঠন, হিন্দুত্ব আর জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে এক সামাজিক সংগঠন যা প্রতিদিনের রাজনীতি, যাকে আমরা সাধারণত পার্টি পলিটিক্স বলে থাকি তার সঙ্গে আরএসএস-এর কোনও সম্পর্কই নেই। কাগজে কলমে দেখিয়ে দেবেন, কিন্তু বিশ্বসুদ্ধ মানুষজন জানেন, এমনকী ওনারাও জানেন যে আরএসএস একটি রাজনৈতিক সংগঠন, যার তলায় ইলেক্টোরাল পলিটিক্স, ভোটের রাজনীতি করার সংগঠন বিজেপি আছে, ছাত্রদের সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ আছে, ভারতীয় মজদুর সংঘ বা বিএমএস আছে। এরকম বহু সংগঠন আছে, যা ওই আরএসএস-এর নাগপুর কার্যালয় থেকেই চালানো হয়। বিজেপি যেখানেই ক্ষমতা পেয়েছে, আমরা দেখেছি ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই আরএসএস প্রচারক বা আরএসএস ঘনিষ্ঠরাই মাথায় বসেছে। কিন্তু বহিরঙ্গে আরএসএস এক সামাজিক সংগঠন হিসেবেই নিজের পরিচয় দিয়েছে, চেষ্টা করেছে সে পরিচয় বজায় রাখার। নির্বাচনের বহু আগে থেকেই প্রচারকরা দায়িত্ব পেয়েছেন, ছড়িয়ে গেছেন দেশজুড়ে, চণ্ডীমণ্ডপ থেকে শনির থানে হাজির থেকেছেন, হেরেছেন, জিতেছেন, কাজ থামেনি চালিয়ে গেছেন। যেহেতু তাঁরা সরাসরি সরকারে নেই, যেহেতু তাঁরা সরাসরি মন্ত্রীসান্ত্রি নন, তাঁদের গায়ে কাদা লাগেনি। তাঁদের টাকা জুগিয়েছে অনেকেই কিন্তু কোনও বিজনেস হাউসের হয়ে আরএসএস কোনও কথা বলেনি। 

উদ্দেশ্য হিন্দু রাষ্ট্র, তাঁরা নিষ্ঠাভরে কাজ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু লাস্ট ল্যাপে এসে ফিনিশিং লাইনের কিছুটা দূরেই তাদের মরিয়া দেখাচ্ছে, তারা যাবতীয় মুখোশ খুলে খুল্লমখুল্লা মাঠে নেমে পড়েছেন, কেন? এমনটা হতেই পারে যে জয় নিশ্চিত জেনে আরএসএস মনেই করছে না যে তাদের আর কোনও রাখঢাক নিয়ে কাজ করতে হবে। আবার এমনটাও হতেই পারে যে আরএসএস-এর মনে হচ্ছে জয় হাত থেকে পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছে, কাজেই তারা মরিয়া, তারা আর রাখঢাক নিয়ে কাজ করার বদলে মুখোশ খুলেই মাঠে নামছেন। এবং এই মরিয়া মনোভাব ২০১৪-র আগে ছিল না, এমনকী শিবসেনা দাবি করেছিল, বাবরি মসজিদ ভাঙায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে, কিন্তু আরএসএস ভুলেও তা করেনি। যদিও ওই বিশাল কর্মযজ্ঞের নীল নকশা অবশ্যই আরএসএস হেড কোয়ার্টারেই আঁকা হয়েছিল, যদিও তার কোনও প্রমাণ রেখে দেবার মতো বোকামো তাঁরা করেননি। জরুরি অবস্থার সময় আরএসএস-এর বিভিন্ন নেতারা জেলে গেছেন। আরএসএস নেতা বলেই গেছেন, সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বলেই গেছেন, বিরাট জনসভা, মিছিল, মিটিং বা জর্জ ফার্নান্ডেজের মতো কোনও সশস্ত্র ষড়যন্ত্রের অভিযোগে যাননি। অটল বিহারী সরকারের সময় আরএসএস নির্বাচন বা নির্বাচনী প্রচারে সংগঠন হিসেবে কাজ করেনি, প্রচারকরা যেমন মাঠে নামার তেমন নেমেছিল। কিন্তু এখন ছবিটা পালটে গেছে। মূলত তিনটে কারণে। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: শান্তিনিকেতনের বিদ্যুৎ-বাংলা 

প্রথম কারণ হল দেশের হিন্দু জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ এখনও বিজেপির পক্ষে নয়, কাজেই নরেন্দ্র মোদির ক্যারিশমাতে ভোট জুটে গেলেও রাজ্যস্তরে ছবিটা আলাদা। ঠিক এই মুহূর্তে বিজেপির হাতে বিহার, ওড়িশা, বাংলা, অন্ধ্র, তেলঙ্গানা, তামিলনাডু, কেরালার মতো বড় রাজ্য নেই। কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় আছে বটে কিন্তু তা প্রায় জোর করে থাকা। কাজেই দেশজোড়া হিন্দুরাষ্ট্রের স্বপ্ন এখনও অনেক দূরে, ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে, কারণ যে কোনও সরকারের একটা পর্যায়ে গিয়ে অ্যান্টি ইনকমব্যান্সি এফেক্ট কাজ করতে বাধ্য। মোদ্দা কথা হল, হিন্দু জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ এখনও বিজেপির হাতের বাইরে। দ্বিতীয় কারণ হল, যত দিন যাচ্ছে তত সুপারক্লিন বিজেপির গায়ে কালো দাগ লাগছে, পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স আজ আর দশটা রাজনৈতিক দলের মতোই দুর্নীতি, দলীয় কোন্দল ইত্যাদির শিকার। তৃতীয় হল, ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণ মুসলমান ভোটকে একেক জায়গায় একেক রকম হয়ে উঠতে সাহায্য করছে। বাংলায় তারা তৃণমূলের সঙ্গে, অন্ধ্রতে জগন রেড্ডির সঙ্গে, তেলঙ্গানায় টিআরএস-এর সঙ্গে, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-র সঙ্গে, রাজস্থানে কংগ্রেসের সঙ্গে, কর্নাটকে কংগ্রেসের সঙ্গে। কাজেই কংগ্রেস-মুক্ত ভারত স্লোগান আঞ্চলিক দলের ক্ষেত্রে কাজ করছে না, সেখানে মুসলিম ভোটার সেই রাজ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী বিজেপি বিরোধী দলের দিকে চলে যাচ্ছে। কাজেই আরএসএস-কে যাবতীয় মুখোশ খুলেই মাঠে নামতে হচ্ছে। 
আমরা ২০১৯-এ ভোটের আগে আরএসএস সরসঙ্ঘচালক এই মোহন ভাগবতকেই দেখেছিলাম, তিনি গণপিটুনির বিরুদ্ধে কথা বলছেন, কারণ রাজ্যে রাজ্যে গরুর মাংস বিক্রি ইত্যাদির অভিযোগে মানুষ পিটিয়ে মারা হচ্ছিল। বহু জায়গায় নিম্নবর্ণের হিন্দু মানুষজন, যাঁরা মোষের মাংস খান, তাঁরাও এই লিঞ্চিং-এর শিকার হচ্ছিলেন, মোহন ভাগবত আসলে ওই বাড়তে থাকা আগুনকে সামলানোর চেষ্টা করছিলেন।

এবার সামনে ২০২৪, বিহার, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ থেকে আগের বারের ফল আশা করা যাচ্ছে না, এমনকী রাজস্থান, দিল্লিতেও নয়, কর্নাটকেও নয়। এসব রাজ্যে যে আসন কমবে তা আসবে কোত্থেকে? এই বাংলায় ১৮টা আসন ছিল, ১৮টা থাকবে তো? দিলীপ ঘোষও বুক ঠুকে সে কথা বলতে পারছেন না। তাহলে? তাহলে আরও হিন্দু ভোট চাই, তাহলে এমনকী মুসলমান ভোটের এক অংশ চাই। আরএসএস সেই রণনীতি তৈরি করেছে, কিছুদিন আগেই আরএসএস সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত দিল্লিতে মুসলমান ইমামদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন, ওধারে মোদিজি পসমিন্দা মুসলমানদের কথা বলছেন। পসমিন্দা মুসলমান হল মুসলিমদের মধ্যে নিম্নবর্ণ, সেই পসমিন্দারা নাকি শোষিত, বিজেপির বিরুদ্ধে নাকি কেবল উচ্চবর্ণের মুসলমানরা তাই পসমিন্দাদের কাছে টানো। কোথায়? মন্ত্রিসভায়? কোথায় বিভিন্ন রাজ্যে বিধায়ক হিসেবে? না, সে গুড়ে গ্যামাক্সিন। ভোটটা টানো, সেই দিকে লক্ষ রেখে প্রচার করো, কিছু দালাল সর্বত্র থাকে, তাদের খুঁজে বার করে কুনকি হাতির মতো কাজে লাগাও। হঠাৎ সেই জন্যই মোহন ভাগবত বসে পড়লেন মুসলিম ধর্মনেতাদের সঙ্গে, যদিও ভাগবত সাহেব প্রতিদিন তাঁর প্রার্থনায় আরএসএস-এর প্রার্থনায় হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি করার শপথই নেন। কেবল পসমিন্দাদের ভোট চাই? হিন্দু ধর্মের দলিতদের ভোটও দরকার, দু’দিন আগে তিনি বললেন, ভগবান কোনও জাতিভেদ প্রথা করে যাননি, এসব জাতিভেদ প্রথা মানুষের সৃষ্টি। কী ভালো কথা, তাই না? অন্তত হিন্দু ধর্মে দলিতদের তো মনেই হবে, এই তো আমাদের পক্ষে কথা বলছেন আরএসএস সরসংঘচালক। আচ্ছা মাননীয় মোহন ভাগবতজি, এ তাবত আরএসএস-এর সরসঙ্ঘচালক ক’জন হয়েছেন? ১৯২৫ থেকে ১৯৩০ প্রতিষ্ঠাতা সরসঙ্ঘচালক ছিলেন কেশব বালিরাম হেডগেয়র, তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণ। ১৯৩০ -১৯৩১-এ সরসঙ্ঘচালক ছিলেন লক্ষণ বাসুদেব পরাঞ্জপে, তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণ। ১৯৩১ থেকে ১৯৪০ আবার কেশব বালিরাম হেডগেয়র, ১৯৪০ থেকে ১৯৭৩ বিরাট সময় জুড়ে ছিলেন এমএস গোলওয়ালকর, ওনার সময়েই বল্লভ ভাই প্যাটেল গান্ধী হত্যার ষড়যন্ত্রে থাকার অভিযোগে আরএসএস-কে ব্যান করেছিলেন, তো এই গোলওয়ালকরও একজন চিৎপাবন ব্রাহ্মণ ছিলেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯৪ সরসঙ্ঘচালক হন মধুকর দত্তাত্রেয় দেওরস, তিনিও ছিলেন ব্রাহ্মণ। ১৯৯৪ থেকে ২০০০ সরসঙ্ঘচালক হন রজ্জু ভাইয়া, রাজেন্দ্র সিং, একজন ক্ষত্রিয়। ২০০০–২০০৯ সময়ে সরসঙ্ঘচালক ছিলেন কে এস সুদর্শন। ২১ মার্চ ২০০৯ থেকে এখনও অবধি সরসঙ্ঘচালক হলেন মোহন ভাগবত, যিনিও একজন ব্রাহ্মণ। তার মানে কী? দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশ হল ব্রাহ্মণ, আরএসএস-এর ১৯২৫ থেকে এখন অবধি কোনও দলিত তো বাদই দিন কায়স্থ সরসঙ্ঘচালকও জোটেনি, ৭ বারের সরসঙ্ঘচালকদের মধ্যে ৬ জন ব্রাহ্মণ, এক জন মাত্র রাজপুত। জাতপাত ভাগবান তৈরি করেননি, মানুষ তৈরি করেছে, কিন্তু আরএসএস-এর মাথায় বসবে সেই ব্রাহ্মণ, কখনও সখনও রাজপুত? কেন? জানি জবাব দেবেন না মোহন ভাগবত। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: আদানি কা চৌকিদার কোন হ্যায়? 

আমি বলছিলাম মরিয়া আরএসএস, আরও একটা প্রমাণ দিই। আজ অবধি আরএসএস-কে কোনও ব্যসায়ীর পক্ষ নিয়ে একটা কথাও বলতে শোনা যায়নি, না একজনকে নিয়েও নয়, যদিও তারা টাকা পেয়েছে সবখান থেকেই। কিন্তু গত সংখ্যার অরগানাইজার, ও হ্যাঁ বলে নিই, অরগানাইজার হল আরএসএস-এর মুখপত্র, তলায় ট্যাগলাইন ভয়েস অফ দ্য নেশন, তো সেই পত্রিকায় একটা লেখা ছাপা হয়েছে, তার হেড লাইন হল, Decoding the hit job by Hindenburg against Adani Group মানে হল, হিন্ডেনবার্গ যে আদানিকে আক্রমণ করেছে তার আসল চেহারাটা কী? সেখানে লেখা হয়েছে, Ritu Kapur, partner and financier of Dhanya Rajendran in The News Minute and co-founder of Digital Sharpshooters cartel Digipub also had a shell company in the UK. They closed it within a few months without filing a yearly return.
Why and who benefitted from such a vicious attack! What more evidence of paid propaganda needed when Adani and Ambani even featured in Greta’s ‘toolkit? Why these two only? Why not Tata, Premiji, Moorthy, Vadhra, or anyone else?
India’s economic stats at IMF, rising business houses are in the world’s richest list, and certain geopolitical stands have definitely irked this propagandist lobby. And so the 2024 general election is crucial for many.  মানে, ঋতু কাপুর, ধন্যা রাজেন্দ্রন, টাটা, প্রেমজি, মূর্তি, ভদরাদের দুর্নীতি নিয়ে তো কোনও কথা হয় না, যত কথা কেবল আম্বানি, আদানিকে নিয়ে? গ্রেটা থুনবার্গ-এর টুলকিটেও এই আদানি আর আম্বানি, কারণ বিরোধীদের লক্ষ্য ২০২৪ এর নির্বাচন। আদানিদের শেয়ার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে হাজির করা হয়েছিল, যা নামছে, তাদের ভুয়ো কোম্পানিগুলোর চেহারা ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, সংসদে বিরোধীরা আলোচনা চাইছে, জেপিসি চাইছে, আর আরএসএস-এর মুখপত্র সেই আদানি আম্বানিদের আড়াল করছে। না, আরএসএস এতটা খোলাখুলিভাবে রাজনৈতিক প্রচারে এর আগে কখনও নামেনি, তবে আমি মনে করি বেশ করেছে নেমেছে, অন্তত তাদের আসল চেহারা তো মানুষের সামনে এল। আমরা বলতে তো পারব যে আরএসএস বিজেপির সহযোগী এক রাজনৈতিক শক্তি, ওসব সামাজিক, ধার্মিক ইত্যাদি শব্দগুলো নেহাতই কমদামি মুখোশ, এখন খসে পড়ছে।      

RELATED ARTICLES

Most Popular