২৮ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার,
1
2
3
4
5
6
7
8
9
10
11
12
K T V Clock
১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি টাকা হুসসস, ভ্যানিস
Fourth Pillar: আদানি কা চৌকিদার কোন হ্যায়?
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  কৃশানু ঘোষ
  • আপডেট সময় : ০৩-০২-২০২৩, ১০:৩০ অপরাহ্ন

রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, চৌকিদার চোর হ্যায়, অনেকেই বলেছিল, আমরাও বলেছিলাম, সর্ষের মধ্যে ভূত আছে, চৌকিদার চোর হ্যায়। কিন্তু জনতা জনার্দন বিশ্বাস করেননি, মাথার উপর হাত তুলে হর হর মহাদেব বলা আমাদের মোটা ভাইয়ের স্বরূপ মানুষ বুঝতে পারেননি। এখন সেই ছবি পরিষ্কার, আমাদের চৌকিদারের বন্ধু শেঠজি আজ ধরা পড়েছেন। গৌতম আদানির স্বর্ণলঙ্কা এক পুঁচকে হনুমানের ল্যাজের আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে। এর আগে একদিন বলছিলাম ক্রোনি ক্যাপিটালের কথা, শঠ, ধূর্ত, প্রবঞ্চক পুঁজির কথা। এরা একদেশের এক নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে হাত মেলায়, সে দল ক্ষমতায় এসে এই পুঁজিকে লুঠমার করতে সাহায্য করে, যা খুশি তাই করতে সাহায্য করে। বদলে সেই পুঁজি বা ওই ক্রোনি ক্যাপিটালিস্ট এই দলকে ক্ষমতায় রাখার জন্য যা যা দরকার তাই করে। আমরা দেখেছিলাম জাতীয় স্তরে টিম টিম করে বিরোধিতার স্বর শোনা যাচ্ছিল এনডিটিভির গলায়, আদানি সেই টিভি কিনে নিলেন। রবীশ কুমার বেরিয়ে আসতে বাধ্য হলেন, বললেন শেঠজি কে পাস বহত পয়সা হ্যায়। সেই আদানি আজ সঙ্কটে, ক্রোনি ক্যাপিটালিস্টদের পতন হয়, এর আগেও হয়েছে, দূরবীন দিয়েও আজ আর অনিল আম্বানির নাম খুঁজে পাবেন না, কিছুদিন পরে গৌতম আদানির তেমন হাল হলে অবাক হবার কিছু নেই। 

আসলে ক্রোনি ক্যাপিটালিস্টরা এই যা ইচ্ছে খুশি তাই করার অধিকারটা একটা দেশেই পেয়ে থাকে, তারপর চড়চড় করে বেড়ে ওঠে। একটা সময়ে তাদের বড় মাঠে খেলার ইচ্ছে হয়, বড় মাঠে আরও বড় বড় প্লেয়াররা আছে, সেখানে রেফারির ভূমিকাতে কোনও চায়ওয়ালা, চৌকিদার নেই, সেখানে আরও ঘাঘুরা খেলাধুলো করে, তেমনই একপিস, হ্যাঁ মাত্র একপিস ঘাঘু আদানি সাম্রাজ্যে ধস নামিয়ে ছেড়েছে। আমরা তিনদিক থেকে বিষয়টাকে বোঝার চেষ্টা করব, প্রথমত এটা হল কেন? কীভাবে হল? প্রায় পচা শামুকে পা কেন কাটল গৌতম আদানির? দ্বিতীয়ত, এরপরে কী? মানে আদানি সাম্রাজ্যের ইতি নাকি সাময়িক বিরতি? তৃতীয়ত আমাদের দেশের অর্থনীতিতে এই পতনের প্রভাব কতটা? আদানি এই সময়ের মধ্যে বৃহত্তম এফপিও বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ২০ হাজার কোটি টাকার এফপিও। এখন এই এফপিওটা কী বস্তু? আইপিও হল শেয়ার বাজারে ইনিশিয়াল পাবলিক অফার, মানে ভাই আমি একটা কোম্পানি খুলছি সেখানে এই এই জিনিস তৈরি হবে, আমাদের ব্যবসাতে লাভ হবে, দুটো স্টক এক্সচেঞ্জ, বিএসই বা এনএসই-র অন্তত একটাতে সেই হব কোম্পানিকে রেজিস্ট্রি করার পরেই কোনও কোম্পানি মানুষের কাছে আইপিও ছাড়তে পারে। তো আপনাকে জানতে হবে কোপানি টা সত্যিই ব্যবসা করবে কি না, লাভ হবে কি না, তারপর আপনি পয়সা ঢালবেন, কোম্পানি ব্যবসা শুরু করবে, আইপিও ব্যাপারটা মোটামুটি এই রকম। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: আয়ের কড়ি, পারের কড়ি 

এফপিও হল ফলো আপ অফার, মানে কোম্পানি চলছে, তারপর আবার আরও অনেকটা টাকা বাজার থেকে, মানুষের কাছ থেকে তোলার জন্য আবেদন রাখা। এক্ষেত্রে সুবিধে হল, কোম্পানি কেমন চলছে সব্বাই জানে, অতএব প্রথম বারের দ্বিধা-দন্দ্ব থাকে না, মানুষও আচ্ছা, টাটার এফপিও? বলে টাটার শেয়ার কিনে নেয়। তো আদানি ২০ হাজার কোটি টাকা এফপিও তোলার সিদ্ধান্ত জানাল। এবং ঠিক এই সময়ে জানুয়ারি ২৪-এ হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ, আমেরিকার এক সংস্থা জানাল, ১) ১৭.৮ ট্রিলিয়ন টাকা মূল্যের আদানি কোম্পানি বিভিন্ন দুর্নীতির সাহায্যে নিজেদের সম্পদ জড়ো করেছে, এমনটা তারা জেনেছে দীর্ঘ ২ বছর ধরে তদন্ত করার পর। ২) গত তিন বছরে এই কোম্পানি ১০০ বিলিয়ন ডলার জোগাড় করেছে যার আগে তাদের ৭টা লিস্টেড কোম্পানি মাত্র ২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ছিল, মানে গত তিন বছরে ৮১৯% বৃদ্ধি, এরমধ্যে করোনাকাল গেছে। একবার আউড়ে নিন মোদিজির বুলি, না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা। ৩) আমরা গত দু’ বছর ধরে আদানি কোম্পানির বিভিন্ন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী, হাজার হাজার ডকুমেন্টস, ৬টা দেশের বিভিন্ন সাইট ঘুরে এই রিপোর্ট দিচ্ছি। ৪) কেবল মাত্র ৭টা লিস্টেড কোম্পানির আসল মূল্য ৮৫ শতাংশেরও কম, যাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। ৫) এই কোম্পানি ঋণের ভারে নুয়ে পড়েছে, বিভিন্ন সংস্থার কাছে এই ৫-৭টা কোম্পানির ঋণের পরিমাণ ১:১ এর তলায় চলে গেছে, মানে সম্পদের চেয়ে ঋণ বেশি। ৬) কোম্পানির ২২ জন মূল পরিচালকের মধ্যে ৮ জন সরাসরি আদানি পরিবারের সদস্য, এদেরই একজন তো এই কোম্পানিকে পারিবারিক ব্যবসাও বলেছে। 
এরপরে এই হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ নাম ধরে ধরে জানিয়েছে এই কোপানির কোন কোন পরিচালকের ওপর কোন কোন জালিয়াতির অভিযোগ আছে। ভুয়ো কোম্পানি তৈরি করে টাকা চালান করা, ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া, বিভিন্ন স্ক্যামে ফেসে থাকা থেকে শুরু করে সে এক বিরাট লিস্ট। রিপোর্ট বাইরে আসার পর থেকে আদানির ওই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো শেয়ারের দাম পড়ছে, কোম্পানির কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে আসছে। যদিও ২৬ তারিখেই আদানি গোষ্ঠী থেকে জানানো হয়েছিল, এ হল এক কুৎসা, অপপ্রচার, ভিত্তিহীন, আমরা এর বিরুদ্ধে আদালতে যাব। ওই দিনেই হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ জানায়, রাজি, আসুন আমেরিকার আদালতে, দুধ কা দুধ, পানি কা পানি হয়ে যাবে। তো এইখানে একটা কথা বলে নেওয়া উচিত, হঠাৎ এই হিন্ডেনবার্গের আগমন বা উদয় হল কেন? আদানি গ্রুপ এনাদের কোন পাকা ধানে মই দিয়েছিল? আসলে হিন্ডেনবার্গ গ্রুপের কাজ হল শেয়ার বাজারে আইপিও, এফপিও, বিভিন্ন বন্ড-এর আর্থিক অবস্থার পর্যালোচনা করা। ভালো বলাটাও তাদের কাজ, খারাপ বলাটাও তাদের কাজ। ওই শেয়ার বাজারে এটাকে শর্ট সেলিং বলা হয়। একটু বুঝিয়ে বলি, আপনার ৩০০০ ভেড়া আছে, আপনি বলেছেন আপনার ভেড়া দারুণ ভালো, এর লোম বিরাট দামে বিক্রি হবে, একটা ভেড়ার দাম হল ৩ লক্ষ টাকা। মানুষ কিনতেই পারে। তো একজন বলল, ধুস, তা আবার হয় নাকি, এর দাম বড়জোর ৫০ হাজার টাকা। বিক্রেতা বলল না ৩ লক্ষ টাকা। লোকটা বলল, বেশ তো আমাকে ২০০টা ভেড়া ধার দাও, সে ওই বাজারদরেই যারা ভেড়া কিনতে রাজি ছিল, তাদের সে ওই ভেড়া বিক্রি করে দিল, তারপর ক’দিন পরেই বোঝা গেল ভেড়ার দাম অত হতে পারে না, দাম নেমে ৫০ হাজার হবার পরে লোকটা ৫০ হাজার দিয়ে ২০০টা ভেড়া কিনে ফেরত দিয়ে দিল, তার লাভ হল দেড় লক্ষ ইন্টু ২০০, মানে তিন কোটি টাকা। একে বলে শর্ট সেলিং, তো এই হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সেই শর্ট সেলিংটা করল, আর এই কোম্পানির রেপুটেশনটা এমন যে এরা শর্ট সেলিং করলে আর রক্ষে নেই, হাতে নাতে প্রমাণ। ২৭ তারিখে বাজারে এফপিও-র চাহিদা নেই, উলটে আদানি সাম্রাজ্য নেমেছে ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২৯ তারিখে আদানি গ্রুপ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা ইত্যাদিকে দিয়ে ওই রিপোর্টের এক জবাব লেখাল বটে, কিন্তু আদালতে গেল না। ৩০ তারিখে আদানি সাম্রাজ্য নামল ৬৫ বিলিয়ন ডলার। আদানিরা ছোটাছুটি শুরু করল, বিভিন্ন সংস্থার কাছে, সৌদি আরবের এক সংস্থার কাছে বিশেষ করে, মুখ বাঁচাও, এফপিও কেনো। আপাতত টাকা দিয়ে বাঁচাও, কোনও হিন্দুরাষ্ট্র এগিয়ে এল না। কিন্তু সেই কিছু গোলমেলে কোম্পানির টাকা এল, খুচরো ইনভেস্টাররা এলই না, কিন্তু ওই আপাতত আনা টাকায় শেয়ার বিক্রি হয়ে গেল। পয়লা ফেব্রুয়ারি আদানি ঘোষণা করল, তারা এফপিও ফিরিয়ে নিচ্ছে, টাকাও ফেরত দিয়ে দেবে, এটাই সম্ভবত মুখ বাঁচানোর শর্ত ছিল, মুখ বাঁচাতে ২ দিনের জন্য টাকা দাও, দু’ দিন পরেই ফেরত দেব। কিন্তু ওই ১ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার কারমাইকেল মাইনিং প্রজেক্ট যা মোদিজির অস্ট্রেলিয়া ভিজিটের সময় আদানি সই করেছিলেন, তাঁরা জানালেন, তাঁরা ওই চুক্তি আবার খতিয়ে দেখবেন, ইতিমধ্যে আদানি সাম্রাজ্যে ধস নেমে গেছে। ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি টাকা হুসসস, ভ্যানিস। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: ব-এ বয়কট, প-এ পাঠান 

এখন বলতেই পারেন যে চোরচোট্টার টাকা ভ্যানিস হয়েছে বেশ হয়েছে, কিন্তু এখানেই সমস্যা, ওনার এই টাকার এক বিরাট অংশ জুগিয়েছিল এলআইসি আর স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। কেন? কেন তা তো চৌকিদার বলতে পারবেন, ২০ থেকে বাইশে আদানি গ্রুপের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪০০০ শতাংশ, এখন নামার পালা, কিন্তু এর মধ্যে আমার আপনার টাকা আছে, আমি আপনি আদানির শেয়ার না কিনলেও আছে, আমাদের এলআইসির প্রিমিয়াম, আমাদের স্টেট ব্যাঙ্কে রাখা সামান্য টাকা এখন বিপদে। এবং সময় বুঝে দেশের চৌকিদারের মুখে বোবা লেগেছে, তিনি আপাতত মৌনিবাবা, সংসদে বিরোধীরা আলোচনা চাইছে, আলোচনা করতে দেওয়া হচ্ছে না, অর্থমন্ত্রী চুপ। একের পর এক বিমানবন্দর জাহাজ বন্দর তুলে দেওয়া হয়েছে এই আদানিদের হাতে। কেরলে বাম সরকার যে কোনও মূল্যে আদানি পোর্টকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে, কমিউনিস্ট কংগ্রেস বিজেপি এক মঞ্চের তলায় এসে জিঞ্জিবার বন্দরকে আদানির হাতেই তুলে দেবার সংকল্প নিয়েছে। এরাজ্যেও, বাংলাতেও আদানি এসেছে, যদিও কাজকর্ম তেমনভাবে শুরু হয়নি, রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার আদানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে অল্টারনেটিভ এনার্জির বিরাট প্রকল্প করছে, আর মোদি সরকার তো মুক্তকচ্ছ হয়ে বিমানবন্দর তৈরি করে ডালি সাজিয়ে তুলে দিচ্ছে আদানিদের হাতে। একটা চোর ধরা পড়েছে, এর মানে দেশে একটা চোর আছে তাও তো নয়, তারাও পড়বে, ধন ধনাদন নয়, দন দনাদন করেই পড়বে, সেদিন দেশের মানুষ বুঝবে চৌকিদার চোর হ্যায়।  

Tags : Fourth Pillar Goutam Adani Narendra Modi Hindenburg Report চতুর্থ স্তম্ভ গৌতম আদানি নরেন্দ্র মোদি হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট

0     0
Please login to post your views on this article.LoginRegister as a New User

শেয়ার করুন


© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.