মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ কী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মানচিত্র থেকে?
কলকাতা টিভির সাংবাদিককে দেখে গঙ্গা ভাঙন নিয়ে অসহায়ভাবে এমনই জিজ্ঞাসা করলেন প্রতাপগঞ্জের প্রবীণ বাসিন্দা নাসিরুদ্দিন শেখ। পাড়ে ধাক্কা মারছে গঙ্গার স্রোত। সোমবার সেই এলাকায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, গত তিন বছরে সামশেরগঞ্জের সাতঘড়িয়ার ৫০০ বিঘে জমি গঙ্গা গিলে নিয়েছে। আমরা অনেক আগেই প্রশাসনের কাছে বলেছিলাম, বাঁধিয়ে দেওয়া হোক পাড়। কিন্তু, তা করা হয়নি। মহেশটোলা, প্রতাপগঞ্জের পর এবার সাতঘড়িয়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এদিন সকাল থেকে সাতঘড়িয়ায় ওই ভাঙন শুরু হয়েছে। এবছরের গঙ্গা ভাঙনে এখনও পর্যন্ত ধুলিয়ান পুরসভার ১৬ থেকে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়াও সামশেরগঞ্জ বিধানসভার বহু এলাকা গঙ্গার গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন Cyclone Sitrang: ঘণ্টায় ৯০ কিমি বেগে ঝড়, দোসর বৃষ্টি! কালীপুজোর আনন্দ মাটি করছে সিত্রাং
সাতঘড়িয়া এলাকায় ভাঙনে এখন জমি গিয়েছে। এরপর ঘর-বাড়ি যাবে। তাই ওই এলাকার মানুষ আগেভাগেই আতঙ্কে ঘরের জিনিস বাইরে বের করতে শুরু করেছেন। ঘর ছেড়ে চলে যেতে হবে। যেভাবে দফায় দফায় গঙ্গা ভাঙনে প্রতাপগঞ্জের বোগদাদনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বহু বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। সেই আতঙ্কের রেশ তাঁদের চোখেমুখেও। এবছর সেপ্টেম্বরের গোড়ায় সামশেরগঞ্জে প্রথম ভাঙন শুরু হয়েছিল মহেশটোলা গ্রাম দিয়ে। এখনও বহু মানুষ রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে অস্থায়ী থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেখানে রয়েছেন।
সামশেরগঞ্জের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের জীবিকা বিড়ি বাঁধা। পুরুষ ও মহিলা নির্বিশেষে বিড়ি বাঁধার পেশার সঙ্গে যুক্ত। দেখা গিয়েছে, অস্থায়ী শিবিরে থাকার সময় চোখের জল ফেলতে ফলতে ছোট ঘরে মানুষ, ছাগল, ঘরের আসবাবের মধ্যে জায়গা বের করে বিড়ি বাঁধছেন অনেকে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়ের কাছেই তাঁদের সবার দাবি, মাঝে মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বালির বস্তার বদলে গঙ্গার পাড়ে বোল্ডার ফেলা হোক। অথবা অন্য কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ভাঙন ওই এলাকার মানুষের কাছে প্রতি বছর আতঙ্ক নিয়ে আসে। বিগত কয়েক বছর ভাঙন হয়নি। এবার আবার সেই আতঙ্ক ফিরে এসেছে।
ফরাক্কা ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার কারণে নতুন করে গঙ্গার জলস্তর বেড়েছে। গঙ্গাপাড়ের অনেকেই ভেঙে পড়া ঘরে চাপা পড়ার ভয়ে বাড়ির বাইরে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের মাথার উপর দুর্যোগের খাঁড়া রয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়লেও লাগোয়া নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বৃষ্টি হবে। ফলে এখন সেখানকার বাসিন্দাদের জলে কুমির ডাঙায় বাঘ দেখার অবস্থা।