আর্জেন্তিনা–২, ৪ নেদারল্যান্ডস–২, ৩
(নাহুল মলিনা, লিওনেল মেসি–পেনাল্টি) (ওয়ুট ওয়েগহর্স)
ঘন্টা কয়েক আগে ক্রোয়েশিয়া যখন পিছিয়ে পড়ে গোল শোধ করে টাই ব্রেকারে ছিটকে দিল ব্রাজিলকে, তখন মনে হচ্ছিল আর্জেন্তিনাও না ছিটকে যায়। কারণ নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ৮৩ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকার পর আর্জেন্তিনা যখন পর পর দুটো গোল খেয়ে গেল তখন তাদের সামনেও সেই টাই ব্রেকারে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছিল। তাহলে কি একই রাতে বিদায় নেবে ব্রাজিল আর আর্জেন্তিনা? শেষ পর্যন্ত সে সব কিছু হয়নি। লিওনেল মেসির আর্জেন্তিনাই শেষ হাসি হাসল। মেসি নিজে ম্যাচের মধ্যে পেনাল্টিতে গোল করলেন। তার আগে দুর্দান্ত পাসে গোল করিয়েছেন নাহুল মলিনাকে দিয়ে। তার পর আবার টাই ব্রেকারের প্রথম শটে গোল করে দলকে এগিয়ে দিলেন। শেষ পর্যন্ত রাতটা হয়ে গেল মেসির। অধরা বিশ্ব কাপ জয়ের স্বপ্ন থেকে মেসি এখন আর দুই ম্যাচ দূরে। মঙ্গলবার রাতে সেমিফাইনালে তাদের মোকাবিলা ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে।
টাই ব্রেকারে আর্জেন্তিনার জয়ের নায়ক তাদের গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। ভার্জিল ভান ডাইক এবং স্টিভেন বারগুইসের শট বাঁচিয়ে তিনিই নায়ক। তবে নেদারল্যান্ডেসের হয়ে গোল করেছেন কুপমেইনেস, ডি জং এবং ওয়েগহর্স। আর্জেন্তিনার হয়ে মেসি ছাড়া বাকি গোলগুলি করলেন লেয়েন্দ্রো পারেদেশ, গঞ্জালো মনট্রিয়েল এবং লওতারো মার্টিনেজ। নেদারল্যান্ডস কোচ লুই ফান গাল ম্যাচের আগে বলেছিলেন, ২০১৪-র বিশ্ব কাপ সেমিফাইনালে মেসির আর্জেন্তিনার কাছে তারা টাই ব্রেকারে হেরেছিলেন। এবার তার বদলা নেবেন। শেষ পর্যন্ত সেই পেনাল্টি শুট আউটেই বিদায় হল তাদের। বদলা আর নেওয়া হল না।
চড়া মেজাজের ম্যাচটায় হলুদ কার্ড দেখানো হল ১৫জনকে। লাল কার্ড দেখলেন নেদারল্যান্ডসের ডেনজিল ডামফ্রিস। ম্যাচটা কখনও খুব ভাল হয়নি। হবে কী করে” দুই দলই তো প্রথম থেকে রণং দেহি মূর্তি নিয়ে হাজির। অমন ঠান্ডা মাথার প্লেয়ার মেসি, তাঁকেও তো হলুদ কার্ড দেখতে হল। তবে কেন তিনি বিশ্ব বন্দিত মেসি তা দেখালেন ৩৫ মিনিটে চমৎকার পাসে একটা গোল করিয়ে। বক্সের বাইরে থেকে বলটা ধরে শরীরের দোলায় যখন ম্যাজিক শুরু করলেন মেসি, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নেথান আকে তখনই ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। সেই জায়গা দিয়েই মেসি বলটা ঠেলে দিলেন মোলিনার জন্য। শেষ চেষ্টা করেছিলেন ফান ডাইক। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। ৭৩ মিনিটে পেনাল্টি পেল আর্জেন্তিনা। মার্কোস আকুনাকে বক্সের মধ্যে ফাউল করলেন ডাচ ডিফেন্ডার। মেসি যখন বলটা বসাচ্ছেন তখন মনে পড়ছিল, কদিন আগেই তাঁর পেনাল্টি মিসের কথা। পোল্যান্ডের গোলকিপার উইচেক সেজনি আটকে দিয়েছিলেন মেসির শট। এদিন কিন্তু মেসি গোল করলেন। ডান দিকে শট নেওয়ার ভান করে বিভ্রান্ত করে দিলেন নোভার্টকে। আর শটটা নিলেন ওর বাঁ দিক দিয়ে। ম্যাচ তখনই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হতে দিলেন না নাছোড়বান্দা ডাচ প্লেয়াররা। পর পর দুটো গোল করে আবহাওয়া পাল্টে দিলেন ওয়ের্গস্ট। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হল কোথায়? সেই হাসি মিখেই মাঠ ছাড়লেন মেসি। এটি তাঁর শেষ বিশ্ব কাপ। অধরা স্বপ্নটা পূরণ করতে আর দরকার দুটো ম্যাচে জয়। মনে হচ্ছে, মেসি পারবেন।