নয়াদিল্লি: ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Vote 2024) আগে ৯ রাজ্যের বিধানসভা ভোট বিজেপি (BJP) তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) কাছে এক বিরাট অগ্নিপরীক্ষা। কেননা, এতগুলি রাজ্যের ভোটের ফলাফলের উপর নির্ভর করবে তৃতীয় মোদি সরকারের ভবিষ্যৎ। তার মধ্যে চলতি মাসেই উত্তর-পূর্ব ভারতের তিন রাজ্যের ভোট দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। নাগাল্যান্ড (Nagaland) তার মধ্যে অন্যতম।
দীর্ঘদিন ভারতীয় জনতা পার্টি নাগাল্যান্ডের রাজনীতিতে দাঁত ফোটাতে না পারলেও, কংগ্রেস-মুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যে উত্তর-পূর্বের পার্বত্য রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে মিলিজুলি নীতিতে হাত বাড়িয়েছে তারা। মেঘালয়ের মতোই নাগাল্যান্ডেও বিজেপি প্রধান শক্তি না হয়েও সরকারে রয়ে গিয়েছে। এখানেও অন্যের কাঁধে চড়ে সর্বভারতীয় দল থেকে গায়ে আঞ্চলিক দলের গন্ধ মাখার চেষ্টায় রয়েছে তারা। যার জন্য ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (NDPP) হাত ধরে নিয়েছে।
আরও পড়ুন: Rajya Sabha on SCC: সুপ্রিম কোর্টে ১৮ জন বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ ফেরত পাঠিয়েছে কেন্দ্র
মুখ্যমন্ত্রী নেইফিয়ু রিও (Chief minister Neiphiu Rio) এনডিপিপি-র জনক। গত বিধানসভা ভোটের মুখে বিজেপির সাহায্যে এই আঁতাত গড়ে ওঠে। আঞ্চলিক কট্টর নেতাদের লক্ষ্য বানচাল করতেই এই চাল খেলে বিজেপি। এর আগে পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে বিজেপির পুরনো বন্ধুদল ছিল নাগা পিপলস ফ্রন্ট (NPF)। নতুন এই সমীকরণে নাগা শান্তি আলোচনার পালে টাটকা বাতাস লাগল। রিওর উপর আস্থা দেখিয়ে বিজেপি অন্যান্য গোষ্ঠীগুলিকে এক ছাতার তলায় আনতে সমর্থ হল। মোদি সরকারের সঙ্গে তারা চুক্তির পথে গেল।
সুতরাং, সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না, এই চিত্রনাট্যে এগিয়ে এনপিএফের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রিওকে কেন্দ্রীয় শাসকদলে থাকার সুবিধা বুঝিয়ে বিজেপি বশ করল। এভাবেই ২০১৮ সালের ভোটের আগে এনডিপিপি এবং বিজেপির মধ্যে ভোটচুক্তি হল। সেই অঙ্কের নিয়ম মেনে ২০১৮ সালে নাগারাজ্যে চমকপ্রদ ফল তুলে আনল পদ্মফুল। একলাফে ৬০ সদস্যের এই রাজ্যে ১১টি আসনে জয় পেল বিজেপি।
এবারের ভোটেও বিজেপি এবং এনডিপিপি হাত মিলিয়ে লড়ছে। তবে রিওর জোট যেহেতু শক্তিশালী, তাই আগের বছরের মতো এবারেও তারা আসন সমঝোতায় সিংহভাগ নেবে। অর্থাৎ গত ভোটের মতোই প্রায় ৪০ আসনে লড়বে এনডিপিপি এবং বিজেপিকে ২০টি আসন ছাড়বে। তবে এবার যদি বিজেপি আরও কয়েকটি আসন পেয়ে যায়, তাহলে সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও দর কষাকষির ভালো জায়গায় পৌঁছে যাবে তারা।
সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরনোর নীতিতেই রাজনীতি করে বিজেপি। সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, কংগ্রেসের দুর্গ উত্তর-পূর্ব ভারতে যেভাবে তারা থাবা বসিয়েছে। প্রথমে একটি আঞ্চলিক দলের সঙ্গে হাত মেলানো। তারপর তাদের কাঁধে চেপে তাদেরই সাম্রাজ্য ঠুকরে ঠুকরে খেয়ে নেওয়া। সবশেষে তাদেরই উপর ভর দিয়ে পুতুল সরকার করে দেওয়া। যার চাবিকাঠি থাকবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে।