কলকাতা: মহার্ঘভাতা নিয়ে যতখানি জোরাল আওয়াজ উঠেছে, ঠিক ততটা জোরেই প্রশ্নও উঠেছে৷ রাজ্য সরকার (West Bengal State Government) কি মহার্ঘভাতা বা ডিয়ারনেস অ্যালাওয়্যান্স (Dearness Allowance – DA) দিতে বাধ্য? নাকি বাধ্য নয়? রাজ্য রাজনীতি এখন এই প্রশ্ন আর তার উত্তর নিয়ে উত্তাল৷ প্রশ্ন উঠছে, ডিএ সরকারি কর্মচারীদের অধিকার (Rights of the Government Officials), নাকি এটা সরকারের দেওয়া নেহাতই অনুদান (Grants)। যদি অধিকার হয়ে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার (State Government) তা দিতে বাধ্য। আর যদি অনুদান হয়ে থাকে, তাহলে রাজ্য সরকার তা দিতেও পারে, আবার নাও দিতে পারে। পুরো বিষয়টাই নির্ভর করছে রাজ্য সরকারের উপর। ডিএ নিয়ে পুরনো মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ও সেই কথা বলছে।
বকেয়া ডিএ এবং কেন্দ্রের সমান মহার্ঘভাতা পাওয়ার দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন চলছে৷ তাঁরা বিক্ষোভও দেখাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, বকেয়া ডিএ দিতে হবে এবং সেই সঙ্গে কেন্দ্র সরকারের কর্মচারীরা যে হারে বেতনের উপর মহার্ঘভাতা পান, সেই একই হারে তাঁদেরও ডিএ দিতে হবে।
আরও পড়ুন: DA | Supreme Court | ডিএ মামলা নিয়ে ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায় কী ছিল?
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারি কর্মচারীরা যাতে দৈনন্দিন জীবনে খরচ-খরচা সামলাতে পারেন, সেই কথা মাথায় রেখেই সংশ্লিষ্ট সরকার বেতনের (Salary) উপর বর্ধিত ভাতা দেয়, তাকেই মহার্ঘভাতা বলা হয়। ডিএ দেওয়া নিয়ে লিখিত কোনও নিয়ম-কানুন নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুকরণে সংশ্লিষ্ট ডিএ ঘোষণা করা হয় রাজ্যে। কেন্দ্র ও রাজ্যের ডিএ দেওয়ার মধ্যে যে ফারাক রয়েছে, তাতে সমতা আনার দাবি অনেক দিন ধরেই ছিল। মহার্ঘভাতা নিয়ে রাজ্য সরকারের কর্মীদের আন্দোলন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) অবশ্য রায় দিয়েছে কর্মীদের ডিএ দিতে হবে। কিন্তু এর মধ্যে প্রশ্ন হল, মহার্ঘভাতা কি সরকারি কর্মীদের অধিকার, নাকি তাঁদের উদ্দেশে দেওয়া সরকারের অনুদান? অধিকার হয়ে থাকলে, রাজ্য সরকার দিতে বাধ্য। আর যদি অনুদান হয়ে থাকে, সরকার তা দিতেও পারে, আবার নাও দিতে পারে।
১৯৫৪ সালের ১৩ মে। মহার্ঘভাতার দাবি নিয়ে মধ্যপ্রদেশের সরকারের (Madhya Pradesh Government) বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন ওই রাজ্যের সরকারি কর্মীরা। সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) হওয়া ওই মামলায় বিচারপতি নির্দেশনামায় জানিয়েছিলেন, মৌলিক অধিকারের ৪৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, স্থানীয় প্রশাসন এই ধরনের ভাতা কোনও কর্মীকে দিতেও পারেন, আবার নাও দিতে পারেন। ভাতা দেওয়া হলে, সেক্ষেত্রে গোটা বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের (Local Administration) নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে। সাংবিধানিক নিয়ম মেনে তাই প্রশাসনই ঠিক করবে কর্মীদের ভাতা দেওয়া হবে কি না। ভাতা দিলে তার শর্তাবলী ও পরিমাণ ঠিক করে দেবে প্রশাসন। ভাতা পাওয়ার অধিকার কর্মীদের নেই, প্রশাসন দিতেও বাধ্য নয়।
এখানে উল্লেখ্য, মধ্যপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে হওয়া ওই মামলা খারিজও করে দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত (Apex Court)। দেখে নিন ১৯৫৪ সালে ডিএ মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনামা –