নয়াদিল্লি: গুনিজনেরা বলেন যোগ্যতা যাই থাকুক না কেন, কোনও কাজই ছোটবড় নয়। পেশা (Occupation) আখেরে পেশা, তাই তাকে সবসময়ই সম্মান করতে হয়। কিন্তু, তাই বলে চায়েওয়ালি (Tea Seller) হওয়ার জন্য মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে দিতে পারবেন? তাও আবার ব্রিটিশ কাউন্সিলের চাকরি (British Council’s Job)। এমনটা আবার হতে পারে নাকি! হ্যাঁ, বাস্তবেই এমন উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন দিল্লির পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পাশ চায়েওয়ালি। আজ তাহলে সেরকমই এক ব্যতিক্রমী মহিলার সঙ্গে পরিচয় করে নিন। চায়েওয়ালি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যিনি উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন নির্দ্বিধায়।
শর্মিষ্ঠা ঘোষ (Sharmistha Ghosh)। ইংরেজি সাহিত্যে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট (Post Graduate in English Litrature) করেছেন। দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের গোপীনাথ বাজারে (Delhi Cantt’s Gopinath Bazar) এলেই চোখে পড়বে ঠেলা গাড়ির উপর তাঁর ছোট্ট চায়ের দোকান (Chai Stall on Wheels)। তাঁর স্বপ্ন একদিন টি-ক্যাফে (Tea Cafe) খুলবেন। এখানেই শেষ নয়, ইচ্ছে চায়োস (Chaayos)-এর মতো বড় চেইন বিজনেস (Chain Business) খুলবেন তাঁর স্বপ্নের টি-ক্যাফের। তাই ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি (British Council Library)-র চাকরি করতে করতেই একদিন সাহসী সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেন শর্মিষ্ঠা। চাকরি ছেড়ে (Quitting Job), ঠেলা নিয়ে সটান রাস্তায় চায়েওয়ালি হয়ে।
এখন নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করছে, কী করে হঠাৎ সংবাদ মাধ্যমের (News Media) নজরে চলে এলেন তিনি? এখানে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার (Social Media) কামাল। কিন্তু, ফেসবুক (Facebook), ইনস্টাগ্রাম (Instagram) কিংবা টুইটার (Twitter) নয়, চাকরি সংক্রান্ত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট লিঙ্কডইন (Social Networking Site – LinkedIn)-এ শর্মিষ্ঠার কাহিনি ছবিসহ পোস্ট করেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার সঞ্জয় খান্না (Retired Brigadier Indian Army Sanjay Khanna)। দিল্লির বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা ঘোষের ছবি সহ একটা লম্বা মেসেজও লিখেছেন তিনি। সেখানে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার বলছেন, “আমি কৌতূহলী হয়ে পড়েছিলাম। তাই ওঁকে কারণটা জিজ্ঞাসা করে বসি। উনি তখন আমাকে বলেন, তাঁর একটা দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বপ্ন (Vision and Dream) রয়েছে চায়োসের মতো বড়ো দোকান খোলার, যা বিভিন্ন স্থানে থাকবে।”
শর্মিষ্ঠার বান্ধবী ভাবনা রাও লুফথানসা (Lufthansa)-তে কাজ করেন, তিনিও এই ছোট টি স্টলের (Tea Stall) যুগ্ম অংশীদার (Joint Partner)। শর্মিষ্ঠার বাড়িতে যিনি কাজ করেন (House Helper), সন্ধ্যার দিকে তিনিও আসেন সহযোগিতা করতে, তারপর তাঁরা একসঙ্গেই বাড়ি ফেরেন চায়ের ঠেলা নিয়ে। একজন উচ্চশিক্ষিত, যোগ্যতা সম্পন্ন মহিলা (Highly Educated and Qualified Woman) দিল্লির রাস্তায় চা বিক্রি করছেন, রাত্রিবেলা আবার সেই ছোট টি স্টল নিয়ে বাড়ি ফেরন, স্বভাবতই এই দেখ বেশ মুগ্ধ (Overwhelmed) হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা বিগ্রেডিয়ার। তিনি পোস্টে আরও লিখেছেন, “আমি ওনার অনুমতি নিয়েই ওনার ছবি সহ এই পোস্টটা লিখছি। আমি মনে করি, কোনও কাজই ছোট কিংবা বড় নয় এবং এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে তুলে ধরা উচিত, যাতে অন্যরা অনুপ্রাণিত (Motivation) হন। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে অবশ্যই আবেগ এবং সততা থাকতে হবে।”
লিঙ্কডইনে এই পোস্টটি ১২ জানুয়ারি পাবলিশ হওয়ার পর ৩০ হাজারেরও বেশি লাইক (Like) পেয়েছে, কমেন্ট (Comment) হয়েছে এক হাজারের কাছাকাছি, রিপোস্ট (Repost)-এর সংখ্যা ছ’শো বারেরও বেশি। লিঙ্কডইনে বেশ প্রশংসিত হয়েছে পোস্টটি। কমেন্টে অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শর্মিষ্ঠাকে। শুভ কামনায় বার্তা, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট চায়েওয়ালি শর্মিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হোক (Dream Comes True)।