রান্নায় আলু, পেঁয়াজ, রসুনের জুরি মেলা ভার। কিন্তু শুধুই কী তা খাওয়ার জন্য? না, খাওয়ার বাইরেও এর উপকারিতা রয়েছে৷ এই সমস্ত সবজির খোসাও কাজে লাগে৷ আর তা প্রমান করল বেঙ্গালুরুর কিশোরী। মাত্র ১০ বছরে আলু পেঁয়াজ রসুনের খোসা দিয়ে পরিবেশ বান্ধব কাগজ তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মান্য হর্ষ।
রান্নার জন্য বাড়িতে কিনে আনা সবজির বর্জ্য স্থান পায় ডাস্টবিনে৷ যা অনেক ক্ষেত্রেই পরিবেশকে দূষিত করে৷ পরিবেশের ফেলে দেওয়া বর্জ্যকে ভালো কাজে ব্যবহারের চেষ্টা করছে মান্য। পরিবেশ সংরক্ষণে তার প্রচেষ্টার জন্য ইউএন-ওয়াটার সন্মানিত করেছে। এই বিষয়ে মান্য জানিয়েছে, মাত্র ১০টি পেঁয়াজের খোসা দিয়েই ২ থেকে ৩ টে A4 সাইজ পেপার তৈরি করা যেতে পারে।
কীভাবে এই কিশোরী পরিবেশবিদ বাড়িতেই সবজির খোসা থেকে কাগজ তৈরি করেছেন?
প্রথমে সবজির খোসাগুলিকে বাড়িতে জোগাড় করতে হবে। তাঁর পর যে রঙের কাগজ তৈরি করতে চান সেই সবজি জোগাড় করতে হবে। যেমন- পেঁয়াজের খোসা থেকে পেঁয়াজি রঙের কাগজ, ভুট্টার খোসা থেকে বাদামি রঙের কাগজ।
দ্বিতীয় পর্যায়ে খোসাগুলিকে একটি প্রেসার কুকারে জল আর বেকিং সোডা দিয়ে ৩ ঘণ্টা সেদ্ধ হতে দিতে হবে। সেদ্ধ হয়ে গেলে পুরোটা মণ্ডটি মিক্সারে দিয়ে মিহি করে নিতে হবে। এরপর টাটকা জলের সঙ্গে মিশ্রণটিকে মিশিয়ে দিতে হবে।
তৃতীয় পর্যায়ে মিশ্রণটিকে এবার একাটা সমতল ভুমিতে বা পাতলা কাপড়ের ওপর ঢেলে দিতে হবে৷ এই পদ্ধতিতে মিশ্রণ থেকে অতিরিক্ত জল বের করে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর মিশ্রনটিকে একদিনের জন্য শুকোতে দিতে হবে।
পরদিন সকালে শুকিয়ে গেলেই পাওয়া যাবে রঙিন পেপারের মতো তৈরি সবজির খোসা দিয়ে তৈরি A4 সাইজ পেপার।
সক্রিয় পরিবেশ কর্মী মান্য বেঙ্গালুরুর ভিবগায়র হাই বি টি এম স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ছোট থেকেই সবুজ প্রকৃতির মধ্যে বড় হয়েছে মান্য। ফলে তখন থেকেই গাছপালার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। বড় হতেই বুঝতে শুরু করে ছোট শহর আবর্জনার সমস্যা। তখন থেকেই মাথায় ঘুরত এই আবর্জনা বা বর্জ্য পদার্থ দিয়েই এমন কিছু করতে হবে, যাতে আবর্জনার পরিমান কমে। সেই পরিকল্পনা মতোই শুরু হয় তার কাজ। শিশুদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করা।
এমনকি পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি প্রকৃতির বিষয় নিয়ে পাঁচটি বইও লিখেছে মান্য। সম্প্রতি অব্যবহৃত আবর্জনায় দূষণের সমস্যা মোকাবিলার জন্য মার্কোনাহল্লি বাঁধ এবং ভারকা সমুদ্র সৈকতে একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের আয়োজন করেছিল। ২০২০ সালে সচেতনতা ছড়ানোর জন্য অ্যানিমেটেড স্বল্পদৈর্ঘ্যের একটি চলচ্চিত্র তৈরির কারণে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস দ্বারাও তাঁকে সন্মানিত করা হয়।