ফের মানচিত্র বিতর্ক। সৌজন্যে সেই চীন। এবার সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এ (Shanghai Cooperation Organisation) মানচিত্র। যে মানচিত্রে দেখানো হয়েছে ভারতের থেকে কাজাখস্তানের আয়তন বড়। আদতে কাজাখস্তানের আয়তন ২,৭২৪,৯০০ কিমি। অন্যদিকে, ভারতের আয়তন ৩,২৮৭,২৪০ কিমি। ভুলের শেষ এখানেই নয়। প্রকাশিত মানচিত্রে দেখা গিয়েছে কাশ্মীর এবং অরুণাচল প্রদেশ (Kashmir and Arunachal Pradesh are missing) ভারতের অংশ নয়। আর এই ভুল মানচিত্র সোশ্যাল মিডয়াতে রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।
Chinese state media’s map of #SCO, India even looks smaller than Kazakhstan; Kashmir and Arunachal Pradesh are missing. pic.twitter.com/No34r2eozZ
— Ashok Swain (@ashoswai) September 16, 2022
ইউরেশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতি, রাজনীতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে ২০০১ সালে সাংহাইয়ে এক সম্মেলনে এসসিও (SCO) তৈরি হয়। নেতৃত্বে ছিল চীন । ভারত প্রথমে পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ২০১৭ সালে স্থায়ী সদস্যের পদ লাভ করে। একই বছর সদস্য হয় পাকিস্তানও। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনীতি বিষয়ক আট সদস্যের সংগঠন এসসিও-র নেতৃত্বে রয়েছে চীন। সংগঠনে রয়েছে চার পর্যবেক্ষক দেশ— আফগানিস্তান, বেলারুশ, ইরান ও মঙ্গোলিয়া। এ ছাড়া আলোচনার অংশীদার ছয়টি দেশ হল আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, কম্বোডিয়া, নেপাল, তুরস্ক ও শ্রীলঙ্কা।
আরও পড়ুন: কয়েক বছরের মধ্যে আরও আফ্রিকান চিতা ভারতে আসবে, জানালেন প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর
সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে চীনের মতপার্থক্য দীর্ঘ দিনের। জম্মু-কাশ্মীরের অংশবিশেষ চীন দখল করে রেখেছে। সিকিমকে ভারতের অংশ হিসেবে মানতে চীন নারাজ। অরুণাচলকে দক্ষিণ তিব্বত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চিন তৎপর। বার বার সীমান্ত লঙ্ঘন করে চীনা সেনা। কখনও লাদাখে, কখনও উত্তরাখণ্ডে ঢুকে পড়ে তারা। সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ১৯৬২ সালে পুরোদস্তুর যুদ্ধ হয়ে গিয়েছে ভারত ও চীনের মধ্যে। ১৯৬৭ সালে হয়েছে বড়সড় সংঘর্ষ। তার পরেও সীমান্ত বিবাদ স্থায়ী ভাবে মেটানোর আগ্রহ চীন দেখায়নি, তার পরেও বার বার তারা সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে, তার পরও তারা উত্তেজনা জিইয়ে রাখার চেষ্টা করেছে।
আরও পড়ুন: মোদির চিতা নিয়ে কংগ্রেস-বিজেপির হুঙ্কার, ভারতে বাঁচবে তো ‘নির্বিবাদী’ পশু!
চীনের এমন কোনও প্রতিবেশী দেশ নেই, যার সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে চীনের বিরোধ নেই। কোনও কোনও দেশের সঙ্গে সে বিরোধ চীন মিটিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ভারত বা জাপানের মতো যে সব দেশ এশিয়ায় চীনা একাধিপত্য কায়েমের চেষ্টার পথে সবচেয়ে বড় বাধা, তাদের সঙ্গে বিবাদ জিইয়ে রাখতেই চীন বেশি আগ্রহী। তিব্বতকে চীনের অংশ হিসেবে এককালে মানত না ভারত। পরে মেনে নিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় সে স্বীকৃতিও দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তার পরেও চীন নিজেদের অবস্থান থেকে নড়েনি। অরুণাচল বা সিকিম নিয়ে নিজেদের অবান্তর দাবি থেকে সরে যাওয়ার কোনও ইঙ্গিত দেয়নি। এখনও নিয়মিত সেই বিতর্ক উস্কে দেওয়ার নীতিতেই বেজিং বিশ্বাস রাখছে। বলা বাহুল্য, ভারতের মতো দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক না বাড়িয়ে উত্তেজনা বহাল রাখার চেষ্টা কোনও দেশের পক্ষেই বিবেচকের মতো কাজ নয়। সামরিক বা অর্থনৈতিক— কোনও মাপকাঠিতেই ওই ধরনের প্রয়াসকে ইতিবাচক ভাবে দেখেন না আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা।