কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: উৎসবের মুখে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির হারে যখন আমজনতার নাভিশ্বাস উঠেছে, তখনই বারাণসীর জেলা আদালত কাশীর জ্ঞানব্যাপী মসজিদ চত্বরে হিন্দুদের পুজোর বিরুদ্ধে মসজিদ কমিটির মামলা খারিজ করে দিল। বিচারক অজয় কৃষ্ণ বিশ্বেশ রায় দিয়েছেন, কীসের ভিত্তিতে পাঁচ হিন্দু মহিলা মসজিদ চত্বরে পুজোর অনুমতি চেয়েছিলেন, তা নিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুনানি চলবে। ওই মসজিদের পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির আর্জি ছিল, মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হোক। জেলা আদালত উল্টে মসজিদ কমিটির আবেদনই খারিজ করে দিয়েছে।
জেলা আদালতের এই রায়ে স্বাভাবিকভাবেই উল্লসিত হিন্দু সমাজ। সোমবার আদালত চত্বরেই মিষ্টি বিলি হয়েছে। হিন্দুরা এতে তাদের জয় দেখছে। মসজিদ কমিটি এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবে বলে ঠিক করেছে। কিন্তু তাতে লাভ কতটা হবে, তা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে জেলা আদালতের এই রায়ে পরিষ্কার হয়ে গেল, বিজেপি, আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হাতে বড় তাস এসে গেল। অযোধ্যায় রামমন্দির আন্দোলনের সময় কট্টর হিন্দুরা আওয়াজ তুলেছিল, অযোধ্যা তো ঝাকি হ্যায়, কাশী মথুরা বাকি হ্যায়। এই রায়ে তারা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। আগামী দিনে এই রায়কে সামনে রেখে যে সঙ্ঘ পরিবার এগিয়ে যাবে, তা বলাই বাহুল্য।
বর্তমানে দেশে আমজনতার হাল খুবই খারাপ। শিক্ষিত যুব সমাজের চাকরি নেই, সরকারি সংস্থাগুলি বেসরকারি হাতে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, বিজেপি ঘনিষ্ঠ দুচারজন ধনী ব্যবসায়ী মোদির বদান্যে ফুলে ফেঁপে উঠছেন। আদানি, আম্বানিদের পোয়া বারো। এদিকে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। বললেই দেশদ্রোহী তকমা পেতে হবে। দরকার হলে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।
সোমবার কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের দেওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, অগাস্ট মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। ধাক্কা খেয়েছে শিল্পবৃদ্ধির হারও। জুলাই মাসে তা নেমে এসেছে ২.৪ শতাংশে। জুনে শিল্পবৃদ্ধির হার ছিল ১২.৭ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, সব ঠিক হ্যায়। অর্থ মন্ত্রক বলছে, মূল্যবৃদ্ধির হার মাত্রাছাড়া হয়নি। কিন্তু মানুষ বাজারে বেরিয়ে টের পাচ্ছে, কত ধানে কত চাল। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসে হাত দিলেই আগুনের তাপ লাগছে। এই পরিস্থিতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে সুদের হার বাড়াবে, তা চোখ বুজে বলে দেওয়া যায়।
আরও পড়ুন: Hyderabad Incident: হায়দরাবাদের ইলেকট্রিক স্কুটারের শো-রুমে আগুন, মৃত ৮
দেশে আমজনতা যখন খাবি খাচ্ছে, তখন মন্দির মসজিদ নিয়ে ফের আদিখ্যেতা শুরু হয়েছে। বারাণসী জেলা আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই বলছেন, পরিস্থিতি বাবরি মামলার পথেই যাচ্ছে। এমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওআইসির কথায়, যে ভয় পেয়েছিলাম, তাই হতে চলেছে। হিন্দুবাদী নেতা এবং অন্যতম মামলাকারী সোহনলাল আর্য বলেন, এই রায়ের ফলে জ্ঞানবাপীতে মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর তো একরকম স্থাপিত হয়েই গেল। উত্তরপ্রদেশে সোমবার থেকে খুশির তুফান উঠেছে।
রাজনৈতিক মহল বলছে, এরপর এই রায়কে ঘিরে বিভিন্ন হিন্দু বাহিনীর লাফঝাঁপ শুরু হয়ে যাবে। পুজো নিয়ে শুনানি শুরু ২২ সেপ্টেম্বর থেকে। কতদিন চলবে, কেউ জানে না। দেখতে দেখতে ২০২৪ এর লোকসভা ভোট চলে আসবে। বিজেপি সেই ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি চালিয়ে যাবে। নানা কারণে দেশের মানুষের যে ক্ষোভ রয়েছে, তার থেকে দৃষ্টি ঘুরে যাবে জ্ঞানব্যাপীর দিকে। বিজেপিও সেটাই চায়। এই রায়ে বিজেপি মন্দির রাজনীতি করার ভালো অস্ত্র পেয়ে গেল।