বেঙ্গালুরু: সারা দেশেই বিভিন্ন সময়ে চিকিৎ সকদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। কখনও কখনও গাফিলতির কারণে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেই সব ঘটনাকে ঘিরে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে জনরোষও আছড়ে পড়ে। কর্নাটকে এক চিকিৎ সকের মানবিক মুখ বাঁচিয়ে দিল এক রোগীকে। তুমুল বৃষ্টির কারণে বেঙ্গালুরুতে প্রবল যানজটে আটকে পড়েছিল শল্য চিকিৎ সক গোবিন্দ নন্দকুমারের গাড়ি। এদিকে হাসপাতালে জরুরি অস্ত্রোপচার রয়েছে। সাতপাঁচ না ভেবে তিনি গাড়ি ছেড়ে দৌড় শুরু করলেন। প্রায় তিন কিমি পথ দৌড়ে গোবিন্দ হাসপাতালে পৌঁছন। তারপর রোগীর অপারেশন করেন। অপারেশনের পর তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে তাঁর মুখে। ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই ধন্যবাদ আর অভিনন্দনের বন্যা বয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, মনিপাল হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএনটারোলজির সার্জন গোবিন্দ নন্দকুমার। গত ৩০ অগাস্ট হাসপাতালে তাঁর একটি ল্যাপ্রোস্কোপিক গলব্লাডার অপারেশনের কথা ছিল। কিন্তু সারজাপুর-মারাঠাহাল্লি সড়কে বৃষ্টির কারণে যানজটের মধ্যে আটকে পড়ে তাঁর গাড়ি। অপারেশনে দেরি হলে মহিলা রোগীর প্রাণহানিও হতে পারত। অথচ যানজটের কবলে পড়ায় তাঁর গাড়ি একটুও এগোতে পারছে না। সমস্ত যানবাহন রাস্তায় স্থবির। গোবিন্দ ঘনঘন ঘড়ি দেখছেন। শেষে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, গাড়ি ছেড়ে দৌড়েই চলে যাবেন হাসপাতালে। যেই ভাবা, সেই কাজ। চালককে গোবিন্দ বললেন, তুমি গাড়িতে থাক। আমি চললাম হাসপাতালে। হাতে তাঁর মাত্র ৪৫ মিনিট সময়। তিন কিমি পথ তিনি দৌড়ে পেরিয়ে গেলেন। ঠিক সময়েই পৌঁছলেন হাসপাতালে।
প্রস্তুতি নিয়ে ঢুকে গেলেন ওটিতে।
সংবাদমাধ্যমকে গোবিন্দ বলেন, সঙ্গে আমার চালক ছিলেন। তাই গাড়ি মাঝরাস্তায় ছেডে় দিতে আমার অসুবিধা হয়নি। আমার দৌড়তেও কোনও সমস্যা হয়নি। কারণ, আমি নিয়মিত জিম করি। না দৌড়লে সময়ে পৌঁছতে পারতাম না। ওই চিকিৎ সকের আরও দাবি, এটাই তাঁর জীবনের প্রথম ঘটনা নয়। তাঁর কথায়, এর আগেও আমি গাড়ি ছেড়ে হেঁটে হাসপাতালে গিয়েছি, কখনও রেল লাইন পেরিয়ে যেতে হয়েছে। অবশ্য আমার কোনও চিন্তা ছিল না। কারণ, আমাদের হাসপাতালে প্রচুর কর্মচারী রয়েছেন, পরিকাঠামোও খুব ভালো।
গত কয়েকদিন ধরেই তুমুল বৃষ্টির কারণে হাইটেক শিল্পনগরী বেঙ্গালুরুতে জনজীবন বিপর্যস্ত। বহু রাস্তা, বাড়ি জলের তলায়। অফিসকাছারিও জলমগ্ন। তার মধ্যে ডাঃ গোবিন্দের রোগীর প্রতি এই কর্তব্যবোধ সাধারণ মানুষকে অবাক করে দিয়েছে। বলাবলি হচ্ছে, সব ডাক্তার যদি এমন হতেন, তা হলে কী ভালোই না হত।