কলকাতা: ভবানীপুর উপনির্বাচন থেকে বামেদের প্রাপ্তি কার্যত শূন্য। সিপিএমের ঝুলিতে সাকুল্যে গিয়েছে মাত্র ৪ হাজার ২২৬টি ভোট। ২১-এর বিধানসভা ভোটেও জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীর। কংগ্রেসের মহম্মদ সাদাব খান পেয়েছিলেন মাত্র ৪.০৯ শতাংশ ভোট। কয়েকমাসের ব্যবধানে সেই ভোট আরও কমল।
এ বারের উপনির্বাচনে বাম প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাস পেলেন ৩.৫৬ শতাংশ ভোট। নির্বাচনে নোটাকে হারিয়ে তৃতীয় স্থান দখল করতে রীতিমতো কালঘাম ছুটেছে তাঁর। নির্বাচনী ফলাফল পর্যালোচনা করে আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে। ১৫টি বুথে সিপিএম খাতাই খুলতে পারেনি। অর্থাৎ, ২৬৯টি বুথের মধ্যে ১৫টি বুথে সিপিএমের প্রাপ্ত ভোট শূন্য।
আরও পড়ুন: ভবানীপুরে রেকর্ড ভোটে জয় মমতার, কার্যত নিশ্চিহ্ন বিজেপি-সিপিএম
এই ফল থেকে এটা পরিষ্কার যে, ওই বুথে সংগঠনের নেতা কর্মীরাও সিপিএম প্রার্থীকে ভোট দেননি। তবে তাঁরা কাকে ভোট দিলেন? একুশের ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর আত্মসমীক্ষার কথা বলা বিমান বসুরা এ বার কী যুক্তি দেয় সেটা দেখার! ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও দলের এ হেন করুণ অবস্থা নিঃসন্দেহে চিন্তা বাড়াবে আলিমুদ্দিনের।
এতো গেল সিপিএমের কথা। বিজেপির অবস্থা তো আরও করুণ। সোনার বাংলা গড়ার ডাক দিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে প্রচার চালিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় নেতারা। মোদি-শাহ-নাড্ডা কার্যত ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেছিলেন। এ বারের উপনির্বাচনে অবশ্য বঙ্গে নেতাদের উপরই ভরসা রেখেছিল গেরুয়া শিবির।
আরও পড়ুন: কোথাও নেই বামেরা, নোটা থেকে এগিয়ে সিপিএমের শ্রীজীব
বিজেপির তারকা প্রচারকরা ভবানীপুরের প্রচারও করে গিয়েছেন। প্রচারের শেষ লগ্নে হাওয়া গরম করারও চেষ্টা করেছিলেন দলের নেতারা। ভোটের দিন ভবানীপুরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত দৌড়ে বেড়িয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। তাঁর নিট ফল কী? বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষ পেয়েছিলেন ৩৫ শতাংশ ভোট। প্রিয়াঙ্কা পেলেন ২২ শতাংশ ভোট।
কোনও ওয়ার্ডেই জিততে পারেননি বিজেপি প্রার্থী। ২৬৯টি বুথের মধ্যে মাত্র ২৭টি বুথ থেকে লিড নিতে পেরেছেন টিবরেওয়াল। শুভেন্দুকে পাশে বসিয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রিয়াঙ্কা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটে হেরে গেলেও ম্যান অফ দ্য ম্যাচ তিনিই। মমতাকে জয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানালেও ভবানীপুরে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলেছেন আইনজীবী প্রার্থী।
আরও পড়ুন: ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল প্রিয়াঙ্কা
চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনের পরই রাজ্যের পুরসভাগুলিতে ভোট হওয়ার সম্ভাবনা। নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী সে রকম ইঙ্গিতই দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ভোট হবে কলকাতা পুরসভাতেও। তার আগে ভবানীপুর উপনির্বাচনের এই রেজাল্ট নিঃসন্দেহে চিন্তা বাড়াবে গেরুয়া শিবিরের।
এ বারের উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৮৫ হাজার ২৬৩টি ভোট পেয়েছেন। ৭১.৮৮ শতাংশ ভোট গিয়েছে তৃণমূলের ঝুলিতে। বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল ২২.২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ২৬ হাজার ৪২৮। সিপিএমের শ্রীজীব বিশ্বাস ৪২২৬টি ভোট পেয়েছেন। শতাংশের বিচারে যা ৩.৫৬।
আরও পড়ুন: উপনির্বাচনের ভোটগণনার পরেও হতে পারে হিংসা, আশঙ্কা প্রিয়াঙ্কার