বর্ধমান: স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলেও এখনও বর্ধমান রেলস্টেশন (Bardhaman Station) জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ। নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে যাত্রিরা। ঘটনার পর আটটি প্লাটফর্মের মধ্যে ১,২,৩ প্লাটফর্ম বন্ধ থাকলেও বুধবার রাত থেকে তিনটে প্লাটফর্মে খুলে দেওয়া হয়েছে। সেই কারণে দুই নম্বর তিন নম্বর প্লাটফর্মেও ট্রেন চলাচল করছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে গিয়েছে বর্ধমান স্টেশন। কিন্তু যাত্রীদের মধ্যে ভয় আর আতঙ্ক আজও রয়েছে। বুধবার ঘটনার সাক্ষী ছিলেন। কোনও রকমে প্রাণ বেঁচেছেন।ভাঙা ট্র্যাঙ্কটি রয়েছে সেটা উপর থেকে নিচে না নামানোর কারণে আতঙ্কে ভুগছে যাত্রীরা।
বুধবার বেলা বারোটা। বর্ধমান রেলস্টেশনে (Bardhaman Station Water tank collapse) হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা চত্বর। দেখা গেল দু নম্বর ও তিন নম্বর প্লাটফর্ম এর মাঝে ১৮৯০ সালে তৈরি ১৩৩বছরের পুরানো একটি জলাধার তার এক দিক ফেটে বিপুল পরিমাণ জলও তীব্র বেগে নিচে পড়েছে। সেই সময় ট্রেন ধরার জন্য বহু যাত্রী অপেক্ষা করছিলেন। ছিলেন বহু মহিলা ও শিশুও। হাওড়া, শিয়ালদহ, কেউ আবার বোলপুর শাখার ট্রেন ধরার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। হুড়মুড়িয়ে ট্যাঙ্ক ও শেড ভেঙে পড়ায় চাপা পড়ে যান যাত্রীরা।
ঘটনায় জখম ৪০ জন, মৃত্যু হয় তিনজনের। দুর্ঘটনার পর গতকাল গতরাতে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়রা অভিযোগ করে রেল দফতর থেকে কোন অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা না করায় টোটো চালকরা তাদের উদ্যোগে উদ্ধার কাজ চলেছে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে আহত যাত্রীদের।
আরও পড়ুন: বাকিবুরের স্ত্রী-শ্যালকের অ্যাকাউন্টে বিপুল টাকা, চার্জশিটে ইডি
দুর্ঘটনার পরই সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যান আরপিএফ, জিআরপির কর্মী আধিকারিকরা। পরে পৌঁছয় বর্ধমান থানার পুলিশও। উদ্ধারকাজে মালগাড়িতে পণ্য ওঠানো নামানোর কাজে যুক্ত শ্রমিকদেরও। রেলের হকাররাও হাত লাগান উদ্ধারকাজে। হাসপাতাল সূত্রে খবর এই মুহূর্তে ৩৪ জন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে তার মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে কলকাতার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা করছে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। গতকাল যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল তাদের মধ্যে একজনার বাড়ি বর্ধমানে হওয়ায় তার দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেয় গতকাল রাত নটা নাগাদ। বিহারের ও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে, সোনারাম টুডু বিহারের। কান্তি বাহাদুর সাহেবগঞ্জের। আজ এদের পরিবারের সদস্যরা আসবেন । পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে দেহ। সকাল থেকে রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে ২নম্বর প্লাটফর্মে। তাতেই আতঙ্কে যাত্রিরা।
যাত্রিদের অভিযোগ, পুরোপুরি সরানোর কাজ সম্পন্ন না করায় আবার বিপত্তি ঘটতে পারে। ২০২০ সালের ৪ঠা জানুয়ারী বর্ধমান রেল ষ্টেশনের ১নম্বর প্লাটফর্মের প্রবেশ পথের ওভারব্রিজে দূর্ঘটনা ঘটে। এরপর ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ সকাল ১২টায় ৫৩০০০গ্যালন জলের ট্যাঙ্কের প্লেট ফেটে জল বেরিয়ে সেডের ওপর জল পরলে সেডটি ভেঙে হুরমুরিয়ে পরে। সেই সময় ট্যাঙ্কে জল ছিল ২৫০০০ গ্যালন। সেই ওই জল সেডের উপর পরে,এর সেডটি তলায় থাকা যাত্রিদের উপর। বার বার রেলের গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই তিনজনের মৃত্যু দায় কার তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও রেল দায়ে একপ্রকার দায় ঝেড়ে ফেলেছে জানায় , ভাঙা অংশের কাজ শেষ করে প্লাটফর্ম দুটিকে স্বাভাবিক করা।
আরও অন্য খবর দেখুন