গাইঘাটা: ঠাকুরবাড়িকে জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিক শেষ করেছেন বলে ফের অভিযোগ করলেন বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ঠাকুরবাড়ির উন্নয়ন করেছে মতুয়ারা। আর ঠাকুরবাড়িকে শেষ করেছেন জ্যোতিপ্রিয়। একই সঙ্গে তাঁর আরও দাবি, গাইঘাটার শিক্ষক বরুণ বিশ্বাসের খুনের পিছনেও ধৃত বনমন্ত্রীর হাত রয়েছে। গাইঘাটার মানুষ সেটাই বিশ্বাস করে। তার যুক্তিসঙ্গত কারণও রয়েছে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
এদিন ঠাকুরনগর স্টেশনে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের শিলান্যাস করেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার কারণে ঠাকুরনগর স্টেশনকে শ্রীধাম ঠাকুরনগর করা গেল না। রেল সূত্রের খবর, এই স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম ২৭৫ মিটার থেকে বাড়িয়ে ৬০০ মিটার করা হবে। সেখানে একটি তলমান সিঁড়ি তৈরি করা হবে, হবে সৌন্দর্যায়নের কাজও। অনুষ্ঠানে রেলের পদস্থ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ভাঙড়ে ফের তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে
অনুষ্ঠানের পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, একজন মানুষ হিসেবে আমি চাই, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। তাঁর শাস্তির এখনও অনেক বাকি আছে। তাঁর অভিযোগ, জ্যোতিপ্রিয় হুন্ডি এবং হাওয়ালার মাধ্যমে বহু টাকা পাচার করেছেন। সঠিক তদন্ত হলেই সব ধরা পড়বে। ওই মন্ত্রীর নামে বেনামে বহু সম্পত্তি রয়েছে।
তৃণমূলের দাবি, ঠাকুরবাড়ির উন্নয়নের পিছনে জ্যোতিপ্রিয়র অনেক অবদান রয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, এটা আদৌ ঠিক নয়। ঠাকুরনগরের উন্নয়ন করেছে মতুয়ারা। জ্যোতিপ্রিয়ের নেতৃত্বে তৃণমূল বরং ঠাকুরনগরকে শেষ করে দিয়েছে।
ঠাকুরনগরের বড়মার সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কের সেতু গড়ার পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে জ্যোতিপ্রিয়র। পালা বদলের আগে থেকেই তৃণমূল মতুয়াদের মধ্যে ভালো প্রভাব ফেলে। তাকে সাংগঠনিক ভাবে কাজে লাগায় তৃণমূল। বড়মা জীবিত থাকাকালীন ঘনঘন ঠাকুরনগরে আসতেন মমতা। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র থেকে মমতা ২০১৪ সালে বড়মার বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরকে তৃণমূল প্রার্থী করেন। তিনি জয়ীও হন। পরে তাঁর মৃত্যু হওয়ার পর মমতা সাংসদের স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুরকে লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী করেন। উপনির্বাচনে তিনি জেতেন। তখন থেকেই মতুয়াদের মধ্যে তৃণমূলের প্রভাব বাড়ে। যদিও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ মতুয়া অধ্যুষিত জেলাগুলিতে ভালো ফল করে বিজেপি। এনআরসি এবং সিএএ চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি মতুয়াদের মন পেয়েছিল।
আবার এনআরসি এবং সিএএ চালু করার বিরোধিতা করে মতুয়াদের মমতা আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, তাদের আর আলাদা করে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। মতুয়ারা ভোট দিচ্ছেন মানেই তাঁরা ভারতীয় নাগরিক। নতুন করে তাঁদের আবার নাগরিকত্বের কথা ওঠে কী করে। বিজেপি বলেছিল, ২০১৯ সালের আগেই সিএএ চালু হবে। কিন্তু করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত অবশ্য রাজ্যে সিএএ চালু করা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। আগামী লোকসভা ভোটেও এটা বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।