Wednesday, June 11, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: ভারত আমার ভারতবর্ষ

চতুর্থ স্তম্ভ: ভারত আমার ভারতবর্ষ

Follow Us :

বছর শেষ হতে চললো৷ আজ এ বছরের শেষ চতুর্থ স্তম্ভ। আমার স্বদেশ এক ঘোর অন্ধকারে ঢাকা৷ কিন্তু সে অন্ধকার, সে অন্যায়, সে মধ্যযুগীয় রাজত্বের বিরুদ্ধে আওয়াজ, আন্দোলন ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা অন্দোলনের বিশ্বাসঘাতক সাভারকার, গোলওয়ারকর, হেডগাওয়ারদের উত্তরসূরিরা দেশ দখল করার কাজে নেমেছে৷ তার প্রতিরোধও সর্বত্র। তারা পিছু হটছে এটাও সত্যি। এ লড়াইয়ে সবথেকে বড় শক্তি যুব সমাজ৷ সারা পৃথিবীর সব থেকে বেশি যৌবন আমার দেশেই আছে৷ তাদের সবল হাত খুঁজছে চাকরি৷ তারা চায় উচ্চশিক্ষা, তারা চায় সংস্কারমুক্ত সমাজ, তারা চায় সৌহার্দ, সমভাব। আগামী দশকে একমাত্র সেই লড়াই-ই দেশকে আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনে বসাতে পারে৷ মোদি-শাহ-যোগীর মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সেই তরুণেরাই নতুন ইতিহাস লিখবে, এ প্রত্যয় আছে আমাদের মনে।

তাই আজ আমার কথা নয়, সেই তরুণের স্বপ্ন, যেমনটা দেখেছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, তাঁর কথাই শোনাবো আপনাদের। এক জোচ্চর গুমনামি বাবার তত্ত্ব খাড়া করে, আমাদের দেশনায়কের চেহারাও পালটে দিতে চায় কিছু মানুষ, আসুন বছরের শেষে তাঁর কথাগুলো আবার পড়ি, কেবল পড়া নয় উপলব্ধিতে আনতে হবে সেই অমোঘ কথাগুলো, স্বাধীনতার বহু আগে যে কথা বলেছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু, তাঁর লেখা তরুণের স্বপ্ন তে। ২রা জৈষ্ঠ ১৩৩০ এ তিনি লিখছেন,

আমরা এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিয়াছি, একটা উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্ত, একটা বাণী প্রচারের জন্য। আলোকে জগৎ উদ্ভাসিত করিবার জন্য যদি গগনে সূর্য্য উদিত হয়, গন্ধ বিতরণের উদ্দেশ্যে বনমধ্যে কুসুমরাজি যদি বিকশিত হয়, অমৃতময় বারিদান করিতে তটিনী যদি সাগরাভিমুখে প্রবাহিত হয়—যৌবনের পূর্ণ আনন্দ ও ভরা প্রাণ লইয়া, আমরা ও মর্ত্ত্যলোকে নামিয়াছি, একটা সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য। যে অজ্ঞাত গূঢ় উদ্দেশ্য, আমাদের ব্যর্থ জীবনকে সার্থক করিয়া তোলে তাহা আবিষ্কার করিতে হইবে—ধ্যানের দ্বারা, কর্ম্মজীবনের অভিজ্ঞতা দ্বারা।

সুভাষচন্দ্র বোস আরো বলেছেন-

যৌবনের পূর্ণ জোয়ারে আমরা ভাসিয়া আসিয়াছি সকলকে আনন্দের আস্বাদ দিবার জন্য, কারণ আমরা আনন্দের স্বরূপ। আনন্দের মূর্ত্ত বিগ্রহরূপে, আমরা মর্ত্ত্যে বিচরণ করিব। নিজের আনন্দে আমরা হাসিব—সঙ্গে সঙ্গে জগৎকেও মাতাইব। আমরা যেদিকে ফিরিব, নিরানন্দের অন্ধকার লজ্জায় পলায়ন করিবে, আমাদের প্রাণময় স্পর্শের প্রভাবে রোগ, শোক, তাপ দূর হইবে।
এই দুঃখসঙ্কুল, বেদনাপূর্ণ নরলোকে আমরা আনন্দ-সাগরের বাণ ডাকিয়া আনিব। আশা, উৎসাহ, ত্যাগ ও বীর্য্য লইয়া আমরা আসিয়াছি। আমরা আসিয়াছি সৃষ্টি করিতে, কারণ—সৃষ্টির মধ্যেই আনন্দ। তনু, মন-প্রাণ, বুদ্ধি ঢালিয়া দিয়া আমরা সৃষ্টি করিব। নিজের মধ্যে যাহা কিছু সত্য, যাহা কিছু সুন্দর, যাহা কিছু শিব আছে—তাহা আমরা সৃষ্ট পদার্থের মধ্যে, ফুটাইয়া তুলিব। আত্মদানের মধ্যে যে আনন্দ সে আনন্দে আমরা বিভোর হইব, সেই আনন্দের আস্বাদ পাইয়া পৃথিবী ও ধন্য হইবে।
কিন্তু আমাদের দেওয়ার শেষ নাই; কর্ম্মেরও শেষ নাই, কারণ—

“যত দেব প্রাণ বহে যাবে প্রাণ
ফুরাবে না আর প্রাণ;
এত কথা আছে এত গান আছে
এত প্রাণ আছে মোর;
এত সুখ আছে, এত সাধ আছে
প্রাণ হয়ে আছে ভোর।”

অনন্ত আশা, অসীম উৎসাহ, অপরিমেয় তেজ ও অদম্য সাহস লইয়া আমরা আসিয়াছি, তাই আমাদের জীবনের স্রোত কেহ রোধ করিতে পারিবে না। অবিশ্বাস ও নৈরাশ্যের পর্ব্বতরাজি, সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াক, অথবা সমবেত মনুষ্য-জাতির প্রতিকূল শক্তি আমাদিগকে আক্রমণ করুক,—আমাদের আনন্দময়ী গতি চিরকাল অক্ষুণ্ণই থাকিবে।

তরুনের স্বপ্নে সুভাষ চন্দ্র বোস আরো বলেছেন

আমাদের একটা বিশিষ্ট ধর্ম্ম আছে, সেই ধর্ম্মই আমরা অনুসরণ করি। যাহা নূতন, যাহা সরস, যাহা অনাস্বাদিন—তাহারই উপাসক আমরা। আমরা আনিয়া দিই পুরাতনের মধ্যে নূতনকে, জড়ের মধ্যে চঞ্চলকে, প্রবীণের মধ্যে নবীনকে, এবং বন্ধনের মধ্যে অসীমকে। আমরা অতীত ইতিহাসলব্ধ অভিজ্ঞতা, সব সময়ে মানিতে প্রস্তুত নই। আমরা অনন্ত পথের যাত্রী বটে কিন্তু আমরা, অচেনা পথই ভালবাসি—অজানা ভবিষ্যৎই আমাদের নিকট অত্যন্ত প্রিয়।

আমরা চাই, “দ্য রাইট টু মেক ব্লান্ডারস।“ অর্থাৎ “ভুল করিবার অধিকার”, তাই আমাদের স্বভাবের প্রতি সকলের সহানুভূতি নাই, আমরা অনেকের নিকট সৃষ্টিছাড়া ও লক্ষ্মীহারা।
ইহাতেই আমাদের আনন্দ; এখানেই আমাদের গর্ব্ব। যৌবন সর্ব্বকালে, সর্ব্বদেশে সৃষ্টিছাড়া ও লক্ষ্মীহারা। অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষার উন্মাদনায় আমরা ছুটিয়া চলি,বিজ্ঞের উপদেশ শুনিবার পর্য্যন্ত অবসর আমাদের নাই। ভুল করি, ভ্রমে পড়ি, আছাড় খাই, কিন্তু কিছুতেই আমরা উৎসাহ হারাই না, বা পশ্চাৎপদ হই না। আমাদের তাণ্ডবলীলার অন্ত নাই, কারণ—আমরা অবিরামগতি।
আমরাই দেশে দেশে মুক্তির ইতিহাস রচনা করিয়া থাকি। আমরা শান্তির জল ছিটাইতে এখানে আসি নাই। বিবাদ সৃষ্টি করিতে, সংগ্রামের সংবাদ দিতে, প্রলয়ের সুচনা করিতে আমরা আসিয়া থাকি। যেখানে বন্ধন, যেখানে গোঁড়ামি, যেখানে কুসংস্কার, যেখানে সঙ্কীর্ণতা, সেইখানেই আমরা কুঠার হস্তে উপস্থিত হই। আমাদের একমাত্র ব্যবসায়, মুক্তির পথ চিরকাল কণ্টকশূন্য রাখা, যেন সে পথ দিয়া মুক্তির সেনা,অবলীলাক্রমে গমনাগমন করিতে পারে।

তিনি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে এও বলেছেন- মনুষ্য জীবন, আমাদের নিকট একটা অখণ্ড সত্য। সুতরাং যে স্বাধীনতা আমরা চাই,সে স্বাধীনতা ব্যতীত জীবনধারণই একটা বিড়ম্বনা,যে স্বাধীনতা অর্জ্জনের জন্য যুগে যুগে আমরা হাসিতে হাসিতে রক্তদান করিয়াছি, সে স্বাধীনতা সর্ব্বতোমুখী। জীবনের সকল ক্ষেত্রে, সকল দিকে আমরা মুক্তির বাণী প্রচার করিবার জন্য আসিয়াছি। কি সমাজনীতি, কি অর্থনীতি, কি রাষ্ট্রনীতি, কি ধর্ম্মনীতি—জীবনের সকল ক্ষেত্রে আমরা সত্যের আলোক, আনন্দের উচ্ছ্বাস ও উদারতার মৌলিক ভিত্তি, লইয়া আসিতে চাই।

অনাদিকাল হইতে, আমরা মুক্তির সঙ্গীত গাহিয়া আসিতেছি। শিশুকাল হইতে, মুক্তির আকাঙ্ক্ষা আমাদের শিরায় শিরায় প্রবাহিত। জন্মিবামাত্র, আমরা যে কাতরকণ্ঠে ক্রন্দন করিয়া উঠি সে ক্রন্দন শুধু, পার্থিব বন্ধনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ জানাইবার জন্য। শৈশবে ক্রন্দনই আমাদের একমাত্র বল থাকে, কিন্তু যৌবনের দ্বারদেশে উপনীত হইলে বাহু ও বুদ্ধি, আমাদের সহায় হয়। আর এই বুদ্ধি ও বাহুর সাহায্যে আমরা কি না করিয়াছি,—ফিনিসিয়া, এসিরিয়া, ব্যাবিলোনিয়া, মিসর, গ্রীস, রোম, তুরস্ক, ইংলণ্ড, ফ্রান্স, জার্ম্মানি, রুশিয়া, চীন, জাপান, হিন্দুস্থান—যে কোনও দেশের ইতিহাস পড়িয়া দেখ, দেখিবে যে ইতিহাসের প্রত্যেক পৃষ্ঠায় আমাদের কীর্ত্তি জ্বলন্ত অক্ষরে লেখা আছে। আমাদের সাহায্যে, সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছেন, আবার আমাদেরই অঙ্গুলিসঙ্কেতে সভয়ে সিংহাসন ত্যাগ করিয়া, তিনি পলায়ন করিয়াছেন।

 আমরা একদিকে প্রস্তরীভূত প্রেমাশ্রুরূপী তাজমহল যেমন নির্ম্মাণ করিয়াছি, অপরদিকে রক্তস্রোতে, ধরণীবক্ষও রঞ্জিত করিয়াছি। আমাদের সমবেত শক্তি লইয়া সমাজ, রাষ্ট্র, সাহিত্য কলা, বিজ্ঞান যুগে যুগে দেশে দেশে গড়িয়া উঠিয়াছে; আবার রুদ্র করালমূর্ত্তি ধারণা করিয়া আমরা যখন তাণ্ডব নৃত্য আরম্ভ করিয়াছি, তখন সেই তাণ্ডব নৃত্যের একটা পদবিক্ষেপের সঙ্গে কত সমাজ, কত সাম্রাজ্য ধূলায় মিশিয়া গিয়াছে।

সুভাষচন্দ্র আরো লিখেছেন-

এতদিন পরে নিজের শক্তি আমরা বুঝিয়াছি, নিজের ধর্ম চিনিয়াছি। এখন আমাদের শাসন বা শোষণ করে কে? এই নবজাগরণের মধ্যে সব চেয়ে বড় কথা, সব চেয়ে বড় আশা—তরুণের আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ।

 তরুণের প্রসুপ্ত আত্মা, যখন জাগরিত হইয়াছে—তখন জীবনের মধ্যে সকল দিকে, সকল ক্ষেত্রে যৌবনের রক্তিমরাগ আবার দেখা দিবে। এই যে তরুণের আন্দোলন, এটা যেমন সর্ব্বতোমুখী তেমনি বিশ্বব্যাপী। আজ পৃথিবীর সকল দেশে, বিশেষতঃ যেখানে বার্দ্ধক্যের শীতল ছায়া দেখা দিয়াছে, তরুণসম্প্রদায় মাথা তুলিয়া প্রকৃতিস্থ হইয়া সদর্পে সেখানে, দণ্ডায়মান হইয়াছে। কোন্ দিব্য আলোকে পৃথিবীকে ইহারা উদ্ভাসিত করিবে তাহা কে বলিতে পারে?
ওগো আমার তরুণ জীবনের দল, তোমরা ওঠো, জাগো, ঊষার কিরণ যে দেখা দিয়াছে!

আজ স্বাধীন ভারতবর্ষে সুভাষচন্দ্র বসুর এই কথাগুলো এক অমোঘ সত্য, তিনি যে কথা সেদিন বলেছিলেন, তা একই রকম প্রাসঙ্গিক। দেশের প্রতিটি যুবক যুবতীর দিকে তাকিয়ে আছে দেশ, ভারত আমার ভারতবর্ষ। বিরাসতের কথা বলে এক নগ্ন হিন্দুত্ববাদের দিকে, ঠেলে নিয়ে যাবার চেষ্টা চলছে, ঠিক সেই সময়ে নেতাজীর এই কথা আমাদের দেশের যুবকদের কাছে গীতা, কোরান, জেন্দ আবেস্তা, ত্রিপিঠক, গুরু গ্রন্থ সাহিবের মত পবিত্র, বিশুদ্ধ পথনির্দেশিকা। তিনি বলে গেছেন, আমাদের করে দেখাতেই হবে, রাত্রির বৃন্ত থেকে ছিনিয়েই নিয়ে আসতে হবে এক ফুটন্ত সকাল, যে সকালে আজাদ হিন্দ ফৌজের মত এক সারিতে সমান অধিকার, সমান আত্মসন্মান নিয়ে বসবে বিভিন্ন ধর্ম, গোষ্ঠির মানুষজন। তাদের সেই তরুন ফৌজের নাম হবে নেতাজি ব্রিগেড, গান্ধী ব্রিগেড, নেহেরু ব্রিগেড, আজাদ ব্রিগেড, থাকবে ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ বাহিনী, আমাদের স্বদেশ কে আমরাই, আমরা তরুণরাই রক্ষা করবো। 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Indian Defence | আকাশ প্রতিরক্ষায় আরও উন্নত ড্রোন আনছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, কতটা শক্তিশালী এই ড্রোন?
00:00
Video thumbnail
Jagannath Temple | জগন্নাথের স্নানযাত্রা, দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
UPI | ৩০০০ টাকার উপর UPI-এ পেমেন্টে অতিরিক্ত চার্জ, মাথায় হাত আমজনতার, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Ariyan Khan | আরিয়ান খান গ্রে/ফতা/র হতেই নাম বলে দিল বড় নেতার
00:00
Video thumbnail
Weather Update | কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধেয়ে আসছে প্রবল ঝড়, লন্ডভন্ড হবে কোন কোন জেলা?
00:00
Video thumbnail
Digha Jagannath Temple | দিঘায় শুরু জগন্নাথের স্নান যাত্রা, দেখুন Live
06:40:25
Video thumbnail
Ariyan Khan | বাঁকড়া কাণ্ডে গ্রে/ফতা/র আরিয়ান খান, গ্রে/ফতা/রের পর কী কী বলে দিলেন?
08:17
Video thumbnail
Ariyan Khan | বাঁকড়া কাণ্ডে গ্রে/ফতা/র আরিয়ান খান, গ্রে/ফতা/রের পর কী কী বলে দিলেন?
01:10:24
Video thumbnail
UPI Payment | ৩০০০ টাকার উপর UPI-এ পেমেন্টে অতিরিক্ত চার্জ, মাথায় হাত আমজনতার, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
04:11
Video thumbnail
Jagannath Temple | জগন্নাথের আর্শীবাদ কার দিকে? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
01:56:54