Friday, June 13, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: বুলডোজার হওয়াটাই লক্ষ্য

চতুর্থ স্তম্ভ: বুলডোজার হওয়াটাই লক্ষ্য

Follow Us :

শব্দের মানে বদলে যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। শব্দও বদলায়। রবীন্দ্রনাথ, শরৎ, বঙ্কিম সাহিত্যেও কিছু শব্দ ছিল৷ যেমন ধরুন ল্যাংড়া, নুলো, বোবা, কালা সময়ের ফেরে এসব বদলে, এক নতুন শব্দ এসেছিল, প্রতিবন্ধী। চলেও ছিল বেশ কিছু দিন৷ কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় তৈরি করেছিলেন প্রতিবন্ধী সম্মিলনী। তো সেই শব্দ, ফিজিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড৷ এখন বাতিল হয়েছে৷ এখন তা ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ঘুরে হয়েছে ডিফারেন্টলি এবলড৷ হিন্দিতে আরও এক শব্দ এসেছে, দিব্যাঙ্গ। ভগবান আমাদের অঙ্গ দিয়েছেন, ওনাদের দিব্যাঙ্গ। তাতে সেই মানুষজনের কষ্ট কমেনি, তাঁদের সমস্যার কোনওটারই সমাধান হয়নি৷ কিন্তু কানা ছেলেকে পদ্মলোচন বলে ডাকতে বলেছে সরকার৷ সে কানা ছেলে এখনও দেখতে পায় না, ভিক্ষাই করে। পাগল বলা যাবে নে কো, তারা এখন মেন্টালি চ্যালেঞ্জড। ডোম, চামার, মুচি মেথরদের গান্ধিজি হরিজন বলেছিলেন৷ তাঁরা হরিজন হলেন বটে, কিন্তু হরির কৃপা? দূর অস্ত।

এখনও এক রামচন্দ্র ডোম কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোতে এলে খবর হয় আলাদা করে, দেকেচো? পলিটব্যুরোতে হরিজন এসেছে, না থাকলে বলা হত, দেকেচো, একজনও হরিজন নেই। শব্দের ফেরবদলে দিন বদল হয় না৷ যদি হত তাহলে তো সত্যিই আগামী দিন, অচ্ছে দিন হয়ে যেত। কিন্তু আপনি আমি না চাইলেও আমাদের জীবনে নতুন শব্দ আসে, বুলেভার্দ আসে, কন্ডোভিলা আসে, কিক ব্যাক আসে৷ সোজা বাংলায় ছাঁটাই হয়ে যায় ভলেন্টিয়ারি রিটায়ারমেন্ট৷ সেই প্রৌঢ় ঘরে ফেরেন, হাতে গোপালের মিষ্টির প্যাকেট, লেক মার্কেট থেকে কেনা ফুলের বোকে, একটা মিক্সি গ্রাইন্ডার, ২ লক্ষ টাকার চেক, বাকি ১৪ লক্ষ আসবে,আসবে। কবে আসবে শুধোয় তাঁর কাঠ বেকার ছেলে৷ গতিধারার ডাউন পেমেন্ট হয়ে গেলে জীবনের একটা সুরাহা হবে, ওদিকে বেলা বোস অপেক্ষায়।

সেই ছাঁটাই, এখন ভলেনটিয়ারি রিটায়ারমেন্ট। এইভাবেই শব্দরা পালটায়৷ কখনও মানে একই থেকে যায়৷ কখনও মানে পালটে যায়। আজ, সেরকমই এক শব্দের পালটে যাওয়া নিয়েই আলোচনা। বুলডোজার, এক যন্ত্র যা দিয়ে সামনে যা আছে তাকে ভেঙেচুরে সমান করে দেওয়া যায়, রাস্তা তৈরি করতে, পুরনো ইমারত ভেঙে নতুন তৈরি করতে কাজে লাগলেও, বুলডোজার খুব সুখশ্রাব্য কথা ছিল না কোনওকালেই৷ ইংরেজিতে বুলডোজ কথার মানে হল, টু মেক গ্রাউন্ড ফ্ল্যাট, অর নক ডাউন অ্যা বিল্ডিং উইথ অ্যা বুলডোজার৷ মানে ভেঙে চুরে সমান করে দেওয়া। রাজনীতিতে বুলডোজার শব্দটা এল কবে? আজ নয়, আদিত্যনাথ যোগীর সময়েও নয়, তার বহু আগেই রাজনীতিতে বুলডোজার শব্দ এসেছে জরুরি অবস্থার সময়ে৷ দিল্লির তুর্কমান গেটের আশেপাশে জুগগি ঝোপড়ি ভাঙা হয়েছিল৷ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র সঞ্জয় গান্ধী৷ সে এক সময়৷ খোলা জীপে সঞ্জয়, মানেকা, কমল নাথ, জগদীশ টাইটলার, রুকসানা সুলতানা, অম্বিকা সহায়রা ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ তুর্কমান গেটের সামনে ২০/২৫ টা বুলডোজার, ঝুপড়ি ভেঙে সাফ সুতরো হচ্ছে দিল্লি৷ বুলডোজার আটকাতে সামান্যতম আওয়াজ তুলেছে কে কে? অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, তখন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের নেতা কর্মীরা৷ কারণ বাকি বিরোধী নেতারা তখন জেলে৷ কিন্তু বুলডোজার থামানো যায়নি৷ সাফ হয়েগিয়েছিল দিল্লির জুগগি ঝোপড়ি৷ বাতে কম, কাম অধিক ছিল স্লোগান।

সেই অর্থে দেশের প্রথম বুলডোজার বাবা ছিলেন ওই সঞ্জয় গান্ধী৷ কিন্তু তাঁরও এই সাহস ছিল না যে তিনি নিজেকে বুলডোজার বাবা বলেন৷ বরং উল্টোটা, বিরোধীরা, সংবাদপত্রের একাংশ, সেদিন এই বুলডোজার চালানোর তীব্র বিরোধিতা করেছিল। সেই বুলডোজার, আজ এখন এক গর্বিত শব্দ৷ আদিত্যনাথ যোগী নিজে উল্লসিত, তাঁর সমর্থকেরাও উল্লসিত, রাজ্যে এক বুলডোজার বাবা এসেছে। নির্বাচন চলাকালীন, তিনি হেলিকপ্টার থেকে সাংবাদিকদের দেখাচ্ছিলেন, ওই দেখুন আমার সভাস্থলের পাশেই সারি সারি বুলডোজার রাখা আছে৷ মুখ উজ্জ্বল হাসিতে ভরে উঠেছে তাঁর৷ উত্তরপ্রদেশে জয়ের পরে, বিজেপি কর্মী সমর্থকদের হাতে হাতে ঘুরেছে পদ্মফুল নয়, প্লাস্টিকের খেলনা বুলডোজার৷ বাচ্চারা না খেলে, দুষ্টুমি করলে মা ভয় দেখিয়েছে, শো যা, নহি তো বুলডোজার আয়গা৷

এক ঘৃণ্য শব্দ, আপাতত এক গর্বের বিশেষণ, কাজেই সে থেমে থাকছে না৷ সে পাড়ি দিয়েছে মধ্যপ্রদেশেও৷ রাজ্যের মানুষজন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান কে মামা বলত৷ এখন বুলডোজার মামা বলছে৷ কারণ তিনিও বুলডোজার চালাচ্ছেন। ঘটনার সূত্রপাত নবরাত্রির দিন৷ মধ্যপ্রদেশের খরাগাঁও জেলার খারগাঁও শহরে। ছোট্ট শহর, জনসংখ্যা সাকুল্যে দেড় লক্ষ, এবং মজার কথা হল এই শহর সারা ভারতে স্বচ্ছ শহর তালিকার ১০ নম্বরে আছে৷ দেশের লিটারাসি রেট ৭৪%৷ খরগাঁও শহরের লিটারাসি রেট ৮০% এর ওপরে। শহরে হিন্দু জনসংখ্যা ৬১.৫%, মুসলমান জনসংখ্যা ৩৭% এর একটু বেশি। এমএলএ বিজেপির, এমপি ও বিজেপির৷ রাজ্যে শাসনে আছে বিজেপি। নবরাত্রির দিন, নবরাত্রির মিছিলে মুসলমানরা পাথর ছুড়েছে৷ এই খবর ছড়িয়ে পড়ে, শহর জুড়ে দাঙ্গা শুরু হয়। ঘটনার সূত্রপাত তলব চৌকে, এবং তারপরেই মারমুখি জনতা কাজিপুরা, সঞ্জয়নগর, আনন্দ নগর, ভাউসার মহল্লা, খসখসওয়াডি, তাভদি মহল্লার দিকে যেতে থাকে৷ ৬৩ বছরের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের অ্যাসিসট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর, নাসির আহমেদ খান তাভদি মহল্লায় তাঁর বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে নবরাত্রির মিছিল দেখছিলেন৷ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৫০ জনের মতো এক ভিড় হাজির৷ তাঁর বাড়ির দিকে ঢিল ছোঁড়া শুরু হয়৷ নেতৃত্বে তাঁরই প্রতিবেশি অনিল প্যাটেল, গণেশ ভার্মা।

গালিগালাজ শুরু হয়, দরজা ভাঙার চেষ্টা চলতে থাকে৷ এরমধ্যে অনিল প্যাটেলের স্ত্রীও যোগ দেন৷ বলতে থাকেন, এই পাড়ায় এই একটাই মুসলমান বাড়ি আছে৷ ঘর জ্বালিয়ে দাও। অনিল বজরঙ্গ দলের সঙ্গে যুক্ত৷ এরপর পাশের এক ধর্মশালা থেকে পেট্রল বোমা ছোঁড়া শুরু হয়৷ তাঁর রান্নাঘরে আগুন লাগে৷ কিছু দুষ্কৃতী ঢুকে উঠোনে রাখা চারটে বাইক জ্বালিয়ে দেয়৷ এই সময়ে পুলিশের গাড়ি এসে পড়ায়, তারা পালায়। এটাই তিনি পুলিশ এফআইআরে লিখেছেন৷ এখনও সেই এফআইআর দায়ের করা হয়নি। ২৬ টা মুসলমানের ঘর পোড়ানো হয়৷ ১২টা গাড়ি, পাঁচটা দোকানও পুড়ে ছাই। নবাব খান, মঞ্জু বাই, মঞ্জুলা বাই ইত্যাদিদের বয়ানও এক৷ কিন্তু সে সব এফআইআর দায়ের করা হয়নি৷ এর মধ্যে মঞ্জুলা বাই-এর ঘর এই নিয়ে তিনবার পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হল৷ প্রথমবার পুড়েছিল ১৯৯২-এ, বাবরি মসজিদ দাঙ্গার সময়ে।

ঘটনার পরেই রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী, নরোত্তম মিশ্র বললেন, জিস ঘর সে পত্থর আয়েঁ হ্যাঁয়, উস ঘরো কো হি পত্থরো কা ঢের বনায়েঙ্গে, যেমন কথা তেমন কাজ, দু দিনের মধ্যে ৩২ টা ঘর আর ১৬ টা দোকান, যার প্রত্যেকটাই মুসলমান মানুষজনের, সেগুলোকে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে সমান করে দেওয়া হল৷ বলা হল এই সব কটা ঘর আর দোকান ছিল বেআইনি৷ না সেগুলো বেআইনি বলে কোনও আগাম নোটিস দেওয়া হয়নি৷ জেলাশাসক জানালেন, উই হ্যাভ এ জিরো টলারেন্স পলিসি টুওয়ার্ডস দ্য ক্রিমিনাল, পিরিয়ড। এরপর থেকে শিবরাজ সিং চৌহান, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, নতুন বুলডোজার বাবা হয়ে উঠেছেন।

আশা করাই যায়, খুব শিগগিরই দেশের সমস্ত বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা, হয়ে উঠবেন বুলডোজার বাবা, অপরাধের শাস্তি আর আদালতে হবে না, অপরাধের বিচার বিচারকরা করবেন না, অপরাধে অভিযুক্তদের কথা শোনার প্রশ্নই নেই৷ চালাও বুলডোজার। মুসলমানরা, সংখ্যালঘুরা, বিরোধীরা, সেকুলার মানুষজন সাবধান, বুলডোজার আসছে৷ এই আবহ তৈরি হচ্ছে, তৈরি হয়েছে, ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যে রাজ্যে। সংবিধান অটুট আছে, বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের জন্মদিনে, তাঁর গলায় মালা পরানো হবে, দেশের পরধান সেবক টুইট করবেন, भारत रत्न डॉ. बाबासाहेब अम्बेडकर को उनकी जयंती पर शत-शत नमन। समाज के वंचित वर्गों को मुख्यधारा में लाने के लिए किया गया, उनका संघर्ष हर पीढ़ी के लिए एक मिसाल बना रहेगा। ব্যস, হয়ে গ্যালো। ওনার নেতৃত্বে তৈরি দেশের সংবিধান পড়ে থাকবে অবহেলায়, বুলডোজার বাবা জন্ম নেবে রাজ্যে রাজ্যে, মানুষের মানবাধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, সংখ্যালঘুদের জীবনের অধিকার, ন্যায় বিচার, ধর্মনিরপেক্ষতা এসব শব্দের কোনও মানেই থাকবে না, সংবিধান ক্রমশ অর্থহীন হয়ে উঠছে, আমাদের চোখের সামনে, রোজ সংবিধানের ওপর দিয়েই চলছে বুলডোজার।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | আহমেদাবাদে বিমান দু/র্ঘটনা কাণ্ডে তদন্তে কেন্দ্রীয় সরকার
00:00
Video thumbnail
Vijay Rupani | Air India | বিমান দু/র্ঘটনায় প্র/য়াত বিজয় রূপানি, কী জানালেন বিজেপি নেতা?
00:00
Video thumbnail
Bratya Basu | ফের স্কুল ছুটির ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রীর, কারণ কী? দেখুন বড় খবর
02:37:55
Video thumbnail
Narendra Modi | Yunus | মোদির ওপর দায় চাপিয়ে দায় এড়ালেন ইউনুস, দেখুন বড় খবর
01:32:36
Video thumbnail
Donald Trump | আমেরিকায় থাকতে হলে এবার লাগবে ‘ট্রাম্প’ কার্ড, দাম কত জানেন? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
01:11:11
Video thumbnail
NATO | তৃতীয় বিশ্বযু/দ্ধ শুরু হবে কী নিয়ে? জেনে নিন স্পেশাল রিপোর্টে
03:27:25
Video thumbnail
Mamata Banerjee | Nabanna | রথযাত্রা নিয়ে আজ নবান্নে বৈঠক করবেন মমতা, কী কী বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা?
02:18:46
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | আহমেদাবাদে বিমান দু/র্ঘটনা কাণ্ডে তদন্তে কেন্দ্রীয় সরকার
02:25
Video thumbnail
Weather Update | সক্রিয় হচ্ছে মৌসুমী বায়ু, ফের ভাসবে কোন কোন জেলা? দেখুন বিগ আপডেট
01:19:40
Video thumbnail
Volodymyr Zelenskyy | হার আসন্ন, যে কোনও মুহূর্তে দেশ ছাড়বেন জেলনস্কি, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
01:37:45