Friday, June 13, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ : এক উন্মাদিনীর গল্প 

চতুর্থ স্তম্ভ : এক উন্মাদিনীর গল্প 

Follow Us :

কঙ্গনা রানাওয়ত, জনপ্রিয় অভিনেত্রী, ভালো অভিনেত্রী। আর ১০ জন বলিউড উচ্চাকাঙ্খীদের মতই আপাতত ভয়ঙ্কর জাতীয়তাবাদী, মোদিভক্ত, বিজেপির সমর্থক। ফলও হাতে নাতে, এবারে পদ্মশ্রী পেলেন, এই গোত্রের মানুষজন কম নয়, যে কোনও দলে, যে কোনও রাজনীতিতে, যে কোনও রাজ্যে এনাদের দেখা যায়। কেউ একটু সামলে, কেবল নবরাত্রির পুজোয় হাজির থেকে, পোঙ্গলের কার্ড রাইস খেয়ে, বিহুতে ধামসা বাজিয়ে, ডান্ডিয়া নেচে, ভাইফোঁটা নিয়েই ক্ষান্ত দেন, কেউ আরেকটু বেশী, ক্ষমতাসীন দলের মিছিলে মিটিংয়ে হাজির থাকেন, তাঁদের দেখা যায় ক্ষমতার অলিন্দে গা ঘেঁসাঘেঁসি করতে, কেউ কেউ আরও বেশি চান, রাজ্যসভার টিকিট, নির্বাচনে সেফ সিট, মন্ত্রিত্ব, কমিটির চেয়ারম্যান, এই উৎসব সেই উৎসবের মাথায় বসেন, আরও ক্ষমতা চাই, তার জন্য রাজনৈতিক দলে যোগ দেন, নেতা বা নেত্রীর প্রশস্তি করেন, নরেন্দ্র মোদী যুগপুরুষ, আদিত্য যোগী শিবের সন্তান, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী, কেউ কেউ নেত্রীর যাবতীয় কাজকর্মে এক দর্শন খুঁজে পান, তা নিয়ে থিসিস লেখেন।

এসব আমরা দেখেছি। নির্লজ্জ তোষামোদ রাজনীতির আঙিনায় নতুন কিছুই নয়, আর তেল যাঁরা দেন, তাঁরা তো অপাত্রে দেন না, তেল পছন্দ করে, তেল দিলে ফল পাওয়া যায় তাই তো তেল দেন,… আহ আহা, আপনার কন্ঠটিতো মহম্মদ রফির, আপনাকে দেখতে তো উত্তম কুমার, আপনি তো রবিঠাকুরের মতোই কবিতা লেখেন, তোষামোদ ঝরে ঝরে পড়ে, তার থেকেও জোরে ঝরে পড়ে পদ, খেতাব, লাল বা নীল বাতি। ঝরুক, অভিনেতা রুদ্রনীল রাজ্যের বেকার ছেলেদের ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব নিয়ে লাখ টাকার মাইনে পাক, নীল গাড়ি চড়ুক, অভিনেতা অক্ষয় কুমার তিনবার তাঁর নাগরিকত্ব পাল্টে ফেলুন, অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলী রাজ্যসভায় হয়টা কী তা জানার আগেই, রাজ্যসভার সদস্য হয়ে যান, কঙ্গনা রানাওয়ত পেয়ে যান পদ্মশ্রী, আমাদের কিই বা এসে যায় বলুন, প্রতিদিন যাদের চোখ থাকে বাড়তে থাকা ডিজেল পেট্রোল, আর শাক শব্জির দামের দিকে, যাদের মাইনে ১৭ কী উনিশ দিন পরেই অমাবস্যার অন্ধকারে ডুবে যায়, তাদের কি এসে যায়? অতএব নির্লজ্জ তোষামোদ চলুক, আমরা মাঝে মধ্যে ফোড়ন কাটব।

কিন্তু তারও তো সীমা আছে, তারও তো একটা গন্ডি আছে, যার ওপারে যাওয়া যায় না। যদি সেই গন্ডিও পার করে যায়, তাহলে দুটো কথা তো বলতেই হয়। কঙ্গনা রানাওয়ত সেই গন্ডিটাও পার করে ফেললেন। এক আলোচনায় তিনি বললেন, ১৯৪৭ এর স্বাধীনতা ভিক্ষেয় পাওয়া স্বাধীনতা, ইংরেজরা ট্রান্সফার অফ পাওয়ার করে গেছে, ভিক্ষার স্বাধীনতা দিয়ে গেছে কংগ্রেসকে, সেটা আদৌ স্বাধীনতা ছিল না।
এই কথাগুলো নতুন কিছু নয়, ৪৭ এ নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা মশাল জ্বালিয়ে মিছিল করত, ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়, ভুলো মাত, ভুলো মাত। একই কথা বলতো আর এস এস, সেই কারণেই… না কমিউনিস্টরা, না আর এস এস স্বয়ংসেবক কেউই স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে রাজি ছিলেন না, স্বাধীনতার পরে দীর্ঘদিন তাঁরা তেরঙ্গা পতাকা তোলেননি। তারপর একটা সময় কমিউনিস্ট পার্টি, অন্তত মূল ধারার কমিউনিস্ট পার্টি সে ভুল স্বীকার করে নিয়েছে, অনেক ভুল ত্রুটি থাকলেও ১৯৪৭-এ যে দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, তা মেনে নিয়েছে।

আর এস এস এমন কোনও ভুল স্বীকার না করলেও আজাদি কা জশ্ন মনাতা চলা গয়া, তাও বেশ কিছুদিন আগে থেকেই, আর রাষ্ট্রবাদী হতে গেলে ঝান্ডা তোলা, স্বাধীনতা দিবসের উদযাপনে অংশ নেওয়া এসব তো করতেই হয়, তাঁরাও করছেন। কঙ্গনা রানাওয়ত সেসব ইতিহাস জানেন না, তবুও বলবো উনি যা বলেছেন তাই নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে, আজকেও সে বিতর্ক কেউ চালাতে চাইলে, আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু না এই পর্যন্ত বলেই তিনি ক্ষান্ত দেন নি। এরপর তিনি বলেছেন ৪৭-এ স্বাধীনতা তো আসেই নি, সেই স্বাধীনতা এল ২০১৪ তে। স্বাভাবিক, এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশ জুড়ে তীব্র প্রতিক্রীয়া নিউজ পেপারে, টিভি চ্যানেলে। একজনও প্রকাশ্যে এই বক্তব্যকে সমর্থন করেননি। কিন্তু মজার কথা হল, বিজেপি, আর এস এস এর একজন জাতীয়তাবাদী নেতার মুখ থেকে একটা কথাও শোনা যায়নি, একজনও নিন্দা করেননি।

আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো অরণ্যদেব, তিনি যখন চাইবেন, কেবল তখনই কথা বলবেন দেখা দেবেন, যখন চাইবেন না তখন দেখাও যাবে না, শোনাও যাবে না।
নোটবন্দির ওই বিশাল ফানুস কবেই ফেটে গেছে, একটা কথাও শুনেছেন মোদিজির মুখ থেকে? কিংবা ওই লকডাউনের সময়, যখন মা, বাচ্চা, বউ নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন দেশের লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক, তখন মুখ থেকে একটা কথাও শুনেছেন? সেই ৫৬ ইঞ্চির ছাতি এবারেও চুপ। যার হাতে, বা বলা ভাল যে বিকৃত মস্তিষ্ক মহিলার হাতে তুলে দেওয়া হল পদ্মশ্রী, তিনি বলছেন স্বাধীনতা এসেছে ২০১৪ সালে, ৫৬ ইঞ্চি চুপ, মৌনি বাবা হয়ে বসে রয়েছেন।

এটা আর এস এস বিজেপির খুব পুরনো কৌশল। এলে বেলে হরিদাস পাল বা কঙ্গণা রানাওয়তদের মতন কাউকে দিয়ে কিছু কথা বাজারে ছড়িয়ে দাও। ধীরে ধীরে সেই আলোচনা না হওয়ার বিষয়টা নিয়ে আলোচনা শুরু হোক, ভক্তদের মধ্যে এই আলোচনার বীজ ছড়িয়ে দাও। তারপর বিরাট জনসংখ্যার এক অংশ এই কথা বলা শুরু করবে, এবার তাকে রূপায়িত করার কাজে লেগে যাও। আগে খুব ধর্মান্ধ মাতাজী বাবাজীদের কেউ কেউ বলতেন মুসলমানরা আমাদের দেশের অংশ নয়, তারা দেশদ্রোহী, তাদের জন্য জনসংখ্যা বাড়ছে, তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠছে। আমরা পাত্তাও দিইনি, কোন এক বাবাজী মাতাজীর পাগল প্রলাপে কান দিই নি। কিন্তু ওটা প্রলাপ ছিল না, ওটা এক পরিকল্পিত প্রচারের অঙ্গ, তারপর এখন দেখা যাচ্ছে, বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্যরা ঠিক ওই কথা গুলোই বলছেন।

কিছু উন্মাদ ১৯৫৮ তে বাবরি মসজিদ তোড়ো আন্দোলন শুরু করে, এক শীতের রাতে নভেম্বর মাসে রামলালার মূর্তি রেখে আসে মসজিদের ভেতরে। তখন কেউ ভেবেছিল, ওই মসজিদ ভাঙা হবে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করেই ভাঙা হবে, পুলিশ প্রশাসনকে দাঁড় করিয়ে রেখেই ভাঙা হবে? না ভাবিনি আমরা কেউ। জনসত্তার শীতলা সিং তখন তরুণ সাংবাদিক, তাঁর কথায়, আমরা মনে করেছিলাম, এ এক উন্মাদ আচরণ, সাধারণ মানুষ এসব মেনে নেবে না, কিন্তু তা হয়নি, এই প্রচার ক্রমশ এক সাম্প্রদায়িক চেহারা নিয়ে, মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করেছে।

কিছুদিন আগে হঠাৎ হঠাৎ নবরাত্রির সময় কিছু রেস্তঁরাতে হামলা হত, মাছ মাংস বন্ধ কর। আমরা পাত্তা দিই নি, এখন দিল্লি, গুজরাটের বহু জায়গায়, মথুরা, বৃন্দাবনে আমিষ রেস্তঁরা বন্ধ, খেয়াল করেছেন কি কায়দায় আইনক্সে আমিষ তুলে দেওয়া হল, এই কলকাতাতেও। মানে একটা কথা সামনে আনো, শুনলে মনে হবে প্রলাপ, তারপর তা নিয়ে আলোচনা আর জনমত তৈরি করা, তারপর সেটাই হয়ে যাবে সত্য, বহুবার মিথ্যেটাকেই সত্যি বলতে বলতে, মিথ্যেটাকেই সত্যি করে তোলার পুরনো খেলা।

এবারেও সেই খেলা। যদিও খেয়াল করে দেখুন, এই খেলার শুরুয়াত কিন্তু কিছুদিন আগে আমাদের ৫৬ ইঞ্চি নিজেই করেছিলেন, ৫ আগস্ট ২০২০তে রামজন্মভূমির ভূমিপূজন অনুষ্ঠানে গিয়ে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এ আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা প্রাপ্তি। কিসের থেকে স্বাধীনতা? কে আমাদের পরাধীন করে রেখেছিল? কিভাবে সেই স্বাধীনতা এল? সেই পরাধীনতা আমাদের কোন কোন অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, যা আমরা নতুন করে পেলাম, না আমাদের অরণ্যদেব প্রধান সেবক সে বিষয়ে একটা কথাও বলেন নি, কিন্তু হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন আরেক স্বাধীনতার গল্প। আজ সেই কথারই খানিক পুনরাবৃত্তি করেছেন এই উন্মাদিনী, কঙ্গণা রানাওয়ত, অবশ্য এনাকে উন্মাদ বললে উন্মাদ অসুখটির ভুল ব্যাখ্যাও হতে পারে, একে শয়তানি বলাটাই অ্যাপ্রপ্রিয়েট।

কঙ্গনা বলেছেন, কংগ্রেস তো ছিল ইংরেজ শাসনের এক্সটেনশন, সে স্বাধীনতার জন্য কতটা রক্ত বইবে আর কাদের রক্ত বইবে তাতো ঠিক করে দিয়েছিল ইংরেজরা। মানে ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকি, সূর্য সেন, ভগত সিং চন্দ্রশেখর আজাদ ইংরেজদের নির্দেশেই রক্ত বইয়েছিলেন। ১৫ আগস্ট তো স্বাধীনতা আসে নি, ওই জাতীয় পতাকাটারও তার মানে কোনও অর্থ নেই, জাতীয় সঙ্গীতেরও না, সংসদ ইত্যাদি ফালতু, টাকার ওপরে গান্ধিজীর ছবি সেই ব্রিটিশ শাসনেরই অংশ। ২০১৪ তে আসল স্বাধীনতা নাকি এল। অবশ্যই মোদিজীর নেতৃত্বে।

এসব তিনি বললেন, এবার আমরা এ নিয়ে আলোচনা করব, আলোচনার সূত্রপাত তো হয়েই গেল, এবার জনমত তৈরি হবে, ইচ্ছে হল এক অনাগত ভবিষ্যতে সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি তুলে ফেলে দিয়ে সেখানে আমাদের দেড়শ বছরের যাবতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের বিশ্বাসঘাতক, সাভারকর, গোলওয়ালকর, হেডগেওয়ারদের ছবি টাঙানো হবে, সে তালিকায় জগৎ শেঠ, রায়দূর্লভ, মীরজাফরদের ছবিও থাকতে পারে, একই গোত্রের কী না। এই আদতে শয়তান মহিলাকে দেশদ্রোহী বলা হবে না, কারণ দেশদ্রোহী তো দেশের কবি সাংবাদিক, সমাজকর্মী, অধ্যাপক, আইনজিবীরা, যারা জেলে পচে মরছে, এই মহিলাকে পদ্মশ্রী দেওয়া হয়েছে, এরপর পদ্মবিভূষণ দেওয়া হতেই পারে, উনি হতেই পারেন পরবর্তী হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্টার, কারণ এক শয়তানের পাঠশালার মধ্যে ঢুকে পড়েছি আমরা। মজার কথা হল, বুক ফুলিয়ে শয়তানি করার ধকও এদের নেই, ঠিক যেদিন এই কথা বললেন কঙ্গণা রানাওয়ত, সেদিনেই সরকার ঘোষনা করল দেশের ৭৫ তম স্বাধীনতা বার্ষিকি উপলক্ষে ১, ২, ৫, ১০ আর ২০ টাকার নতুন কয়েন চালু করা হল, স্বাধীনতার অমৃত বার্ষিকি উদযাপন করছেন আমাদের ৫৬ ইঞ্চির প্রধান সেবক, যে স্বাধীনতা এসেছে ৭৫ বছর আগে, ওদিকে তাঁর ভক্ত বলছে স্বাধীনতা এসেছে মাত্র ৭ বছর আগে। মোদিজী আপস মে মামলা সলট লিজিয়ে, আর দম যদি থাকে তাহলে মনের কথা খুলে বলুন, মানুষ সত্যিটা বুঝিয়ে দেবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran-Israel | শুরু ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধ, তৃতীয় বিশ্বযু/দ্ধ আসন্ন?
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | একমাত্র জীবিত যাত্রীর সঙ্গে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী, কী জানালেন তিনি?
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘ/টনা, দুর্ঘ/টনাস্থলে নরেন্দ্র মোদি, কী জানালেন? দেখুন Live
00:00
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | মৃ/ত্যুকে হারিয়ে বাঁচলেন ১ যাত্রী কী বললেন? শুনুন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা
00:00
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | আহমেদাবাদ বিমান দু/র্ঘটনা, জীবিত অবস্থায় উদ্ধার ১ যাত্রী, কেমন আছেন?
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | একমাত্র জীবিত যাত্রীর সঙ্গে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী, কী জানালেন তিনি?
10:55
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | বাঁচলেন ১ জন, কে এই ভাগ‍্যবান?
01:29:16
Video thumbnail
Vijay Rupani | Air India | শেষ বারের মতো! বিজয় রূপানির এয়ারপোর্টে ঢোকার ভিডিও
45:11
Video thumbnail
Ahmedabad | আহমেদাবাদ বিমান দু/র্ঘটনায় নাশকতার তথ্য? ১ বছর আগে পান্নুর হু/মকি ভিডিও ভাইরাল
01:20:11
Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar) | কলকাতা টিভির খবরের জের, অন্ডালে জলের ট্যাঙ্ক ভা/ঙ্গা শুরু করল ECL
02:13