Thursday, June 12, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: রাজা, একটি বালিকা চাইল

চতুর্থ স্তম্ভ: রাজা, একটি বালিকা চাইল

Follow Us :

এলাটিং বেলাটিং সই লো, কিসের খবর আইলো? রাজা মশায় একটি বালিকা চাইলো, কোন বালিকা চাইলো? প্রচলিত ছড়া, রাজামশাইয়ের ইচ্ছে হলেই যে কোনও বালিকাকে চাইতে পারতো। নবাব ইচ্ছে করলেই পারতো। মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিক সমাজ আর রাষ্ট্র ব্যবস্থার তো এটাই ছিল রীতিনীতি। তো মোদি সাম্রাজ্যে সেই মধ্যযুগীয় ব্যবস্থা ফিরে এসেছে। এখন এলাটিং বেলাটিং সই লো, কার ঘরে ইডি আইলো? কাকে সিবিআই ডাকিলো, ইনকাম ট্যাক্স কার ঘাড়ে চাপিল? এই চলছে। মোদি সাম্রাজ্যের ভরসা এখন সবকা সাথ, সবকা বিকাশ নয়, বিকাশ তো গঙ্গাঘাটে ভিক্ষে করছে। তাদের ভরসা এখন ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স, পুলিশ, থানা, জেল হাজত, সাধারণ মানুষ বিরোধীতা করলে ওয়াটার ক্যানন, লাঠিচার্জ, বুদ্ধিজীবীরা সরব হলে ইউএপিএ, আর্বান নকশাল। পয়সা আছে, ফূর্তি করো, ব্যাঙ্কের টাকা মেরে বিদেশে চলে যাও, আরামসে থাকো। রোজ কালাধন ফিরিয়ে আনার বাওয়াল দেবো, কিন্তু কিচ্ছু করবো না। হাত মেলালে রেল, এয়ারপোর্ট, জাহাজ বন্দর থেকে তাজমহল, লাল কেল্লা, কী চাই? হাত মেলালে পরিবেশ দূষণের দায়ে প্রজেক্ট আটকে যাবে না। সময় মত দক্ষিণা পেলে তোলাবাজ পুলিশ যেমন ওভারলোডেড ট্রাক ছেড়ে দেয়, সেরকম ছেড়ে দেওয়া হবে। চাই কি লোনে হেয়ার কাট দেওয়া হবে, মানে ধার করেছেন? সুদ তো দিতে তো হবেই না, চাই কি আসলেও থাকবে বিরাট ছাড়। রামদেব বাবাকেই দেখুন না, রুচি সোয়া কোম্পানি কিনলেন, মাছের তেলে মাছ ভেজে, পাবলিকের পয়সায় ঢেঁকুর তুলছেন। ইডি গেছে? সিবিআই? কোটাল পুত্রের ব্যালেন্স সিটের দিকে তাকান, জয় শাহ, ফুটবলের মত চেহারা নিয়ে, ক্রিকেট কর্তা, তাঁর ৩৫০% সম্পদ বৃদ্ধি, সিবিআই গেছে? ইডি গেছে? প্রশ্নই নেই। কেন বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ৩৫ জন ঋণখেলাফির মধ্যে ৩৩ জন গুজরাটবাসী, তাঁদের মধ্যে মেহুল ভাই, নীরব ভাই তো মোদিজির খুব পরিচিত, ইডি গেছে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে? ডেকেছে দফতরে, সিবিআই ডেকেছে? আসুন, বলুন, তাঁরা আপনার পরিচয় ভাঙিয়ে এত টাকা নিয়ে পালালো, তাতে আপনার ভূমিকা কী? প্রশ্ন করেছে? সবার চোখের সামনে, হাত পেতে টাকা নিল কাঁথির খোকাবাবু, দেখেননি? ডেকেছে এনাকে সিবিআই? ইডি? ধক আছে? না নেই। দু’বেলা খেতে দিলে ডালকুত্তা কামড়ায় না, এই সহজ সরল সত্যটা সবাই জানে। তো এটাই নিও নর্মাল, বিরোধিতা করলে হয় পানসারে, গৌরি লঙ্কেশ, দাভোলকরের মত গুলি খেয়ে লাশকাটা ঘরে ঢুকে যাও। না হলে গৌতম নভলাখা, সুধা ভরদ্বাজ, উমর খালিদদের মত জেলে পচে মরো। আর না হলে ইডির নোটিস, ইনকাম ট্যাক্সের রেড, সিবিআইয়ের জেরার জন্য প্রস্তুত থাকো। জীবন অতিষ্ট করে দেবার রাষ্ট্রীয় ছক।
রোজই কারোর না কারোর ডাক পড়ছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী, মানস ভুঁইঞা, মন্ত্রী থেকে ছোট বড় নেতা, তৃণমূলের রাষ্ট্রীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর স্ত্রী, কারোর ছাড় নেই, ভোটে হারিয়েছিস? ঠিক হ্যায়, এবার দেখ কেমন লাগে! সেই তালিকায় গতকাল দু’জনের নাম ছিল, কলকাতা টিভির সম্পাদক কৌস্তুভ রায়, আপ নেতা, দলের জাতীয় সম্পাদক পঙ্কজ গুপ্তা। একজনকে কলকাতার দফতরে ডাকা হল, অন্যজনকে দিল্লিতে। ম্যারাথন জেরা করে ছেড়ে দেওয়া হল, আবার ডাকা হতেই পারে। এবার ছেড়ে দেওয়া হল, এর পরের বার ছেড়ে না দেওয়াও হতে পারে। আপ নেতা রাঘব চাড্ডা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তস্য পুরনো মামলার কাগজ তুলে এনে ঘেউ ঘেউ, পরিচিত পদ্ধতি। কৌস্তুভ রায়কে ডাকা হল কেন? এমনিতে তো বলা হয়েছে, ব্যাঙ্ক ঋণ এবং সেই সংক্রান্ত মামলার জেরে ডাকা হয়েছে, মামলা কবে হয়েছিল? মোদিজির সরকার, ২০১৪ তে ক্ষমতায় এসেছেন, মামলা তার পরেই হয়েছে। মোদিজির সরকার বা ব্যাঙ্কের কাছে এমন কোনও তথ্য নেই যে উনি ব্যাঙ্ক জালিয়াতি করেছেন। করলে ওনাকে এতদিনে নিশ্চিত জেলে থাকতে হত, অভিযোগ উঠেছিল, গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রমাণ হয়নি, এক মাসের মধ্যে জামিন পেয়ে বাইরেই আছেন। আর দু নম্বর বিষয় হল, সেই ঋণের একটা বিরাট বড় অংশই তিনি শোধ করে দিয়েছেন বলে তাঁর দাবি। সে সব যে ব্যাঙ্ক কর্তারা পেয়েছেন, তার সার্টিফিকেট আমাদের কাছে উনি পাঠিয়েছেন, ইন্ডিয়া ফ্যাক্টরিং অ্যান্ড ফিনান্স সলিউসন্স প্রাইভেট লিমিটেড, তারা জানাচ্ছে তাদের কাছে ওনার কোনো বকেয়া নেই। বিবি ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের আরেকটা চিঠি, তাদের টাকাও শোধ হয়ে গেছে। আইএফসিআই ফ্যাক্টর লিমিটেড জানাচ্ছে তাদের ১৮ কোটি টাকার ঋণ শোধ হয়েছে। এই চিঠিতে আরপি’র নামে যে ঋণ ছিল, তা এককালীন পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানানো হচ্ছে। যে ব্যাঙ্কের কনসোর্টিয়ামের কাছ থেকে ধার নিয়েছেন, ওই ব্যাঙ্কের অনেকগুলোই এখন মার্জ করেছে এসবিআইয়ের সঙ্গে, এসবিআইয়ের চিঠি বা ইউকো ব্যাঙ্কের চিঠি বলছে ধার শোধ হয়েছে। ৫১৫ কোটি টাকার অনেকটাই শোধ হয়ে গেছে, বাকিটাও হবে বা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এমনকি, মোদিজি যখন দেশের অর্থনীতিকে চুলোর দোরে পাঠিয়ে দিয়েছেন, তার মধ্যেও তাঁর দাবি, তিনি ২০৬ কোটি ৬৩ লক্ষ ২২ হাজার টাকার মত ঋণ শোধ করেছেন।
মামলা হয়েছিল ২০১৫ তে, উনি গ্রেফতার হয়েছিলেন ২০১৮ তে। চুক্তি মতো টাকা ফেরত দেবার কাজও চলছে, তাহলে ডাক পড়ল কেন? কারণ আমাদের ভূমিকা, কলকাতা টিভির ভূমিকা, আমাদের এই চতুর্থ স্তম্ভের ভূমিকা। আমরা নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের পরে, এখনও রোজ মাথা সোজা করে, শিরদাঁড়া না বেচে, চোখে চোখ রেখে রোজ এই এলাটিং বেলাটিং হবুচন্দ্র রাজা আর গবুচন্দ্র মন্ত্রীদের বিরোধিতা করছি। আমরা প্রতিদিন এই রাজত্বের দূর্নীতি, দেশকে বেচে দেবার চেষ্টা, ধর্মীয় মেরুকরণ, আর তীব্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছি। কারোর সমর্থনে নয়, এই আরএসএস – বিজেপির বিরোধিতায় লড়ে যাচ্ছি। স্বদেশের জন্য লড়ে যাচ্ছি। দেশের জল জমিন, আসমান বেচে দেবার যে পরিকল্পনা, তা রোখার জন্য লড়ে যাচ্ছি। কাঁথির খোকাবাবুদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর যে পরিকল্পনা আছে বলে আমরা মনে করি, তার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছি। কৃষকদের জমি কেড়ে নেবার যে পরিকল্পনা মোদি – শাহের সরকার করছেন, তার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছি। কাশ্মীরের মানুষজনকে দেশের থেকে আলাদা করে রাখার চেষ্টার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছি। কোন মানুষ কী খাবে, কী পরবে তা নিয়ে ফতোয়া দেবার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছি। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছি, লড়ব। এটা আমাদের সম্পাদকীয় নীতি। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করবো, করছি। তাই নোটিস আসছে। আজ নোটিস আসছে, কাল চ্যানেল বন্ধ করার হুমকি আসবে, পরশু সিবিআই আসবে আমরা জানি, মোদি – শাহের এই নির্লজ্জ হুমকি দেবার পদ্ধতি আমরা বুঝে গেছি। কিন্তু ওনারা বোঝেননি যে সবাই নীরব মোদি বা কাঁথির খোকাবাবু নয়, ক পয়সার জন্য দল বদলানো সাতে পাঁচে দাদাও আমরা নই। আমরা চতুর্থ স্তম্ভের মর্যাদা বুঝি, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা বুঝি। আর বুঝি বলেই এই অপদার্থ সরকারের নীতি, এই আরএসএস – বিজেপির দর্শনের বিরুদ্ধে আমরা সরব আছি থাকব। দেখতে চাই ইডি, ইনকাম ট্যাক্স আর সিবিআইয়ের কাছে কত শক্তি আছে, দেখতে চাই, শেষ পর্যন্ত দেশটা কারা চালাবে? ইডি আর সিবিআই দিয়ে ভয় দেখিয়ে, কতদিন জন বিক্ষোভ সামলানো যাবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনারা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংস করতে চান, আমরা তা হতে দেব না।
এবার আসি অন্য খবরে, আজ বিশ্ব গণ্ডার দিবস, তো এই দিবসের আগেই খবর পাওয়া গেলো, আমাদের দেশে গণ্ডারের সংখ্যা বেড়েছে। গণ্ডার সুমারি করেই এ তথ্য আধিকারিকরা জানাচ্ছেন। ওই গণ্ডার সুমারি না করলেও, অনায়াসেই বলা যায়, সত্যিই আমাদের দেশে গণ্ডার বাড়ছে। সেই গণ্ডার যাদের আজ সুড়সুড়ি দিলে ছ মাস পরে হাসে। সেই গণ্ডার যাদের অনুভূতি শক্তি খুব ক্ষীণ। গণ্ডারের চামড়া যাদের তাদের কানে সব কথা ঢোকে না। এই বাংলার মানুষ, সজোরে থাপ্পড় মেরেছে খোকাবাবুর গালে, সজোরে সশব্দে জানিয়ে দিয়েছে, এই বাংলায় দুর্বৃত্তদের ঠাঁই নেই, তবুও তাঁরা ছলে বলে কৌশলে এই বাংলার দখল চায়। সম্ভবত গণ্ডারের চামড়া বলেই, তাঁদের কানে বাংলার মানুষের আওয়াজ পৌঁছয়নি, তাঁদের থাপ্পড় গালে লেগেছে, অনুভূতিতে নয়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
TMC | Election | ২৬-এর আগে ফের বিরাট জয় তৃণমূলের, বিরোধীরা কোথায়?
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | Nabanna | রথযাত্রা নিয়ে আজ নবান্নে বৈঠক করবেন মমতা, কী কী বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা?
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ, প্রকাশ হতে পারে ভাষণের সংকলন
00:00
Video thumbnail
Weather Update | সক্রিয় হচ্ছে মৌসুমী বায়ু, ফের ভাসবে কোন কোন জেলা? দেখুন বিগ আপডেট
00:00
Video thumbnail
Bhangar | TMC | ভাঙড়ে নওশাদ-শওকত চ্যালেঞ্জ পাল্টা চ্যালেঞ্জ, কাশেমের যোগদানে TMC-র স্ট্র্যাটেজি কী?
00:00
Video thumbnail
Volodymyr Zelenskyy | হার আসন্ন, যে কোনও মুহূর্তে দেশ ছাড়বেন জেলনস্কি, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
NATO | তৃতীয় বিশ্বযু/দ্ধ শুরু হবে কী নিয়ে? জেনে নিন স্পেশাল রিপোর্টে
00:00
Video thumbnail
Weather Update | কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধেয়ে আসছে প্রবল ঝড়, লন্ডভন্ড হবে কোন কোন জেলা?
00:00
Video thumbnail
TMC | Election | ২৬-এর আগে ফের বিরাট জয় তৃণমূলের, বিরোধীরা কোথায়?
02:56
Video thumbnail
Ariyan Khan | আরিয়ান খান গ্রে/ফতা/র হতেই নাম বলে দিল বড় নেতার
02:23:07